প্রকাশিত: 04/02/2021
‘মোর এলাকার মেম্বার বহু প্রতিশ্রুতি দিয়াও এটা হুইল চেয়ার দেয়’নি মোক। হারা গরীব দ্যাখি হামার পাকে কারো চোখ পড়ে না। মোক এটা হুইল চেয়ার দেন। মুই ৬ বছর ধরি বাড়ি পড়ি আছি। বাহিরোত যাবার পারো না। মোর আর ভাল লাগে না বাড়িত। মুই বাহিরের দৃশ্য দেখতে চাও।’
কথায় কথায় অশ্রু চোখে এমনি কথা বলেন, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরএলাকার পশ্চিম গৌরীপাড়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা মমতাজুল ইসলাম (৬৫)। তার স্বপ্ন একটা হুইল চেয়াররের। সেই হুইল চেয়ারে বসে বাহিরের দৃশ্য দেখতে চান তিনি। তার স্বপ্নটুকু আহামরি বড় না। তবুও যেনো তার স্বপ্ন স্বপ্ন রূপেই থেকে যায়। একটা হুইল চেয়ার পেলে তার জীবনের শেষ স্বপ্নটা পূরণ হবে। সহজেই যেতে পারবেন বাহির বাহিরে। দেখতে পাবেন বাহিরের উন্নয়নের দৃশ্য। যা গত ৬ বছরে তার চোখে পড়েনি। একেক জনের বাঁচতে চাওয়া একেক ধরনের হয়ে থাকে। সকলে চান বিলাশবহুল জীবনযাপন কিন্তু মমতাজুল ইসলাম চাওয়া শুধুই একটি হুইল চেয়ার!
জানা যায়, মমতাজুল ইসলাম শারীরিক প্রতিবন্ধী। মমতাজুল ইসলামের স্ত্রীসহ রয়েছে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। মমতাজুল ইসলাম ইন্টার পাশ করে বাস কাউন্টারে চাকরি করতেন। চাকরিরত অবস্থায় ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। পরে কেয়া পরিবহণে চাকরিরত অবস্থায় বিভিন্ন শারীরিক রোগে ভুগতে থাকেন এবং পাঁচ দফায় হার্টএ্যাটার্ক হয়। গত ৬ বছর পূর্বে প্যারালাইসিসে তার দুই পাসহ শরীরের বেশির ভাগই অবশ হয়ে যায়। সেই থেকে একটি ঘরের মেঝেতেই তার জীবনযাপন। পরিবারের অভাব অনটনের কারণে বাবার জন্য একটি হুইল চেয়ার যোগাতে পারেন’নি তার ছেলেরা।
সকাল হলেই অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে জীবন যুদ্ধ শুরু হয় তছলিমা খাতুনের। স্বামী নরচর করতে না পারায় স্বামীর মলমূত্র সবটাই পরিষ্কার করতে হয় তাকে।
তছলিমা খাতুন বলেন, জনপ্রতিনিধিরা বহুপ্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে যে একটা হুইল চেয়ার ব্যবস্থা করে দিবে। কিন্তু আজো কেউ কথা রাখেনি। আমার স্বামীর স্বপ্নটা তো খুব একটা বড় না। আমরা গরীব মানুষ কিনতে পারছি না। কিন্তু সরকারিভাবে যেগুলো দেওয়া হয় সেগুলোও তো পাইনা। কার ওপর ভরসা করব আমরা?
প্রতিবেশি সোহেলা রানা বলেন, জীবনের অনেক চাওয়া পুরণ হয়নি তার। আরও অনেক আশা হয়তো পূরণ হবে না। কিন্তু তার এই ছোট্ট চাওয়াটা পূরণ যোগ্য। বৃত্তবানরা এগিয়ে আসলেই তার স্বপ্নটি পূরণ হবে। তিনি একটি হুইল চেয়ার নিয়ে ঘুরতে চান। তিনি বাহিরে ঘুরলে তার ওষুধের খরচ চালাতে পারতেন।