চড়া সুদে টাকা গ্রহণ প্রাণের বিনিময়ে পরিশোধ ‘হত্যা না আত্মহত্যা’ সন্দেহ এলাকাবাসীর!

চড়া সুদে টাকা গ্রহণ প্রাণের বিনিময়ে পরিশোধ ‘হত্যা না আত্মহত্যা’ সন্দেহ এলাকাবাসীর!

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে নেওয়া সুদের টাকা দিতে না পারায় দুই সন্তানের জনক রফিকুল ইসলাম (৩২) নামের এক ব্যক্তির গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। তবে এটি ‘হত্যা না আত্মহত্যা’, এ নিয়ে সন্দেহ সংশয় দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর মাঝে।
    ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সোমবার উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের মধ্যসুলতান গুচ্ছগ্রাম সংলগ্ন বাজিতপুর গ্রামে। রফিকুল ইসলাম ওই গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের ছেলে এবং নছিমন চালক। 
    এলাকাবাসী জানান, এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র চড়াসুদে দাদন ব্যবসা বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছে। এদেরই কয়েকজনের কাছ থেকে রফিকুল ইসলাম চড়াসুদে কিছু টাকা ঋণ করেন। কিন্তু সুদের টাকা নিয়মিত পরিশোধ করতে না পারায় দাদন ব্যবায়ীরা তাকে নানাভাবে ভয়ভীতিসহ বাড়ীঘর ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিতে শুরু করেন। বাধ্য হয়ে রফিকুল ইসলাম দাদনের টাকা পরিশোধ করার তাগিদে দুইটি এনজিওতেও সদস্য করেন তার স্ত্রীকে। গত বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে রফিকুল ইসলাম তার স্ত্রীসহ নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ মাদারপুর শ্বশুরবাড়িতে যান। গতকাল স্ত্রীকে নিয়ে এসে এনজিওগুলো থেকে ঋণের টাকা তুলে দাদন ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তার স্ত্রী এনজিও ঋণ নিতে রাজী না হওয়ায় ফলে রফিকুল ইসলাম তার স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়ীতে রেখে গত রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে একাই বাড়ী ফিরে আসেন। এরপর গতকাল সোমবার সকালে তার ঘর থেকে তার গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তার লাশ ঝুলতে দেখে তার বোন আমিনা বেগম। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
    এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, এলাকার সংঘবদ্ধ সুদখোর দাদন ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালীসহ সন্ত্রাসী প্রকৃতির হওয়ায় তাদের ভয়ে এলাকার কেউই তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রতিবাদ কিংবা মুখ খুলতে ভয় পায়। ইতোপূর্বে দু-একজন প্রতিবাদ করায় তাদেরকে মারপিটসহ বিভিন্নভাবে হয়রানী করা হয়েছে। এইসব সুদখোরদের কাছে চড়াসুদে দাদন নিয়ে দাদনের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ইতোমধ্যেই গুচ্ছগ্রাম এলাকার দুলাল, আনিছুর, আরিফ, কুরিয়াসহ বেশ কয়েকজন বাড়ীঘর ছেড়ে এলাকা ছাড়া হয়ে গেছেন। 
    রফিকুল ইসলামের বোন আমিনা বেগম জানান, গতকাল সোমবার ভোরে তিনি রফিকুলের বাড়ীতে গিয়ে রফিকুলের শোয়ার ঘরের দরজা সামান্য খোলা দেখতে পান। পরে দরজা খোলার সাথেই তার ভাই রফিকুল ইসলামকে ঘরের বর্গার সাথে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় দেখতে পেয়ে চিৎকার দিলে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে আসেন। তার ভাই রফিকুল ইসলাম এলাকার কয়েকজন সুদখোরদের কাছে টাকা ঋণ নিয়েছিল। টাকা দিতে না পারায় তারা তাকে নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছিল। টাকা পরিশোধ করতে না পারার কারণেই হয়তো বা সে আত্মহত্যা করেছে। 
    থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম বলেন, রফিকুলের শয়নকক্ষ থেকে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 
    এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফখরুল ইসলামের অফিসিয়াল মুঠোফোনে (০১৩২০ ১৩৬৫৯৯) যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমি একটি মিটিংয়ে আছি। উপ পরিদর্শক (এসআই) আরিফ দায়িত্বে আছেন তার সাথে যোগযোগ করেন। উপ পরিদর্শক (এসআই) আরিফের মুঠোফোনে (০১৭২৩ ১৬৬২৭২) যোগাযোগ করা হলে তিনিও মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
 

আরও পড়ুন

×