প্রকাশিত: 25/02/2021
পরিবারের ৪ ভাইবোনই মানসিক প্রতিবন্ধী
দুর্বিষহ জীবনযাপন, চোখ পড়েনি জনপ্রতিনিধিদের
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরএলাকায় একই পরিবারে চার ভাই-বোনই মানসিক প্রতিবন্ধী। শহরের মধ্যেই দুর্বিষহ জীবনযাপন তাদের অথচ জনপ্রতিনিধিদের চোখেই পড়েনা তারা। এ যেনো প্রদীপের নিচেই আঁধার ঘটনা। তাদের মধ্যে একজন ভাতা পেলেও তিন ভাইবোনসহ বৃদ্ধা মা ভাতা পান না।
পরিবারটিতে রয়েছে, হালিমা বেওয়া (৬০), মনোয়ারা (২৮), ইব্রাহিম (২৬), ইসমাইল (২৩), নূরে আয়শা (২০) এবং কুলসুম (১৫)। তাদের মধ্যে ইব্রাহিম, ইসমাইল, নূরে আয়শা এবং কুলসুম মানসিক প্রতিবন্ধী এবং মনোয়ারা স্বামী পরিত্যক্তা। এছাড়াও তাদের আয়শা নামের আরো একটি মানসিক প্রতিবন্ধী বোন ছিলেন। গত পাঁচ বছর আগে চিকিৎসার অভাবে তার মৃত্যু হয়।
তাদের বাড়ি পৌরএলাকার পূর্ব কাটাবাড়ি গ্রামে। দেড় শতক জমির ওপর একটি ঘরে তাদের জীবনযাপন।
পরিবারটির কর্তাব্যক্তি ছিলেন দোকান কর্মচারী মঈন উদ্দিন। তিনি গত তিনবছর পূর্বে মারা যান। তারপর থেকেই চার প্রতিবন্ধী সন্তানদের ভার পড়ে হালিমা বেওয়ার ওপর। মানুষের বাসা-বাড়ীতে কাজসহ ভিক্ষাবৃত্তি করেই ছেলে-মেয়ের চিকিৎসাসহ অর্ধাহারে কোনমতে দিন কাটছে তার।
ওই বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, একটি কক্ষে শুয়ে আছেন চার ভাইবোন। কেউ ঘুমিয়ে আছেন আবার বসে নিজের সাথেই নিজে কথা বলছেন। কক্ষের সামনেই চুলায় শাক ভাপাচ্ছেন তাদের মা। আর অপর পাশে দুই শিশুকে নিয়ে খেলছেন স্বামী পরিত্যক্ত বোন মনোয়ারা বেগম।
অশ্রু চোখে হালিমা বেওয়া বলেন, আমার ছেলে মেয়ে তো অনেক মেধাবী ছিল। আল্লাহ কেনো আমার সাথে অবিচার করলেন? কেনো আমার ছেলে-মেয়েকে মানসিক প্রতিবন্ধী করে দিলেন? আমি তো শারীরিকভাবে অক্ষম স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই অর্ধাহারে দিন কাটছে আমার। মানুষ দিলে খাবার জোটে না হলে অনাহারেই কেটে যায় দিন। সরকারিভাবে এতো সহায়তা দেওয়া হলেও আমাদের ভাগ্যে কিছু জোটে না। জনপ্রতিনিধিদের চোখ পড়েনা আমাদের দিকে। একজনের ভাতার টাকায় চিকিৎসার টাকাই হয় না। এছাড়াও ১০ টাকা কেজি চালের তালিকাতেও আমাদের নাম নাই।
জানা যায়, চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়া আয়শার প্রথম মানসিক সমস্যা দেখা যায়। চিকিৎসার অভাবে তার মৃত্যু হয়। এরপর গত তিনবছর পূর্বে পরিবারটির কর্তাব্যক্তি মঈন উদ্দিনের মৃত্যুর পর থেকে প্রথমে ইব্রাহিমের মানসিক সমস্য দেখা যায়, তারপর নূরে আয়শার। এভাবেই ধিরে ধিরে চার-ভাইবোনেরই মানসিক সমস্যা দেখা যায়। সেই দুশ্চিন্তায় এবং তাদের উদভট আচরণে স্বামী পরিত্যক্তা বোন মনোয়ারা বেগম ও তাদের মা হালিমা বেগমের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তারাও প্রায় প্রায় জ্ঞান বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেন।
প্রতিবেশি মুশফিকুর রহমান রিয়াদ ও জাফরিন ফেরদৌস কেয়া বলেন, ওই পরিবারটির প্রায় সকলে মানসিক প্রতিবন্ধী। তারা সকলে খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। পরিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তাদের ঠিক মতো মুখে খাবার রোচে না। একটি পরিত্যক্ত কক্ষে সকলে একসাথে থাকায় তাদের সকলের মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাদের মধ্যে নূরে আয়শা সুস্থ্য থাকায় আমাদের বাসা থেকে পড়ালেখা করে ২০১৮ সালে এসএসসি পাশ করে। তারপর থেকে সেও মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকে এবং তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যা। তাকে পুনরায় পড়ালেখার জন্য বলা হলে সে আর পড়ালেখা করতে চায় না।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর সৈয়দ সামিউল ইসলাম সোহেল বলেন, ওই পরিবারটি বিষয়ে কিছু সুধীজন সুপারিশ করেছেন। আমি নবনির্বাচিত কাউন্সিলর। আমি তাদের সার্বিক সদস্যার সমাধান করব। তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করব।