কক্সবাজারে বনকর্মীদের কাঠবিলাস ও আটক গাড়ী নিয়ে বাণিজ্য 

প্রকাশিত: 03/03/2021

কক্সবাজার প্রতিনিধি,

কক্সবাজারে বনকর্মীদের কাঠবিলাস ও আটক গাড়ী নিয়ে বাণিজ্য 

অবৈধ চোরাই কাঠ আটক করে তা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য রেখে দেওয়া ও জরিমানার নামে আটক গাড়ীর মালিক থেকে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বিশেষভাবে টহল দলের ওসি আতা ইলাহী ডিপ্লোমা ফরেস্টারের বিরুদ্ধে। 

পাচারের সময় যে পরিমাণ চোরাই কাঠ জব্দ করা হয়েছিল তার সিংহ ভাগ আত্মসাত করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়; গাড়ীর বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দিয়ে জরিমানার নামে ৪০ হাজার টাকা আদায়েরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বনকর্মীদের বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য আর জব্দকৃত কাঠ রাঁতের আধাঁরে সরিয়ে ফেলা ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের ফার্নিচার তৈরীর ঘটনা কক্সবাজার বন অধিদপ্তরে নতুন ঘটনা নয়। কক্সবাজারে ঘুরে ফিরে এক যুগ ধরে একাধিক রেঞ্জে দায়িত্ব ভাগিয়ে নেওয়া যে ছয় জন ডিপ্লোমা ফরেস্টার আছে, তাদের মধ্যে আতা ইলাহী একজন।

অপরাধীর সাথে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে বন আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে গুরুতর অপরাধকেও নিষ্পত্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে লিপিবদ্ধ করে পিওআর মামলার পরিবর্তে সিওআর মামলা রুজু করে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বনাঞ্চলগুলোতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অন্যতম প্রধান ধরন হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হতে অবৈধভাবে কাঠ সংগ্রহ ও 

পাচার। এর ফলে বনাঞ্চল একদিকে যেমন বন উজাড় হচ্ছে, তেমনি সরকার বঞ্চিত হচ্ছে প্রাপ্য রাজস্ব আয় থেকে।

কক্সবাজারের বনাঞ্চলগুলো কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বিরান ভুমিতে পরিণত করেছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। 

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক পথে তিনটি বনজদ্রব্য পরীক্ষণ ফাঁড়ি (চেকপোস্ট) পেরিয়ে পাচার হচ্ছে চোরাই কাঠ।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, পদুয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, ঈদগাও, ঈদগড়, ফুলছড়ি, বাকখালীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চোরাই কাঠ ভর্তি ট্রাক, মিনি ট্রাক, পিকআপ যাচ্ছে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, কক্সবাজারের ঈদগাও, রামু, খরুলিয়া ও কক্সবাজার শহরের ফার্নিচার দোকান ও নির্মাণাধীন বিভিন্ন ভবনে।

চোরাই কাঠ বোঝাই গাড়ী পদুয়া, নলবিলা ও লিংক রোড বন চেকপোস্ট পার হয় বিনা বাধায়।

মাঝে মধ্যে কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বনবিভাগের বনকর্মীরা অভিযান চালিয়ে চোরাই কাঠ ভর্তি ট্রাক, পিকআপ আটক করলেও সিংহভাগ কাঠ আত্মসাত ও মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে পরে আটক গাড়ী ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারী রাতে চট্টগ্রামের আমিরাবাদ এলাকা থেকে কক্সবাজারের খরুলিয়া ফার্নিচার দোকানে আনার পথে কক্সবাজার শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বিশেষ টহল দলের ওসি আতা ইলাহী ফরেস্টারের নেতৃত্বে বনকর্মীরা গোপন তথ্যের ভিত্তিতে খরুলিয়ায় অভিযান চালায় । এসময় ৬০ সিএফটি ফুট আকাশ মনি গোল কাঠ ভর্তি মিনি পিকআপ আটক করা হয়।

আটক কাঠসহ পিকআপটি বন অধিদপ্তর হেফাজতে আনা হয়। অভিযোগ রয়েছে, আটক গাছগুলো গাড়ী থেকে আনলোড করার সময় রেঞ্জ কর্মকর্তা রাতের আধাঁরে ২০ সিএফটি কাঠ ব্যক্তিগত ফার্নিচার বানানোর জন্য সরিয়ে ফেলেন। ঘটনাটি অনেকেই দেখেছেন এবং বন অফিসে সিসি ফুটেজে সংরক্ষিত আছে বলে দাবী প্রত্যক্ষদর্শীদের। অবশ্য পরদিন সকালে জব্দ দেখানো হয় ৪০ সিএফটি ফুট গোলকাঠ।

শুধু আটক কাঠই আত্মসাত করে ক্ষান্ত হননি ওই রেঞ্জ কর্মকর্তা আতা ইলাহী, অপরাধীর সাথে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে বন আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে গুরুতর অপরাধকেও নিষ্পত্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে লিপিবদ্ধ করে অর্থাৎ পিওআর মামলার পরিবর্তে সিওআর মামলা করেই জরিমানার নামে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে গাড়ী ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট কাঠগুলোর সর্বশেষ পরিণতি কি, তাও রহস্যে ঘেরা। ২ মার্চ আটক ওই গাড়ীটি ছেড়ে দেয়ার পর বেরিয়ে এসেছে ওই রেঞ্জ কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সুত্র জানিয়েছেন, ডিপ্লোমা ফরেস্টার আতা ইলাহী একসাথে দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্বে থাকার সুযোগে আটক চোরাই কাঠ নিয়ে নয় ছয় ও আটক গাড়ী নিয়ে মোটা অংকের লেনদেন করে আসছে। আটক চোরাই কাঠ গোপনে শহরের বিভিন্ন ফার্নিচার দোকানে বিক্রি ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের ফার্নিচার তৈরিও করেছে অহরহ।

এব্যাপারে কক্সবাজার শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বনবিশেষ টহল দলের ওসি আতা ইলাহী এবং কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা তহিদুল ইসলামের বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার রিং করার পরেও মোবাইল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন

×