রাষ্ট্র খোঁজ রাখেনি দুই পা হারানো শাহানুরের বহন করেনি কোন ব্যায়ভার

প্রকাশিত: 23/03/2021

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

রাষ্ট্র খোঁজ রাখেনি দুই পা হারানো শাহানুরের বহন করেনি কোন ব্যায়ভার

কলেজ পড়য়া দুই মেয়েকে বখাটে কর্তৃক উত্যক্তর প্রতিবাদ করে দুই পা হারানো কালীগঞ্জের নলভাঙ্গা গ্রামের শাহানুর রাষ্ট্র থেকে কোন চিকিৎসা সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। এ পর্যন্ত তার চিকিৎসা ব্যায় হয়েছে ৭ লাখ টাকা। সহায় সম্বল বিক্রি করে চিকিৎসা নিয়েছেন। পচে যাওয়া তার দুই পা কেটে ফেলে এখন পঙ্গুত্ব জীবন কাটাচ্ছেন। অথচ শাহানুরের সকল চিকিৎসার ব্যায়ভার বহন করার কথা ছিল রাষ্ট্রের। এ নিয়ে হাইকোর্টের দুই বিচারপতি স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছিলেন। ঘটনার সাড়ে চার বছরেও তিনি রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে কোন সড়া পাননি। পঙ্গু শাহানুর জানান, ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর তার উপর হামলা করে বখাটেরা। হামলায় তার দুই পা ভেঙ্গে যায়। বড় মেয়ে শারমিন ও ছোট মেয়ে শাহনাজকে উত্যাক্ত করতো বখাটেরা। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় কালীগঞ্জের কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নলভাঙ্গা গ্রামের সন্তোষ আলীর ছেলে মোঃ কামাল হোসেন, একই গ্রামের আবু বকরের ছেলে বিল্লাল হোসেন, ইয়াকুব হোসেনের ছেলে জাহিদ, রমজান আলীর ছেলে ইমদাদুল হক, মনছের আলীর ছেলে টুকু মিয়া, ইদ্রিস আলীর ছেলে হাসান আলী ও আছির উদ্দীনের ছেলে মোতালেব হোসেন তার উপর ভয়াবহ হামলা চালিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে। মামলা দায়েরের পরও আসামীরা গ্রেফতার না হওয়া ও ভিকটিমের পরিবারকে বাড়িছাড়া করার বিষয়ে ওই বছরের ২৯ নভেম্বর একটি জাতীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর দ্বৈত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে শাহানুরের চিকিৎসার সকল ব্যায়ভার রাষ্ট্র বহন করবে বলে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আসামিদের ৭২ ঘন্টার মধ্যে কারাবন্দী করে দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কালীগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। মহামান্য আদালতের নির্দেশের পর হামলার সাথে জড়িত আসামীরা ৩০ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পন করেন। এদিকে শাহানুরকে রাষ্ট্র কর্তৃক চিকিৎসা ও যাবতীয় ব্যায়ভার বহনের বিষয়টি উল্লেখ করে ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ সমীর কান্তি সরকার তার দপ্তরের এইচ,এস/এল,এ-০৬/২০১৭/১৮২ নং স্মারকে জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুর্নবাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) পরিচালককে চিঠি দেন। চিঠিতে বিষয়টি অতীব জরুরী হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয় মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক সুয়্যে মোটো রুল ১৫/২০১৬ এর ২৯/১১/২০১৭ ইং তারিখের আদেশে ক্ষতিগ্রস্থ শাহানুরের চিকিৎসা রাষ্ট্র গ্রহন করবে মর্মে এবং তার চিকিৎসায় যেন কোন রকম ব্যাত্যয় না ঘটে এতদবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশনা জারী করেছেন। এমতাবস্থায় মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনসহ চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থা স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালককে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো। শাহানুরের চিকিৎসার বিষয়ে জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুর্নবাসন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করা হয়। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল গনি মোল্লাহ জরুরী কাজে ব্যাস্ত থাকায় তার পক্ষে ব্যাক্তিগত সহকারী জয়নুদ্দীন খান জানান, ঘটনাটি ৪ বছর আগের। তাই মাহামান্য আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে আমাদের জানা নেই। তবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি যোগাযোগ করলে আমরা তার দুই পা প্রতিস্থপনের বিষয়ে সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সহায়তা করতে পারি। তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যন্ড ও ভারত থেকে আমরা কয়েকদফা কৃত্তিম পা পেয়েছি।

আরও পড়ুন

×