ধর্মীয় শিক্ষার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান কমলনগরের চরপাগলা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসাঃ

ধর্মীয় শিক্ষার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান কমলনগরের চরপাগলা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসাঃ

লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ফজুমিয়ারহাট সংলগ্ন চরপাগলা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসাটি ধর্মীয় শিক্ষার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের চরপাগলা গ্রামে অবস্থিত এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠানটি।বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার বৃহৎ একটি ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও বটে এটি ।সাগরের অদূরে মেঘনার নিলাময় ভূমি,অবিরাম চির সুন্দর অপরূপ জনপদ,সেই সুন্দর মনোরম ও ব্যতিক্রমধর্মী পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ কিংবদন্তী সমতুল্য চরপাগলা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসাটি।এই এলাকার প্রসিদ্ধ আলেম হযরত মাওলানা মনির আহমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তার নিজস্ব জমিতে ১৯৮৫ সালে তিনি এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন।তখন এই অঞ্চল তথা বৃহত্তর রামগতির মধ্যে কলাকোপা ইসলামীয়া মাদরাসা ছাড়া আর কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠা ছিলোনা।এলাকার সাধারন মানুষের ঘাম ঝরানো টাকায় গড়ে উঠা এই প্রতিষ্ঠানটি আজ প্রায় ৩৬ বছর পার করছেন।

৪ শ ৫০ জন ছাত্র ছাত্রীকে ১২ জন শিক্ষক মায়া মমতা দিয়ে  কঠোর পরিশ্রম করে ইলমে দ্বীন শিক্ষা দিয়ে আসছেন।চরপাগলা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসাটি বেশ পরিচিত একটি নাম।হাজার হাজার আলেম,মুফতী,মুহাদ্দেস,

মুফাসসের,কারী ও হাফেজ এখান থেকে ইলমে দিনের জ্ঞান অর্জন করে দেশ বিদেশে দ্বীনি খিদমত আন্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।দেশ বিদেশের বড় বড় আল্লাহওয়ালা বুজুর্গদের পদচারনায় ধন্য এই মাদরাসা।এই প্রতিষ্ঠানে রয়েছে নুরানী বিভাগ,কিতাব বিভাগ,হেফজ বিভাগ,হাদিশ বিভাগ সহ বিশাল এতিমখানা।সুন্দর মনোরম পরিবেশে ইলমে হাদীশের জ্ঞান অর্জন করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।জামাতের সাথে পাঁছ ওয়াক্ত নামাজ আদায়,ভোর রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়,সকাল বেলা পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত সহ মুসলিম উম্মাহর জন্য নিয়মিত দোয়ার আয়োজন এই দারুল উলুমের একটি বৈশিষ্ট্য। বর্তমান পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন প্রবীন আলেম শত-শত আলেমের উস্তাদ হযরত মাওলানা মনির আহমাদ।এ মাদরাসার পরম ছোঁয়ায় ধন্য হয়েছেন হাজার-হাজার জ্ঞান তাপস ওলামায়ে কেরাম,মোহাদ্দিস,মোফাচ্ছির,অধ্যক্ষ ও মুফতি।বৃহত্তর নোয়াখালী-ফেনী,

কুমিল্লাহ,চাঁদপুর,লক্ষ্মীপুর,রায়পুর,রামগন্জ,

কমলনগর,রামগতি,হাতিয়া,মাইজদী,সোনাপুর,

সদর,সেনবাগ,চাটখিল,সোনাইমুড়ী, বসুরহাট,দাগনভুইঁয়া,বেগমগঞ্জ,পরশুরাম, ফুলগাজী সহ এদেশে  ইসলামী আন্দোলন কায়েম ও জাগরনের মূল কেন্দ্রবিন্দু এ ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা। ইসলামী চেতনার লালন-পালন ও বিকাশ সাধন এ প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে অচিন্তনীয় ও অকল্পনীয়।চরপাগলা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় দোয়া কবুলের মারকাজ হিসেবেও জনশ্রুতি রয়েছে ব্যাপক।বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যাহ (বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড) এর নিয়ন্ত্রণে শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্রদের পরীক্ষার ফলাফল মেধা তালিকায় সুনাম সুখ্যাতি অর্জন করে থাকে এ প্রতিষ্ঠান। মাদরাসার মূল ঐতিহ্যের পিছনে রয়েছে শিক্ষকমন্ডলীর কৃতিত্ব। অধিকাংশ শিক্ষকমন্ডলীই প্রতিভা দ্বীপ্ত। তাদের নিরলস প্রচেষ্টায়,আন্তরিকতায় ও সহযোগিতায় অত্র মাদরাসার সুনাম রয়েছে দেশে বিদেশে।দোয়ার মাহফিল,তাফসীর মাহফিল,ইসলামী সম্মেলনসহ সরকারী-বেসরকারী কলাণকর,জনসেবামূলক কর্মকান্ডে এ মাদরাসা যুগযুগান্তর থেকে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে আসছে।ইসলামী তাহযীব তামাদ্দুন সভ্যতা সাংস্কৃতি ও সত্যেকার মানুষ গড়ার বিকাশের ক্ষেত্রে মাদরাসার ঐতিহ্য লক্ষনীয়,অবদান অসামান্য ও অপরিসীম। এ দেশের জনগণকে দ্বীনের প্রতি আহবান,তাবলীগ দাওয়াত,তাফসীর,তাযকীয়া,জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ,তথা দীনকায়েমের প্রচার-প্রসার, রূপায়ন,বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এ মাদরাসার পরিচালক,শিক্ষক মন্ডলীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। শিক্ষা সাংস্কৃতি,ওয়াজ নছিহত, মসজিদের ইমামসহ যাবতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে অত্র মাদরাসা থেকে বেরিয়ে পড়া আলেমগণ নিরলস চেষ্টা সাধনার মাধ্যমে ভূমিকা রেখে আসছেন।ধর্মীয় ফতুয়া-ফারায়েজ,তালাক,বিবাহ, হজ্ব,যাকাত,নামাজ,সার্বিক আধুনিক যুগ জিজ্ঞাসার জবাব সমূহ এ মাদরাসার ওলামাদের দ্বারাই সমাধান হয়ে থাকে।ফতোয়া ফারায়েজের জন্য মাদরাসায় রয়েছে বিশাল ফতুয়াবোর্ড। রয়েছে বিশালায়তনের একটি গ্রন্থাগার বা কুতুবখানা।যাতে রয়েছে বিশ্বের বিরল ফতুয়া গ্রন্থ,তাফসীর গ্রন্থ,হাদিস গ্রন্থসহ অসংখ্য আধুনিক বৈজ্ঞানিক বই পুস্তকাদি,দেশ বিদেশের হক্কানী ওলাময়ে কেরামের লিখিত কিতাবাদি ও সরঞ্জামাদি।এটি এ মাদরাসারই অন্যতম ঐতিহ্য।মোট কথায় একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অত্র মাদরাসা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।সে ঐতিহ্যের ছোঁয়া লেগেছে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।কিন্ত মাদরাসার ঘর দরজা সেই মন্দার আমলের।এলাকার গরিব অসহায় মানুষের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়ে আসলেও সরকারী-বেসরকারী ভাবে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা না পাওয়ায় চরম মানবেতর জিবনযপন করতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানকে।সরকারীভাবে উপজেলা পরিষদ-জেলা পরিষদ-উপজেলা প্রশাসন-জেলা প্রশাসন ও এলাকার বিত্তশালীরা একটু এগিয়ে আসলেই ইসলামী শিক্ষার এই অনন্য প্রতিষ্ঠানটি অবকাঠামো সুবিধার আওতায় আসবে।মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু থাকলেও অবকাঠামো গত উন্নয়ন হয়নি এ প্রতিষ্ঠানে।তাই ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় এই প্রতিষ্ঠানের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে কমলনগর উপজেলা পরিষদ-উপজেলা প্রশাসন ও এলাকার বিত্তশালীদের প্রতি আহবান জানান প্রতিষ্ঠান প্রধান সহ এলাকাবাসী।এখানকার আলেমগণ সারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে প্রজ্জ্বলন করেছেন হেদায়েতের আলোক বর্তিকা।প্রস্ফুটিত হোক এ মাদরাসার সৌরভ দেশ-বিদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।হোক গৌরবাম্বিত, মহিম্বাবিত,সুষমামন্ডিত এ মাদরাসার ইতিহাস ঐতিহ্যের।

 

 

আরও পড়ুন

×