প্রকাশিত: 22/04/2021
বাঁশখালিতে পুলিশ-শ্রমিকের সংঘর্ষ ঘটনায় চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা গেলেন আরো একজন গুলিবিদ্ধ ফুলবাড়ীর রাজেউল ইসলাম আমি আর টাকা-পয়সা চাই না, না খেয়েই থাকব। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন : রাজেউলের মা
চট্রগ্রামের বাঁশখালিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটনায় পুলিশের গুলিতে হয়ে চিকিৎসাধিক অবস্থায় গত সোমবার দিবাগত রাতে মারা যাওয়া গুলিবিদ্ধ শ্রমিক দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বেতদিঘী ইউনিয়নের নথন জামদানি গ্রামের রাজেউল ইসলাম (২৫)। নিহত রাজেউল ইসলাম ওই গ্রামের দিনমজুর আব্দুল মান্নান মন্ডলের ছেলে এবং বাঁশখালির এস আলম গ্রুপের কয়লা দুবাসী পাওয়ার প্লান্টের বয়লারের ফিল্টারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
জানা যায়, গত ১৭ এপ্রিল শনিবার সকালে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করলে এস আলম গ্রুপের কয়লা-বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ তা আদায়ে অস্বীকৃতি জানালে আন্দোলন করতে থাকে সেখানে কর্মরত শ্রমিকরা। পরে পুলিশ আন্দেলন থামকে চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে পুলিশের এলাপাতাড়ি গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ৫ শ্রমিক।
এতে আহত ও গুলিবিদ্ধ হয় আরো শতাধিক শ্রমিক। সেই গুলিবিদ্ধ শ্রমিকদের মধ্যে একজন ছিলেন ফুলবাড়ীর রাজেউল ইসলাম। তাকে গুলি স্থানীয়রা উদ্ধার করে সাড়ে চারটায় পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসার ভর্তি করান। ১৮ এপ্রিল রবিবার তার অপারেশন করা হয়। পরে চিকিৎসারত অবস্থায় গত ১৯ এপ্রিল সোমবার দিবাগত রাত দেড়টায় মারা যায়।
নিহত রাজেউল ইসলামে মামা রেজাউল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন হঠাৎ ফোনকলের মাধ্যমে জানতে পারি যে, পুলিশের গুলিতে রাজেউল গুলিবিদ্ধ হয়েছে এবং তাকে পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি সাথে সাথে রাজেউলের পরিবারকে জানানো হয় এবং আমি নিজেই ওই হাসপাতালে যাই। পরে চিকিৎসাধিন অবস্থায় গত ১৯ এপ্রিল দিবাগত রাত দেড়টায় রাজেউলের মৃত্যু হয়।
নিহত রাজেউল ইসলামের চাচাতো ভাই মো. মোবারক হোসেন বলেন, অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তান ছিলেন রাজেউল ইসলাম। তার বাবা একজন কৃষক মানুষ। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিল রাজেউল। তার বড়ভাই সৌদি প্রবাসী ও বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। সে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে পরিবারের অস্বচ্ছলতার কারণে কর্মে যোগ দেয়। দীর্ঘদিন থেকে কুয়াকাটায় কর্মরত ছিল।
গত ৬ মাস পূর্বে সে বাঁশখালির দুবাসী পাওয়ার প্লান্টের বয়লারের ফিল্টারম্যান হিসেবে যোগদান করে। সবে মাত্র পরিবারের অস্বচ্ছলতা কাটিয়ে সুখের দিন আসছিল। কিন্তু পুলিশের ছোঁড়া গুলিতেই ভেস্তে গেল বাবা-মায়ের স্বপ্ন। নিভে গেল পরিবারের একটি প্রদীপ।
নিহত রাজেউলের মা ওয়াজেবুন হানার বিলাপ করে বলেন, আমি আর টাকা- পয়সা চাই না, না খেয়েই থাকব কিন্তু আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন। আমার ছেলেকে কেন এভাবে কেড়ে নিল আমার কাছ থেকে? কি অপরাধ ছিল তার? একটা মায়ের কোল খালি করতে কি একটুকুও মায়া হলো না তাদের? তারা কি কোন মায়ের সন্তান না বা তাদের কি কোন ছেলে মেয়ে নাই...?
বেতদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপাধ্যক্ষ শাহ মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, জানতে পারি বাঁশখালিতে পুলিশের গুলিতে আমার ইউনিয়নের নথন জামদানি গ্রামের রাজেউল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়। পরে আমার সাথে যোগযোগ করে তার পরিবারের লোকজন সেখানে যায়। সেখানের একটি হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় রাজেউল গত ১৯ এপ্রিল দিবাগত রাত দেড়টায় মারা যায়। পরে গত ২০ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত আটটায় তার মরদেহটি নিজগ্রামের নিয়ে এসে দিবাগত রাত দেড়টায় পরিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, গত তিন- চারদিন আগে রাজেউলের পরিবারের কাছ থেকে জানতে পারি রাজেউল গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে তাদেরকে মুভমেন্ট পাশ দেওয়া হয় সেখানে যাওয়ার জন্য। পরে জানতে পারি তার বুকে গুলি আটকে ছিল। হাসপাতাল বোর্ড অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়। গত মঙ্গলবার রাতে বেতদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফোন করে জানান যে রাজেউল মারা গেছে।