রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবসে বাড়ি পেয়ে, দুঃস্বপ্নের দিনকে ভুলে গেলেন পঙ্গুত্ববরণকারী রেবেকা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবসে বাড়ি পেয়ে, দুঃস্বপ্নের দিনকে ভুলে গেলেন পঙ্গুত্ববরণকারী রেবেকা

হৃদয়বিদারক রানা প্লাজা ভবন ধসে দুই পা হারিয়ে চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের বারাই চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের গৃহবধূ রেবেকা খাতুন।

গতকাল শনিবার ছিল বিভীষিকাময় সেই দুর্ঘটনার দিন। গত ৮ বছর আগে এই দিনটাতেই রেবেকা তার মা, দুুই দাদী ও দুই চাচাতো ভাই ও বোনসহ হারিয়েছেন তার দুইটি পা। গতবছরগুলো এইদিনটা রেবেকা জীবনে কালোমেঘে ছেঁয়ে অশ্রুজলে ভাসলেও, এইবছরটা ছিল একদমই ভিন্ন। নতুন পাকা বাড়ি পেয়ে দুঃস্বপ্নের এই দিনটিকে ভুলে, খুশির বন্যায় আত্মহারা হয়েছেন রেবেকা বেগম।

গতকাল শনিবার রানা বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক হিউম্যানিটারিয়ান প্রোগ্রামের সার্বিক সহযোগিতায় প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য নির্মিত বাসস্থান হিসেবে ৭ লাখ ২১ হাজার টাকা ব্যয়ে নতুন পাকা বাড়ি পান রেবেকা খাতুন।

সকাল ১১টায় আলাদীপুর ইউনিয়নের বারাই গ্রামে নবনির্মিত রেবেকার বাড়ি চত্বরে আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি।

ব্র্যাক হিউমেনিটরিয়ান প্রোগ্রামের ডেপুটি ম্যানেজার তারিকুল ইসলাম নাহিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন, ব্রাকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (দাবি) মো. আশরাফ হোসাইন, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (প্রগতি) সবুজ সাহা, এলাকা ব্যবস্থাপক (দাবি) মো. আব্দুর রাজ্জাক, এলাকা ব্যবস্থাপক (প্রগতি) মনোরঞ্জন রায়, কন্সট্রাকশন প্রকৌশলী মো. লোকমান হোসেন, শাখা ব্যবস্থাপক (দাবি) এটিএম মোমিনুল ইসলাম ম-ল, শাখা ব্যবস্থাপক (দাবি) শাহাজান হোসাইন, শাখা ব্যবস্থাপক (বিসিইউপি) ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ।

শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিতা কেটে বাড়ির উদ্বোধনসহ রেবেকা খাতুনের হাতে বাড়ির চাবি প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন। পঙ্গুত্ববরণকারী রেবেকা খাতুন বলেন, আমার শ্বশুরের পাঁচ ছেলে। চার শতক জমিতে পাঁচভাইয়ের সংসার ছিল। জরাজীর্ণ মাটির ঘরে থাকতে হতো। ব্র্যাকের বিভিন্ন সহায়তা ইতোপূর্বে পেয়েছিলাম।

তাই ব্র্যাকের ভাইদের কাছে একটা বাড়ির আবেদন করি। পরে তারা আমার জমির ওপর পাকা বাড়ি বানিয়ে দেন। আজকের দিনে বাড়ি পেয়ে, সেই বিভীষিকাময় দিনটাকে একেবারেই ভুলে গেছি। এখন সুখে শান্তিতে স্বামী ও দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে বসবাস করব।

ব্রাকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (দাবি) মো. আশরাফ হোসাইন বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণকারীদেরকে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রেবেকার আবেদনে তাকেও বাড়ি বানিয়ে বাড়ির চাবি হস্তান্তর করা হয়। ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ব্র্যাকের কার্যক্রম আলসেই প্রসংশনীয়।

আমি সকল সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে আহবান করছি, এমন মহতি কাজগুলোতে এগিয়ে আসতে। দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় রেবেকা খাতুন তার দুইটি পা হারিয়েছেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে একটি পা হারানোর টাকা পেয়েছেন। তার বঞ্চিত হওয়া পাওয়া ফিরিয়ে দিতে, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

আরও পড়ুন

×