রামুতে দশম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী ধর্ষিত : মামলা করে নিরাপত্তাহীন নির্যাতিত পরিবার

প্রকাশিত: 26/04/2021

কক্সবাজার প্রতিনিধি

রামুতে দশম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী ধর্ষিত : মামলা করে নিরাপত্তাহীন নির্যাতিত পরিবার

কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের নন্দাখালী এলাকায় দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক স্কুল ছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আদালতে নালিশী দরখাস্তের পর তা আমলে নেন আদালত। বাদীর এজাহারটি সরাসরি এফআইআর হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত নং ২ কক্সবাজার আদালত।

 

এদিকে, মেয়ে ধর্ষিতা হওয়ার ন্যায় বিচার চেয়ে মামলা করে বিপাকে পড়েছেন নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরা। আসামীরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি ছাড়াও ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেস্টায় লিপ্ত রয়েছে আসামীরা। গত ২৫ মার্চ বিকাল তিনটার দিকে প্রাইভেট শেষে বাড়ী ফেরার পথিমধ্যে পানিছড়া এসএইচডি মডেল হাইস্কুলের দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া ওই ছাত্রী অপহরণের শিকার হন।

 

জানা গেছে, রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের ৩ নাম্বার ওয়ার্ড মুরাপাড়া নন্দাখালী এলাকার নির্যাতিত স্কুল ছাত্রীর মা বাদী হয়ে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নাম্বার-২ কক্সবাজার আদালতে 

হাজির হয়ে যায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৭/৩ ধারায় গত ৩১ মার্চ ৪ জনের বিরুদ্ধে নালিশ দরখাস্ত দেন।

 

বিজ্ঞ বিচারক নালিশী দরখাস্তটি গ্রহণ করে সিপি নং-৭৩/২০২১। গত ১ এপ্রিল নালিশী দরখাস্তটি সরাসরি এফআইআর হিসেবে থানায় রেকর্ড করার জন্য রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)কে নির্দেশ দিয়েছেন। 

মামলায় আসামীরা হলেন, রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের ৩ নাম্বার ওয়ার্ড মুরাপাড়া নন্দাখালী এলাকায় সোলেমানের ছেলে কায়েস উদ্দিন(২১), ওসমান গনির মেয়ে উর্মি আক্তার (১৮), মৃত আমির হোসেনের ছেলে সোলেমান (৫০), মৃত আমির হোছনের ছেলে ওসমান গনি (৪৫)।

 

জানা গেছে, কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নাম্বার-২, কক্সবাজার বিচারক মোঃ মোসলেহ উদ্দিন, (জেলা ও দায়রা জজ) (ইনচার্জ), সি.পি ৭৩/ ২০২১, আদেশ নম্বর-১, তারিখ-৩১/৩/২০২১, স্বারক নং-১৭৯, তাং-১/৪/২০২১। আদেশের অনুলিপিসহ সংশ্লিষ্ট মামলার কাগজাদির ফটোকপি অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অফিসার ইনচার্জ ওসি রামু থানা বরাবর প্রেরণ করা হয়।

 

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, পানিছড়া এসএইচডি মডেল হাইস্কুলের দশম শ্রেণী নিয়মিত ছাত্রী ( সংগত কারণে নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হলো) কে স্থানীয় উর্মি আক্তার, সোলেমান ও ওসমান গণি নামের ব্যক্তিরা ইতোপূর্বে কায়েস উদ্দিন (২১) এর সাথে বিয়ে প্রস্তাব দেয়।

কায়েস উদ্দিন টমটম চালক ও বখাটে হওয়ায় প্রস্তাব নাচক করেন ছাত্রীর পরিবার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল তারা । 

 

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ মার্চ বিকাল ৩টার সময় ভিকটিম স্কুল ছাত্রী প্রাইভেট পড়া শেষে স্কুল থেকে বাড়িতে যাওয়ার পথে পথিমধ্যে ঘটনাস্থল জোয়ারিয়ানালা নন্দাখালী মুড়াপাড়াস্থ বিকে আজম এর আম বাগানের সামনে নির্মাণাধীন ট্রেনের রাস্তার ওপর গিয়ে পৌঁছলে প্রতিপক্ষ লোকজন অজ্ঞাত নাম্বারের সিএনজি গাড়ি যোগে অপ্রাপ্তবয়স্ক স্কুল ছাত্রীর সামনে আসেন। এসময় উর্মি আক্তার, সোলেমান ও ওসমান গণি সহযোগিতায় বখাটে কায়েস উদ্দিন ওই ছাত্রীকে জোরপূর্বক সিএনজি অটোরিকশায় তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। 

 

স্কুল ছাত্রীর চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন পিছু পিছু ধাওয়া করলেও অপহরণকারীদের আটক করতে পারেনি।

সুত্রে আরো জানা গেছে, অপহৃতা স্কুল ছাত্রীর মা খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে আসেন এবং সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করেও সন্ধান পাননি। উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকে ঘটনার বিষয়ে অবগত হওয়ার পরও অপহৃতাকে উদ্ধার করতে পারেনি। ফলে গত ২৬ মার্চ এব্যাপারে রামু থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেন স্কুল ছাত্রীর মা। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ এজাহারখানা সীল দিয়ে গ্রহণ করলেও নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করেনি। এমনকি অপহৃতাকে উদ্ধারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি পুলিশ। 

 

শেষে ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য অপহৃতার মা বাদী হয়ে গত ৩১ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নাম্বার-২ কক্সবাজার আদালতে হাজির হয়ে যায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৭/৩ ধারায় ৪ জনের বিরুদ্ধে নালিশী দরখাস্ত দায়ের করেন।

বিজ্ঞ আদালতের বিচারক নালিশী দরখাস্তটি আমলে নেন সি.পি মামলা নং-৭৩/২০২১। 

এছাড়াও দরখাস্তটি সরাসরি থানায় এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করার জন্য রামু থানার অফিসার ইনচার্জ ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত।

এদিকে, ঘটনার পর রামু চৌমুহনী এলাকায় একটি হোটেলে নিয়ে গিয়ে দশম শ্রেণীর ছাত্রীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে ওই বখাটে। পরবর্তীতে হোটেলের নিচে ফেলে চলে যায় ধর্ষক কায়েস। স্থানীয় রামু মন্ডলপাড়ার প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন ওই স্কুল ছাত্রীকে পেয়ে মাকে খবর দেন।

 

প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন ওই ছাত্রীকে রামু থানা পুলিশের কাছে নিয়ে যান।

পরে রামু থানা পুলিশ ভিকটিম ছাত্রীকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তারী পরীক্ষা করান। এই ঘটনাটি তদন্ত করছে রামু থানার এসআই নাজমুল। 

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাজমুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, ঘটনাটি স্পর্শকাতর। তাই ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটনের চেস্টা চলছে।

 

মামলার বাদীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রামু থানা পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার না করে উল্টো ভিকটিম ও আমাকে (বাদীকে) গালমন্দসহ বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। এছাড়াও আসামিরা ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে। এমনকি মামলা প্রত্যাহার করার জন্য আসামীরা হুমকি ছাড়াও বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার শুরু করে এধরনের ন্যাক্কারজনক একটি ঘটনা ধামাচাপা দিতে অপকৌশল অবলম্বন করছে। যা খুবই দুঃখজনক।

এব্যাপারে রামু থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি কেএম আজমীরু জ্জামানের যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, ঘটনারটির বিষয়ে তদন্ত চলছে। আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন

×