কক্সবাজারে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা মায়ের আকুতি : ছেলের নির্যাতন থেকে বাঁচতে চাই !

কক্সবাজারে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা মায়ের আকুতি : ছেলের নির্যাতন থেকে বাঁচতে চাই !

চোখে–মুখে আতঙ্কের ছাপ নিয়ে ছেলের নির্যাতনের কথা বলছিলেন অসহায় অশীতিপর বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম। নিজের মাদকাসক্ত ছেলে তাকে বারবার মারধর করে আসছে। এমনকি তার দুই যুবতী মেয়েকেও শারীরিক নির্যাতন করছে, প্রতিনিয়ত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মা’কে। বৃদ্ধা মাকে হত্যার চেষ্টাও চালিয়েছে। যেকোন সময় তাকে হত্যা করতে পারে এই আশংকায় আতংকে দিনাতিপাত করছে মা ফাতেমা। 

এই অমানবিক নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষার জন্য আকুতি জানিয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের এসএমপাড়ার মরহুম গোলাম হোসনের বিধবা স্ত্রী (৭৫) বছর বয়সী অশীতিপর বৃদ্ধা ফাতেমা।

তার ২ ছেলে ৪ মেয়ে রেখে ২০১৩ সালে ১৬ মার্চ স্বামী গোলাম হোসেন মারা যান।

বড় ছেলে শাহ আলম শহরে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন লারপাড়া স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। আরেক ছেলে আবদুল মালেক কালা বদা প্রকাশ চোরা মালেক থাকেন উপজেলা এলাকায়। মাদকাসক্ত থাকেন প্রায় সময়। 

মেয়ে মনজুরা বেগম ও ছেনোয়ারা বেগমের বিয়ে হয়েছে। আর মিনু আরা মিনু ও শাহেনা আকতারের বিয়ে হয়নি।

বৃদ্ধা তার পৈত্রিক সম্পত্তির উপর কক্সবাজার সদর উপজেলা এলাকায় নির্মিত ৬টি দোকানের ভাড়া নিয়ে সংসার চালান। আমার ছেলে একসময় ভালো ছিল। সে এখন মাদকাসক্ত। প্রথম দিকে তাকে বিনা পয়সায় অনেকে মাদক খাইয়েছে। এখন টকার জন্য আমার সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করে। ভাড়াটেদের কাছ থেকে জোর করে টাকা তুলে মাদক নেয়। সেই টাকায় মাদক কিনে সেবন করে।

আমাকে ও আমার দুই যুবতী মেয়েকে বার বার নির্যাতন করছে। আমাকে যে কোন সময় হত্যার পরিকল্পনা নিয়েছে মাদকাসক্ত ছেলে মালেক । গত ২৭ মার্চ দুপুর ২টার দিকে মা ফাতেমা বেগমকে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করে এবং হত্যার উদ্দেশ্য মারধর করে। এসময় তার মায়ের ডান হাতের হাড় ভেঙ্গে যায়। তার চোখ নষ্ট করে দেয়ার চেস্টা চালায়। গলা টিপে ধরে হত্যার চেষ্টা করে। মাকে বাঁচাতে মিনু আরা এগিয়ে আসলে তাকেও মারধর করা হয়। এসময় বাড়ীর প্রায় ৩০ হাজার মালামাল ভাংচুর করে।

আহত মা ও মেয়েকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এব্যাপারে বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে ২৯ মার্চ স্থানীয় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ছেলে আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন। 

ঘটনাটি কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ তদন্ত করছেন।

এদিকে, বৃদ্ধা ফাতেমা বেগমের পৈত্রিক জমিতে নির্মিত ফাতেমা মার্কেটের দোকান পাট ও জমি লিখে না দিলে মাকে খুন করার হুমকি দেয় ছেলে আবদুল মালেক। এঘটনায় বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে ছেলে আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী (নং- ১৮২৫), তারিখ-৩১/৩/২০২১ইং।মাদকাসক্ত ছেলের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ, এজাহার, জিডি এবং ইউএনও কাছে অভিযোগ দায়ের করলেও ছেলের নির্যাতন থেকে বাঁচতে পারছেনা বৃদ্ধা ফাতেমা। 

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আত্মীয়-স্বজন পর্যায়ে দফায় দফায় শালিস-বৈঠক হওয়ার পরও গ্রাম্য রাজনীতি রোষাণলে বিষয়টি নিষ্পত্তি হচ্ছে না। মাদকাসক্ত ছেলের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করা না গেলে এক সময় তা চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

এদিকে ওই বৃদ্ধা মা ফাতেমা বেগম থানায় লিখিত অভিযোগে তাঁর সন্তানের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন ও মেরে ফেলার হুমকির অভিযোগ করেছেন।

বিধবা ফাতেমা বেগমের ২ পুত্র ও চার কন্যা । স্বামী মৃত্যুবরণ করেন ২০১৩ সালে। মৃত্যুকালে স্বামী রেখে যান একটি কুড়ে ঘর ও বসতভিটা জমি। বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম তার পৈত্রিক সুত্রে প্রাপ্ত কক্সবাজার সদর উপজেলা এলাকায় জমিতে ৬টি পাকা দোকান নির্মাণ করেছেন।

এই সম্পত্তিই এখন কাল হয়েছে বৃদ্ধা ফাতেমার। মাদকাসক্ত সন্তানের সাথে সম্পত্তি নিয়ে মায়ের চলছে চরম বিরোধ। মা আর বোনকে বার বার শারীরিক নির্যাতন করে মায়ের পৈত্রিক জায়গা কুক্ষিগত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ। বৃদ্ধা মা থানায়, ইউএনও কাছে, জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনেকগুলো অভিযোগ করেও কোন কুল কিনারা হয়নি। এখন সেই অসহায় বৃদ্ধার বাড়িতে চলছে সন্ত্রাসী মহড়া। 

বৃদ্ধা মা ফাতেমা বেগম জানান, তাঁর ছেলে আবদুল মালেক স্বামী মৃত্যুর পর কোন খোর-পোষ বা ঔষদ-পথ্য দিচ্ছে না। ওই ছেলে আলাদা থাকেন দীর্ঘদিন ধরে। কিন্ত বৃদ্ধা ফাতেমা তার পৈত্রিক সুত্রে প্রাপ্ত জায়গা উক্ত ছেলে আবদুল মালেকের নামে লিখে দেয়ার জন্য তাঁকে প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতন ও নানাবিদ অত্যাচার করে আসছে। এমনকি২৭ এপ্রিল ঘরে বেড়া, টিনের ছাউনি, চেয়ার টেবিল, ঘরে মালামাল ব্যাপক ভাংচুর করেছে মালেক।

জোরপূর্বক তাঁকে বসত ঘর থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে । বিধবা মা ফাতেমা তাঁর ছেলের অত্যাচার থেকে বাঁচতে চান।

বৃদ্ধার মেয়ে মিনু আরা (মিনু) বলেন, আমরা দুই বোন এখনো অবিবাহিত। আমরা বাড়ীতেই থাকি। কিন্ত ভাই মালেক আমার মাকে এবং আমরা দুই বোনকে খুব অথ্যাচার করে। আমাদের বৃদ্ধা মাকে পবিত্র শবে বরাতের দিন মেরে হাত ভেঙে দিয়েছে, কপালে লাথি মেরেছে। 

আমি রক্ষা করতে এগিয়ে আসলে আমাকেও মার-ধর করেছে। আমাদেরকে এবং বৃদ্ধা মাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। 

তার হুমকীতে আমি, মা ও বোন নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছি।ভাইয়ের এমন নির্যাতন আমরা সহ্য করতে পারছি না।আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। 

প্রতিবেশীরা জানান, বৃদ্ধার সন্তান মালেক এতোই বেপরোয়া হয়ে, প্রকাশ্যে বৃদ্ধা মা এবং বোনদেরকে অমানষিক নির্যাতন করেই যাচ্ছে। প্রতিবেশী কারো নিষেধ বাধা কিছু মানছেনা মাদকাসক্ত আবদুল মালেক।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো.সাহাব উদ্দীন সিকদার জানান, আবদুল মালেক খুবই বেপরোয়া। তার বৃদ্ধা মা ও বোনেরা তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিল। কিন্তু বার বার নোটিশ করেও কাউন্সিলর কার্যালয়ে উপস্থিত হননি। এখনো যদি তারা উভয় পক্ষ আমার কাছে আসে আমি সমাধানের চেষ্টা করবো।

আরও পড়ুন

×