প্রকাশিত: 04/05/2021
ঝিনাইদহে সৃজনী নামে একটি এনজিও’র চাপিয়ে দেওয়া পাওয়না টাকা দিতে এসে মানসিক নির্যাতনের শিকার আব্দুস সাত্তার গাজী (৩৫) নামে এক যুবক অফিসের মধ্যেই বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
এ ঘটনা নিয়ে শহর জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ। অন্যদিকে বিষয়টি ধামা চাপা দিতে সৃজনীর পক্ষ থেকে নানা কল্প কাহিনী প্রচার করা হচ্ছে। বিষপানের শিকার আব্দুস সাত্তার খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকার নুরনিয়া গ্রামের রওশন আলী গাজীর ছেলে।
তিনি চট্রগ্রামের লোহাগড়া থানায় এনজিও সৃজনীর সোলার বিভাগের কর্মী ছিলেন। সোমবার (৩ মে ২০২১) সকাল ১০টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের পবহাটী পাড়ার সৃজনী হেড অফিসে এই বিষপানের ঘটনা ঘটে।
আব্দুস সাত্তারের ভাষ্যমতে ঋনের পাশ বহিতে কিস্তির আপডাউন ও অডিটের অনিয়মের টাকা নিয়ে অফিস তার উপর টর্চারিং করে। ২০১৫ সালে অডিটের ওই টাকা ফেরৎ দিয়ে দিই। ২০১৮ সালে তিনি চাকরী ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন। চাকরী ছাড়ার সময় তিনি প্রতিষ্ঠানের পাওয়ানা সবকিছু বুঝিয়ে দেন।
এমনকি টেবিল চেয়ার বিক্রির টাকাও সৃজনীর হেড অফিসে জমা দেন। কিন্তু তাকে কোন রশিদ দেওয়া হয় না। এ ঘটনার বেশ কিছুদিন পর আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে সাড়ে ৩ লাখ টাকার চেকের মামলা করে সৃজনী।
ওই ক্লাঙ্ক চেকটি চাকরি নেওয়ার সময় সৃজনী অফিসে জমা দেওয়া ছিল। আব্দুস সাত্তার অভিযোগ করেন, তার কাছে কোন পাওয়ানা ছিল না। আদালতে মামলা হওয়ায় তিনি ধার দেনা করে এক লাখ কুড়ি হাজার টাকা পরিশোধ করেন। ঘটনার দিন সোমবার তিনি আরো পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে আসেন।
সঙ্গে একটি কোরআন শরীফ ও বিষের বোতল। সত্য প্রতিষ্ঠায় তিনি এনজিও কর্মকর্তাদের কোরআন হাতে শফৎ করার কথা বলা মাত্রই তার উপর মানসিক নির্যাতন শুরু হয়। বকাবকি করেন। নানা কটু বাক্যবাণে মানসিক যন্ত্রনায় আহত হন আব্দুস সাত্তার।
এক পর্যায়ে তিনি সৃজনী’র কর্মকর্তা দারজুল ইসলাম ও ওয়াহিদুজ্জামানের সামনে সঙ্গে আনা বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। জনৈক নাজমুল ইসলাম মুমুর্ষ অবস্থায় আব্দুস সাত্তারকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
যার ভর্তি রেজিষ্টার ১৮০১/২১। সাত্তারের স্ত্রী হোসনে আরা অভিযোগ করেন, ৫ মাস আগে ব্লাঙ্ক চেক ফেরৎ নিতে আমরা এক লাখ ২০ হাজার টাকা প্রদান করি। কিন্তু তারা সাড়ে ৩ লাখ টাকার দাবীতে অটল থেকে চেক ফেরৎ দেয়নি।
তিনি এ ঘটনার বিচার দাবী করে ব্লাঙ্ক চেক ফেরৎ চান। বিষয়টি নিয়ে সৃজনীর সহকারী পরিচালক দারজুল ইসলাম জানান, লোহাগড়া শাখায় চাকরী করার সময় বেশ কিছু সোলারের মালামাল নষ্ট করে ফেলে। স্টোর থেকে মালামাল হারিয়ে ফেলে। গ্রাহকের টাকা তুলে জমা দেয় না।
এ করণে অডিট রিপোর্ট মোতাবেক সাড়ে ৩ লাখ টাকা আব্দুস সাত্তারের কাছে পাওয়ানা হয়। এটা সে মেনে নিয়েই এক লাখ টাকা ২০ হাজার টাকা জমা দেন। এরপর টাকা দিতে তিনি টালবাহানা শুরু করেন। সোমবার সকালে তিনি ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে আসেন।
আমরা বলি আর কিছু টাকা দিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে যান। এ ঘটনার পর তিনি অফিস থেকে চলে যান। তারপর তিনি আবার ফিরে আসেন। কিন্তু তার অবস্থা ভাল না হওয়ায় আমরা হাসপাতালে ভর্তি করি। আব্দুস সাত্তার সৃজনী অফিসে বিষপান করেন নি বলে সহকারী পরিচালক দারজুল ইসলাম দাবী করেন।
ঝিনাইদহ সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, এনজিওতে চাকরী নেওয়ার সময় ব্লাঙ্ক চেক রেখে দেবার কোন নিয়ম নেই। কোন এনজিও যদি এটা করে থাকে তবে চরম অন্যায় ও আইন ভঙ্গের কাজ।
অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার এসআই এমদাদ হোসেন হাসপাতালে আব্দুস সাত্তার গাজীর বক্তব্য রেকর্ড করেন। এ সময় তিনি সাংকবাদিকদের জানান, অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক পুলিশ আইনগত ব্যাবস্থা নিবে।