নদী দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ নজর নেই কর্তৃপক্ষের

নদী দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ নজর নেই কর্তৃপক্ষের

নদী দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ
নজর নেই কর্তৃপক্ষের
পূর্বের ইউএনও কাজ বন্ধ করলেও বর্তমানে রহস্যজনক কারণে চলমান নির্মাণ কাজ


দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ছোট যমুনা নদী দখল করে আরসিসি ভিত দিয়ে ভবন নির্মাণ হচ্ছে তিনটি বহুতল ভবন। ফুলবাড়ী শহরের প্রাণকেন্দ্র পৌরবাজার সংলগ্ন ফুটব্রিজ ঘেঁষে অবৈধভাবে এই ভবন নির্মাণ করা হলেও রহস্যজনক কারণে নিরব রয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এতে স্থানীয় বাসিন্দাসহ সচেতন নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, পৌর শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী অজিত প্রসাদ ও অ¤্রবাড়ী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলাম ফুট ব্রিজটি ঘেঁসে আরসিসি পিলার দিয়ে বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মাণ করছেন। অপরদিকে তার কিছুটা দক্ষিণে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন সিরাজগঞ্জের রাম দত্ত। তবে পূর্বের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সালাম চৌধুরী থাকাকালিন রাম দত্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। পরে ওই কর্মকর্তার বদলি হওয়ার পর রহস্যজনকভাবে নদীর ধারে আরসিসি পিলার তুলে মার্কেট নির্মাণ কাজ শুরু করেন অজিত প্রসাদ ও সামিউল ইসলাম।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফুলবাড়ী শহরের বুক চিরে বেয়ে গেছে ছোট যমুনা নদী। সেই নদী ঘেঁষে পৌরবাজার অবস্থিত। নদী পারাপারের জন্য নদীর ওপরে অবস্থিত ফুটব্রিজ ঘেঁষে নদীর থেকে আরসিসি পিলার তুলে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল মার্কেট। পূর্বে প্রশাসনের চাপে ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকলেও রহস্যজনক কারণে সুযোগ বুঝে আরসিসি ভিত দিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ প্রকাশ্যদিবালোকে চালিয়ে যাচ্ছেন ওই তিন ব্যক্তি। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসীরা বলেন, ‘পূর্বে রাম দত্ত অবৈধভাবে নদীর ধারে ভবন নির্মাণ কাজ করলে প্রশাসন এসে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে নদী থেকে আরসিসি ভিত দিয়ে মার্কেট নির্মাণ করার সুযোগে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন রাম দত্ত। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অজিত প্রসাদ ও সামিউল ইসলামসহ কয়েকজন আরসিসি ভিত দিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সকলেই প্রাথমিকভাবে নদীরধারে টিনবেড়ার ঘর নির্মাণ করেছিলেন। এখন সুযোগ বুঝেই ছক্কা হাঁকিয়ে বহুতল ভবন তুলছেন।’
স্থানীয় বাসিন্দা সুফিয়া বেগম বলেন, ‘যাদের অগাদ টাকা পয়সা আছে প্রশাসনের চোখে তারা পড়ে না। যত আপদ-বিপদ সব গরীবদের ওপর। আমি যখন সেখানে নদী থেকে বহুদুর জায়গা ছেড়ে বাড়ি বানাই, তখন আমাকে বহু রোষাণলে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু যারা টাকার জোড়ে নদী দখল করে নদী থেকে ভিত তুলে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। কই সেগুলো তো প্রশাসনের কি নজরে পড়ে না, না-কি রহস্যজনক কারণে দেখেও দেখেন না তারা?’
এ বিষয়ে দখলদার রাম দত্ত বলেন, ‘আমি সেখানে জায়গা কিনে বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু একসময় উপজেলা প্রশাসনের জঠিলতার কারণে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়।’
অজিত প্রসাদ বলেন, ‘পূর্বে নির্মাণাধিন রাম দত্তের স্থাপনার কাজ বন্ধ দিয়েছিল প্রশাসন। এখনো তার স্থাপনার ৯ ফিট নদীর স্থানেই রয়েছে। আমরা নদী থেকে যায়গা ছেড়েই স্থাপনা নির্মাণ করছি। আমার স্থাপনা নির্মাণকালে উপজেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসের লোকজন জায়গা মেপে গেছেন। আমার জায়গায় কোন সমস্যা নেই।’
শিক্ষক সামিউল ইসলাম বলেন, ‘আমার ওই জায়গাটা একটু জঠিলতা আছে। আমার জায়গা থেকে ২৯ ফিট জায়গা রাস্তা ও ফুটব্রিজে ঢুকেছে। আমার ভবন নির্মাণ কাজ চলাকালে ইউএনও এসিল্যান্ড এসে মাপযোগ করেছেন। তারা মাপযোগ করে বলেছেন যেখান থেকে পিলার তুলেছেন সেখান থেকেই কাজ করতে। বাড়তি যেনো নদীর দিকে না আসে। আমি সেই অনুপাতেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘সেই স্থাপনাগুলো নদীর জায়গায় নেই। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশনা রয়েছে নদী থেকে কিছুটা জায়গা ছেড়েই স্থাপনা নির্মাণ করতে। কিন্তু তারা সেটি করেন’নি। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করব। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশনা অমান্য করায় পূর্বের কর্মকর্তা রাম দত্তের নির্মাণাধিন স্থাপনার কাজ বন্ধ করেছিলেন।’
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
 

আরও পড়ুন

×