প্রকাশিত: 20/06/2021
ফুলবাড়ীতে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও
প্রকাশ্যে চলছে প্রাইভেট-কোচিং
কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণে মাঠে মানছে উপজেলা প্রশাসন
ভারতের সীমান্তবর্তী দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় হঠাৎ করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া প্রাইভেট-কোচিংসহ সবধরণের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নিদের্শনা থাকলে সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে দিব্যি প্রাইভেট-কোচিং চালিয়ে যাচ্ছেন কিছু অর্থলোভী সরকারি বেতনভুক্ত শিক্ষকসহ সাধারণ শিক্ষকরা।
এসব শিক্ষক তাদের বাসায় অথবা ভাড়া করা কক্ষে ব্যাচ করে সরকারের স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই একসঙ্গে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে বসিয়ে এ কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল রবিবার পৌরএলাকার সুজাপুর, প্রফেসর পাড়া, মডেল স্কুল মোড়, মাদ্রাসা রোড, নিমতলা মোড়, জনতা ব্যাংক সংলগ্ন, বাংলাস্কুল মোড়, প্লাস্টিক কারখানা এলাকার সুপারি বাগানসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয়দের কথা বলে জানা গেছে, করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও প্রকাশ্যেই প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্য শুরু হয়েছে। সেইসব প্রাইভেট-কোচিংগুলোতে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক চাপ। প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে নির্ভয়ে বাসা-বাড়িতে প্রাইভেট-কোচিং গাদাগাদি করেই সুকৌশলে গোপণীয় পরিবেশে চালিয়ে যাচ্ছেন সেইসব অর্থলোভী শিক্ষকরা।
স্থানীয়রা বলেন, সরকার যেখানে স্কুল-কলেজসহ সবধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা ভেবে। সেখানে কিভাবে চলছে এসব প্রাইভেট-কোচিং সেন্টারগুলো? সাধারণ শিক্ষকের পাশাপাশি প্রশাসনের কোন নজর না থাকায় দিব্যি প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারের বেতনভুক্ত শিক্ষকরাও। প্রাইভেট পড়ানোর সুবিধার জন্য শিক্ষকেরা শহরের একটু দূরে বাসা ভাড়া নিয়েছেন। প্রত্যেকের বাসায় রয়েছে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য বিশেষ কক্ষ। কক্ষগুলো বেশ ছোট হলেও সেখানে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বেঞ্চ ঢুকিয়ে তাতে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থী বসানো হচ্ছে। এভাবে প্রতি ব্যাচে ২০ থেকে ৩০ জন বা তারও বেশি শিক্ষার্থীকে পড়ানো হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, প্রাইভেট-কোচিং বাাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকেরা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। প্রাইভেট ও কোচিং নিষিদ্ধ করার পর বেশ কিছুদিন তারা পড়ানো বন্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু ইদানিং প্রশাসনের কোনপ্রকার অভিযান না থাকায় আবারও তারা আগের মতোই প্রায় প্রকাশ্যে প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্য শুরু করেছেন।
পৌরএলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার বাড়ির কাছেই দু-তিনজন শিক্ষক প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রতি ব্যাচে ৩০ থেকে ৩৫ জনকে ছোট কক্ষে বসিয়ে তারা প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। আমি এ ব্যাপারে ওইসব শিক্ষককে নিষেধ করলেও তারা আমার কথায় কর্ণপাত করেনি।
শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুল-কলেজ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো ঠিকমতো না জানায় প্রাইভেট-কোচিং করতে হচ্ছে। পরিবার থেকে বাঁধা দেওয়া হলেও অ্যাসাইনমেন্টের জন্য প্রাইভেট বাধ্যতামূলক যেতে হচ্ছে।
পৌরএলাকার চকচকা গ্রামের মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, তার মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তার সহপাঠীরা বেশ কিছুদিন হলো শিক্ষকদের বাড়িতে গিয়ে গাদাগাদি করে বসে প্রাইভেট পড়ছে। তবে তিনি তার মেয়েকে প্রাইভেট পড়া দূরের কথা, করোনার প্রথম থেকেই বাইরেই বের হতে দিচ্ছেন না। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতি এখন ভালো না। সকালে রাস্তায় বের হলে শিক্ষার্থীদের দল বেঁধে শিক্ষকদের বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে যেতে দেখা যাচ্ছে। এভাবে চললে করোনা পরিস্থিতি আরো ভয়ানক রূপ ধারণ করবে ঠিক ভারতের মতো বলে এই অভিভাবক আশঙ্কা করেন।
প্রফেসর পাড়ায় প্রাইভেট পড়ান এমন এক শিক্ষক জানান, অভিভাবকদের চাপে তার মতো কয়েকজন শিক্ষক প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। প্রাইভেট পড়ানোর কক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে বলে তিনি দাবি করেন।
ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, করোনায় শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ফুলবাড়ী ভারতীয় সীমান্তবর্তী হওয়ায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। প্রাইভেট-কোচিংগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ফুলবাড়ীতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গতকাল রবিবার সকালে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে। কঠোর অবস্থানের পাশাপশি সচেতনামূলক প্রচার-প্রচারণা ব্যাপকহারে চালানো হবে। প্রাইভেট-কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ওইসব শিক্ষকদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।