আগে স্কুল পালাইতাম কিন্তু এখন স্কুলে যেতে চাই

আগে স্কুল পালাইতাম কিন্তু এখন স্কুলে যেতে চাই

স্কুল তো বহুদিন থেকে বন্ধ। রোজা ঈদের পর স্কুল খোলার কথা বলেছিল স্যার। কিন্তু এখন তো আবারো ছুটি বাড়ালো সরকার। হয়তো কোরবানি ঈদের আগে আর খুলবে না স্কুল। শুনলাম স্কুলের বড় ভাইয়ারা স্কুলে খোলার দাবিতে আন্দোলন করবে। আমিও যাবো সেই আন্দোলনে। তুই কি যাবি সুরাইয়া? হ্যা আমিও যাবো। স্কুল থেকে নতুন বই পাইসি কিন্তু এখনো স্কুল খুলল না। পড়ালেখা ঠিক মতো হচ্ছে না মিনহাজুল ভাইয়া। কতোদিন গুলো স্কুলের বন্ধু-বান্ধবিদের সাথে দেখা হয়নি। বান্ধবিদের সাথে স্কুল মাঠে খেলা হয়না আর। বাড়িতে আর ভালো লাগে না। স্কুলে টিফিনের সময়ে মজাদার মাখা খাইতাম এখন আর সেটাও খাওয়া হচ্ছে না। 
    এমনি কথোপকথন চলছিল তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাফ সুরাইয়া ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিনহাজুরের মধ্যে।
    গ্রামের ছেলে-মেয়ে তারা। পড়ালেখার পাশাপাশি ছোট থেকেই বহু দায়িত্ব ঘাড়ে নিতে হয় তাদের। শহরের ছেলে-মেয়েদের মতো আদুরে জীবনযাপন হয় না তাদের। মেলে না বিলাসিতা। কঠোর পরিশ্রমের মধ্যেই কেটে যায় তাদের জীবন। ছোট থেকেই বাবা-মার সাথে মাঠে-ঘাটে কাজ-কর্মে অভ্যস্ত তারা। মাফ সুরাইয়া ও মিনহাজুরের বাবা জমিতে আমন বীজ বোপণ করেছেন। সেই বীজ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পড়েছে তাদের দুজনের ওপর। পাশাপাশি দুইজনের বাবার জমি হওয়া বেশ সুবিধাও হয়েছে তাদের। জমির পাশের একটি গ্রামীণ পাকা সড়কের পাশে বসে খেলাধূলার পাশাপাশি পড়ালেখা নিয়ে আলাপ করতে দেখা যায় তাদের। তাদের দুজনের হাতে ছিল দুটো হাঁস। অবশ্য সেই হাঁসগুলো তাদের না। তাদের বীজ খেতে এসেছিল হাঁসগুলো। তাই তারা সেটি ধরে রেখেছে প্রকৃত মালিককে ফেরত দিতে।
    দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ৭ নং শিবনগর ইউনিয়নের রামভদ্রপুর গ্রামের হাজির ডাঙার মাইক্রোবাস ড্রাইভার মো. খোকনের মেয়ে মাফ সুমাইয়া (৮) এবং ট্রাক্টর চালক মো. মানিক হোসেনের ছেলে মিনহাজুল (১০)। তারা দুজনে রামভদ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
    মাফ সুরাইয়া ও মিনহাজুরের সাথে প্রতিবেদক কথা বললে, খুব দ্রুতই খুনসুটিতে মেতে ওঠে তারা ওই প্রতিবেদকের সাথে। পরে তারা প্রতিবেদককে জিজ্ঞেস করে, আমাদের ছবি আর এগুলো লিখে কি করবেন? আপনি কি সাংবাদিক? পেপারে দিবেন আমাদের ছবি?
    প্রতিবেদক তাদের আলাপচারিতার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, সকাল ১০টা থেকে দুই ঘণ্টা ধরে বসে আমরা আমাদের জমির বীজ দেখাশোনা করছি। স্কুল খোলা থাকলে এই সময়ে স্কুলে থাকতাম কিন্তু করোনার কারণে স্কুল বন্ধ করেছে সরকার। এখন আর পড়ালেখা নাই। এক দেড় বছর হয়ে গেলো স্কুল যাওয়া হয়না। শুধু প্রাইভেট পড়া আর বাড়ির পড়া পড়তে হচ্ছে। আগে স্কুল পালাইতাম কিন্তু এখন আর বাড়িতে ভালো লাগে না। আমরা আবার স্কুলে যেতে চাই। স্কুলে কতোই না মজা হতো। কতো বন্ধু-বান্ধব ছিল। কতদিন হয়ে গেলে তাদের সাথে আর দেখা হয়না। কয়েকটা বন্ধু-বান্ধবের সাথে প্রাইভেটে দেখা হলেও প্রাইভেট শেষে সবাই সবার বাড়িতে চলে যায়। 
    তারা আরো জানায়, প্রতি শনিবার করে স্কুলে যায় তারা। সেখানে তাদেরকে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। তারা সেটি বাড়িতে এনে প্রশ্নের উত্তর লিখে আবার স্কুলে জমা দেয়। সেখানে হয়তো দুই একজন বন্ধু বান্ধবের সাথে কথা বার্তা হয়। এলাকার স্কুল পড়–য়া বড় ভাইয়া আর আপুরা স্কুল খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করবে। আমরা দুইজনও সেই আন্দোলনে যাবো। আমরাও চিল্লায় বলবো স্কুল খুলতে বলবো। যাতে সরকার তাড়াতাড়ি স্কুল খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
    তাদের হাতে থাকা হাঁসগুলো কি তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তর দেয়, জানেন আমাদের জমিতে কয়েকটা হাঁস ঢুকে বীজ খেয়ে ফেলছিল। সেখান থেকে এই দুইটা হাঁসকে ধরেছি। হাঁসগুলো তাদের মালিক’কে ফেরত দিতে হবে। আর বলে দেবো যেনো হাঁস আর আমাদের জমিতে না ছাড়ে। আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। 
 বিদায় বেলা তারা বলে, আমাদের জন্য পেপারে ভালো করে লিখিয়েন আমাদের ছবিসহ। বাবাকে বলব পেপারে ছবি বের হয়েছে। পেপার কিনে আনতে। স্কুল খুললে সেই পেপার আমরা আমাদের বন্ধুদেরকে দেখাবো। বলব দেখ আমাদের গল্প পেপারে ছাপিয়েছে। আমরা বলেছিলাম সাংবাদিককে স্কুল যেনো তাড়াতাড়ি খুলে দেয়। সে কথা সরকারকে জানাতে। 
 

আরও পড়ুন

×