ফুলবাড়ীতে ট্রেড লাইসেন্সে স্বাক্ষর না করায় ইউপি সচিবকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ !

ফুলবাড়ীতে ট্রেড লাইসেন্সে স্বাক্ষর না করায় ইউপি সচিবকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ !

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে এক ইউপি সচিবকে লাঞ্ছিত করে অফিস থেকে বের করে দিয়ে অফিস কক্ষে তালাবদ্ধ করায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউএনও এবং থানায় লিখিত অভিয়োগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ইউপি সচিব।
    ঘটনাটি ঘটেছে, গত রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে ফুলবাড়ী উপজেলার ৭নং শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে। একই দিন ভুক্তভোগী সচিব লাঞ্ছনাকারী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউএনও এবং থানায় লিখিত অভিয়োগ দিয়েছেন।
    উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানায় দাখিলকৃত লিখিত সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে ফুলবাড়ী উপজেলার ৭নং শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী বিপ্লব তার কার্যালয়ের সচিব শ্রী দীপক চন্দ্র দাসকে তার অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ বিবিধ খাতে আদায়ের রসিদের স্বাক্ষর করতে বলেন ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী বিপ্লব। কিন্তু সচিব এতে স্বাক্ষর দিতে অপারগতা জানালে ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী বিপ্লব ক্ষিপ্ত হয়ে ইউপি সদস্য সাজেদুর রহমান সাজু,  অফিস সহকারী মেহেদী হাসানসহ উপস্থিত লোকজনের সামনেই সচিবকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে সচিবকে তার অফিস থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। একই সাথে চেয়ারম্যান সচিবের অফিস কক্ষেও তালা ঝুলিয়ে দিয়ে সচিবকে ইউনিয়ন পরিষদ ছেড়ে চলে যাওয়া জন্য ভয়ভীতিসহ হুমকি দেন। উপায়ান্ত না পেয়ে ইউপি সচিব দীপক চন্দ্র দাস ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিতাড়িত হয়ে ওইদিনই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) লিখিতভাবে অভিযোগ দাখিল করেছেন।
    ভুক্তভোগী ইউপি সচিব দীপক চন্দ্র দাস বলেন, প্রায় ৯ মাস পূর্বে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পদে যোগদান করেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কিছু সময় পরিষদের সকল প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ অর্থ আদায় সংক্রান্ত রসিদ বহি সচিবের কাছে সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী বিপ্লব পরিষদের প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ সকল প্রকার সরকারের রাজস্ব আদায়ের রসিদ বহি জোরপূর্বক সচিবের কাছ থেকে নিজ দখলে নিয়ে নেন। একইভাবে ২০২১-২২ অর্থ বছরের জন্য পাঁচটি ট্রেড লাইসেন্সের বহি, ২০ ট্যাক্স ও বিবিধ আদায়ের রসিদ, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ফি আদায়ের রসিদ বহি স্থানীয় রংধনু প্রিন্টিং প্রেস থেকে ছাপিয়ে তার নিজের দখলে রেখেছেন। ঘটনার দিনও তিনি আমাকে তার অফিস কক্ষে ট্রেড লাইসেন্সের রসিদে স্বাক্ষর করতে বলেন। যেহেতু ট্রেড লাইসেন্সের টাকা তিনি নিয়ে নিজের দখলে রেখেছেন সেজন্য ওই রসিদে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান। এতে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে ইউপি সদস্য সাজেদুর রহমান সাজু,  অফিস সহকারী মেহেদী হাসানসহ উপস্থিত লোকজনের সামনেই অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং এক পর্যায়ে ধাক্কা দিয়ে তার অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন। এরপর চেয়ারম্যান সচিবের কক্ষেও তালা ঝুলিয়ে দিয়ে তাকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে ভয়ভীতিসহ হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে ওইদিনই সচিব বিষয়টি লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্যার ও থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি তার অভিযোগে উল্লেখ্য করেছেন, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের ভিডিটি চক্রর ৪৪০ জন সুবিধাভোগীর খাদ্যশস্য উত্তোলন করে নামেবেনামে বিতরণের নামে আত্মসাত করছেন। তিনি জনান, অভিযোগের অনুলিপি জেলা প্রশাসক, দিনাজপুর ও উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার , দিনাজপুর মহোদয়কেও দেওয়া হয়েছে। 
    ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী বিপ্লব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইউপি সচিব দীপক চন্দ্র দাসকে ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্সে স্বাক্ষর করার জন্য বলা হলে তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানান। দীর্ঘদিন থেকে সচিব ট্রেড লাইসেন্সে স্বাক্ষর না করায় ইউনিয়নের ব্যবসায়ীরা ট্রেড লাইসেন্স নিতে এতে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। ট্রেড লাইসেন্সে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তাকে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। জনগণের জন্য কাজ না করলে এখানে থাকার প্রয়োজন কি? তবে তাকে গালিগালাজ কিংবা ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের দিয়ে তার অফিস কক্ষে তালা ঝুলানো এসব কিছুই ঘটেনি। এগুলো ইউপি সচিবে মিথ্যা বানোয়াট অপপ্রচার মাত্র। 
    থানার চলতি দায়িত্ব থাকা অফিসার ইনচার্জ (ওসি-তদন্ত) মাহমুদুল হাসান বলেন, ইউপি সচিবে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে তদন্ত পূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
    উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ইউপি সচিবের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
 

আরও পড়ুন

×