প্রকাশিত: 10/07/2021
পেশায় রিকশাচালক মোতালেব মিয়া।বয়স ৬০-এর বেশি। কয়েকদিন আগে পারিবারিক একটা সমস্যায় আইনগত সেবা নেয়ার জন্য এসেছিলেন রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন শামীমের অফিসে।
ওয়েটিং রুমে কিছুক্ষণ অপেক্ষা শেষে এএসপির কক্ষে ঢুকতেই চমকে ওঠেন তিনি। এএসপি তাকে ‘স্যার’ সম্বোধন করে বসতে বলেন। কিন্তু নিজ কানে শুনেও বিশ্বাস করাতে পারেন না মোতালেব। তাকে স্যার সম্বোধন করছেন একজন এএসপি! এটা সত্যিই কী একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারের মুখের ভাষা!
সেদিন বৃদ্ধ এই রিকশাচালকের সঙ্গে এএসপির ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হন পাশে থাকা আরেক ব্যক্তি। তিনি বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন। এরপরই এএসপির সাধারণ মানুষকে ‘স্যার’ ডাকার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় ৷
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু বৃদ্ধ মোতালেবই নন। এই এএসপির সুন্দর ব্যবহার, আর সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলার প্রশংসা উত্তর চট্টগ্রামবাসীর সবার মুখে মুখে। রিকশাওয়ালা, ঠেলাওয়ালা, মুচি, মেথর থেকে শুরু করে কৃষক, শ্রমিকসহ সব শ্রমজীবী মানুষকেই তিনি ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করেন।
বিপরীতে কেউ তাকে স্যার ডাকলে তিনি নিষেধ করে বলেন, ‘আপনাদের ট্যাক্সের পয়সা দিয়েই আমার বেতন। আপনাদের শ্রম-ঘামের ওপরই আমাদের জীবন-জীবিকা। যেহেতু আমি একজন জনগণের কর্মচারী, তাই প্রকৃতপক্ষে আপনারাই আমার স্যার। দয়া করে আমাকে স্যার না ডেকে ভাই বলে ডাকলেই বেশি খুশি হবো।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তার অফিস থেকে কেউ চা না খেয়ে যেতে পারেন না। বয়স্ক কোনো সেবাপ্রার্থী আসলে এএসপি নিজেই উঠে গিয়ে সেই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে সসম্মানে অফিস কক্ষে নিয়ে আসেন।
এদিকে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাকে ‘স্যার’ সম্বোধন করা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা চলছে। তখন এই পুলিশ কর্মকর্তার ব্যবহার ব্যতিক্রমই বলা চলে।
অবশ্য ‘স্যার’ সম্বোধন বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম।
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় এবং আইজিপি মহোদয়ের দক্ষ নেতৃত্বে পুলিশ জনগণের প্রকৃত আস্থার ঠিকানায় পরিণত হচ্ছে। আমিও আমার জায়গা থেকে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে যথাসাধ্য ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে
জানা গেছে, এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম খাগড়াছড়ি জেলার উত্তর বড়বিল গ্রামের আব্দুল মান্নান এবং বিলকিস বেগম দম্পতির তৃতীয় সন্তান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ১১তম স্থান অধিকার করে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে যোগদান করেন।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশে যোগদানের পূর্বে তিনি র্যাব-৯ এর অধীনে শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের কমান্ডার এবং তারপর ঢাকা র্যা ব সদরদফতরের মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
শ্রীমঙ্গল র্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার হিসেবে তার মানবিক কর্মকাণ্ড এবং র্যাব-৯ এর করোনা রেসপন্স টিমের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে তার করোনা আক্রান্ত মানুষের সরাসরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সিলেটসহ পুরো দেশবাসীর প্রশংসা কুড়ায় ৷