রাঙ্গুনিয়া রাউজান সার্কেলের এএসপি মোঃ আনোয়ার হোসেন শামীমের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসানকে নিয়ে আবেগমাখা স্ট্যাটার্স ৷

রাঙ্গুনিয়া রাউজান সার্কেলের এএসপি মোঃ আনোয়ার হোসেন শামীমের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসানকে নিয়ে আবেগমাখা স্ট্যাটার্স ৷

করোনায় মারা গেলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসান ৷খুব কাছ থেকে দেখেছেন তাকে রাঙ্গুনিয়া রাউজান সার্কেলের এএসপি মোঃআনোয়ার হোসেন শামীম ৷তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবেগঘন পোস্ট দেন হুবহু তা তুলে ধরলাম ৷ 

অতিরিক্ত পুলিশ  সুপার আহসানের 'ছুটি'!

অবশেষে ছুটি পেয়েছেন ৩৩তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের সদস্য, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসান স্যার। ইদুল আজহা উপলক্ষে নৈমিত্তিক বা অনুমতি  ছুটি না। এমনই এক ছুটি তাঁর মিলেছে যে, যে ছুটির পর আর কর্মক্ষেত্রে ফেরার তাড়া থাকল না। এখন শুধুই শান্তির ঘুম।

হ্যা, দেশবাসীকে করোনার হাত থেকে বাঁচাতে, আর নিজের সরকারি রেশন/বেতন বাঁচিয়ে তা ক্ষুধার্ত  মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতে মাঠঘাট চষে বেড়ানোর কোন এক ফাঁকে  আহসান স্যারের নিজের শরীরেই বাসা বেঁধে ফেলে ভয়ঙ্কর ঘাতক করোনা ভাইরাস। মাস্ক পরবেন, ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোবেন.... পাড়ায় মহল্লায় ঘুরেঘুরে জনগণের উদ্দেশে চিৎকার করে এসব  বলতে বলতেই তিনি পৌঁছে গেছেন এমন জায়গায় যেখানে আর হাত ধোয়া- মাস্ক পরার, পরানোর আর কোন আবশ্যকতা- বাধ্যবাধকতা নেই। গত দেড় বছর ধরে নীল জামা গায়ে চড়িয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়ার পর আজ সেই করোনার কাছেই তাঁর বীরোচিত 'আত্মসমর্পণ'।

স্যারের বিদায়ের খবর শোনার পর থেকেই মনের পর্দায় বারবার ভেসে আসছে বছর ছয়েক আগেকার ধুলিধূসরিত কিছু স্মৃতিকথা। ২০১৬ সালে তখন আমি বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পদে কর্মরত। আর আহসান স্যার খাগড়াছড়িতে পদায়িত ৩৩ তম বিসিএস পুলিশের শিক্ষানবিশ এএসপি হিসেবে। দারুন কিছু সময় কেটেছিল স্বল্পভাষিতা, হইচইবিমুখতার পাশাপাশি আচরণে ভীষণ  অমায়িক এই তরুণের সঙ্গে। একজন পুলিশ অফিসার কি এতটা সহজসরল, নমনীয় বা বিনয়ী হতে পারেন? আশপাশের লোকজন বলত, 'আরেহ এখনো তো ট্রেনিং পিরিয়ডে, তাই হয়তো। কয়দিন পর দেখা যাবে..!!' কিন্তু সমালোচকদের মুখে ছাই দিয়ে আহসান স্যার তার পুরো পুলিশ ক্যারিয়ার জুড়েই বিনয়ের অবতার হয়ে থেকেছেন। তার প্রতিটি কর্মস্থলে গেলেই যে কেউ উপলব্ধি করবেন, সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে তার তার আত্মিক সম্পর্ক কতটা প্রগাঢ় ও অকৃত্রিম ছিল।

পরবর্তীতে আমিও যখন ৩৪ তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে সারদায় ট্রেনিং করতে যাই, তখনও স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ  ছিল। তিনি আমাকে ধৈর্য ধরতে, কর্তব্যনিষ্ঠ হতে, সাহস রাখতে বলতেন। কিন্তু তখন তো আর জানা ছিল না যে, একসময় স্যার তাঁর নিজের জীবন দিয়েই প্রমাণ করে যাবেন- ধৈর্য, সাহস আর কর্তব্যনিষ্ঠার জয় সবসময় নাও হতে পারে কিন্তু।  আপনার মতো মহিমান্বিত পরাজয়বরণআমি/ আমরা প্রত্যেকেই সর্বান্তকরণে চাই, স্যার। অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি একজন অতি সহজসরল, বিনয়ী ও সদাচারী মানুষের প্রতি।

কিছু পুলিশ সদস্যের কাজ দেখে আমার খুব বিরক্ত লাগে- 'পুলিশ এমন কেন!!!' আবার অনেক পুলিশ সদস্যের মানবপ্রেমী দায়িত্বনিষ্ঠা দেখলে গর্ববোধ করি যে, হ্যা, আমিও এই বাহিনীরই একজন গর্বিত সদস্য। কেউ আশা করি, দ্বিমত করবেন না, এমন গর্ববোধ করানো মানুষমুখী পুলিশিং করেই বিদায়ের গান গেয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসান হাবিব, আমাদের সকলের অতি আপনজন আহসান স্যার।

পুলিশের চাকুরিতে একটুখানি ছুটির জন্য হাপিত্যেশ নিশ্চয়ই  তাঁর মধ্যেও ছিল। অনেক সময় নিরবিচ্ছিন্ন ছুটি কাটানোর পথে হয়তো বাঁধ সেধেছে নিজের কর্মনিষ্ঠাও। যা হোক, দীর্ঘদিন পর হলেও এবার ছুটি তো মিললো! স্থায়ী ছুটির এই দিনগুলি আপনার জন্য সুখের, ভীষণ সুখের  হয় যেন প্রিয় স্যার- কায়মনোবাক্যে এই দোয়া করছি।

আরও পড়ুন

×