কমলনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত, ৫২ পদের মধ্যে ৩০ টি শূন্য

কমলনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত, ৫২ পদের মধ্যে ৩০ টি শূন্য

৮ বছর আগে লক্ষ্মীপুরে কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় এর কর্যক্রম আজো চালু হয়নি । জনবল সংকটে খুড়িয়ে চলা সাবেক ৩১ শয্যার অর্ধেকেরই জনবল দিয়ে দায়সারাভাবে নামে মাত্র চলছে ৫০ শয্যা এই হাসপাতালের কার্যক্রম। সাম্প্রতিক ২ জন মিডওয়াইফ কে অন্যত্র বদলি করার কারনে হাসপাতালে আগত ডেলিভারি রোগীরা চরম ভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ফলে ডেলিভারি সেবাসহ আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই উপজেলার তিন লক্ষাধিক সাধারণ জনগন। কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আবু তাহের পাটোয়ারী বলেন, ৫০ শয্যায় উন্নতি করা এই হাসপাতালে ২৪ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের বিপরীতে মাত্র ৬ জন নার্স দিয়ে ২৪ ঘন্টা সেবা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। গর্বকালীন মায়েদের ডেলিভারিতে মাত্র ৪ জন মিডওয়াইফের মধ্যে একজন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। কিছুদিন আগে একজন সহ সাম্প্রতিক বাকী ২ জনকেও বদলী করা হয়েছে। ফলে হাসপাতাল এখন মিডওয়াইফ শুন্য। যে কারনে প্রসূতি মায়েদের মাতৃত্বকালিন (ডেলিভারি )সেবা অনেকটা বন্ধের পথে। এছাড়া গাইনি ও এনেস্থিসিয়া চিকিৎসক না থাকায় সিজারিয়ান অপারেশনও রয়েছে বন্ধ। টেকনিশিয়ানের অভাবে এক্সরে, ইসিজি, এনেস্থিসিয়া মেশিন চালু করা যাচ্ছেনা। পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নৈশপ্রহরী, সুইপার ও টিকেট ক্লার্ক পদগুলোতে জনবল শূন্য থাকায় হাসপাতালের পরিবেশ রক্ষা সহ সার্বিক চিকিৎসা সেবা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরো জানান, সকল ধরনের রোগ নির্ণয় ও সেবা প্রদানে এই হাসপাতালটিতে হৃদরোগ, হাঁড়, চক্ষু, চর্ম ও প্রসূতি সার্জারী সহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টেকনিশিয়ান সিনিয়র স্টাফ নার্স সহ শূন্য থাকা অন্তত পক্ষে ২০ টি পদে জনবল নিয়োগ দিতে হবে। সাথে আধুনিক যন্ত্রপাতির সমস্যাতো আছেই। জানাজায়,উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৮ বছর আগে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করা সহ একটি নতুন ভবন নির্মাণের বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরে ২০১৩ সালের ২৫ মে একটি নতুন ভবন বুঝিয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকে ৫০ শয্যার অবকাঠামো সহ প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ হলেও জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় ৮ বছরেও চালু করা যায়নি ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটির কার্যক্রম। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৫০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে রোগী ভর্তি হয় ৭০-৮০ জন । শয্যার অভাবে অতিরিক্ত রোগীদের ঠাই হয় মেঝেতে। সম্প্রতি পুরো উপজেলায় ডাইরিয়া মারাত্মক হওয়ায় প্রতিদিন ১৬০-১৮০ জন রোগী কে চিকিৎসা দিতে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এছাড়া ইমার্জেন্সিতে প্রতিদিন গড়ে ১৫০-১৬০ জন রোগী ভিড় করছেন প্রতিনিয়ত। হাসপাতাল সুত্রে জানাযায়,গাইনি বিশেষজ্ঞ একজন কনসালটেন্ট কাগজে কলমে এই হাসপাতালে দেখানো হলেও বাস্তবে তিনি ডেপুটেশনে ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী)পদে নেই কোন জনবল।মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্ট পদে জনবল শূন্য থাকায় ওই পদে দায়িত্ব পালন করছেন মেডিকেল অফিসার ডাঃ কাজী একরামুল হক। এনেস্থিসিয়া বিশেষজ্ঞ জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ থাকলেও নেই জনবল। একই পদে ২৪ জন সিনিয়র নার্স স্টাফের স্থলে আছে মাত্র ৬ জন । মেডওয়াইফ,পরিচ্ছন্নতাকর্মী, সুইপার, টিকেট ক্লার্ক ও নৈশপ্রহরী একজনও নেই। এছাড়া মেডিকেল, টেকনোলজিস্ট, এক্সরে,প্যথলজি ফার্মেসী, ডেন্টাল, এসআই ও ইপিআই ৬ টি পদের মধ্য আছে মাত্র ২ টি। টিকিট ক্লার্ক ২ টি পদ রয়েছে শূন্য। অফিস সহায়ক, আয়া, ওয়ার্ড বয়, প্রত্যেকটি পদে ২ টি জনবলের মধ্যে আছে ১ টি। তবে বাহির থেকে ২ জন স্বেচ্ছাসেবক,ওয়ার্ড বয় ও ২ জন আয়া দিয়ে জোড়াতালী দিয়ে কোন মতে স্বাস্থ্য সেবা চালিয়ে নেওয়ার কথা জানালেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আবু তাহের পাটোয়ারী। টাইফয়েড জরে আক্রান্ত হয়ে আসা ইব্রাহিম খলিল বলেন,কয়েকঘন্টা অপেক্ষা করার পর ডাক্তার দেখাতে না পেরে তিনি প্রাইভেট ক্লিনিকে ফি দিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছেন। শুধু ইব্রাহিম খলিল নয়, তার মত শত-শত রোগী আসেন হাসপাতালে সহজলভ্য সেবা পাওয়ার জন্য। কিন্তু প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না পেয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকের ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে উল্টো রোগ নির্ণয়ের নামে প্রতারিত হতে হচ্ছে। প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে রোগী গেলে নানা পরিক্ষা নিরিক্ষার নামে সর্বশান্ত করে। ফলে গরীব অসহায় দিনমজুর এই মানুষগুলো প্রতারিত হচ্ছে অহরহ। লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুল গাফফার বলেন, এই হাসপাতালের চিকিৎসক ও জনবল সংকটের বিষয়টি প্রতি মাসে চিঠির মাধ্যমে তিনি কর্তৃপক্ষকে জানান। এখন পর্যন্ত এই জেলায় কোন নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবুও তারা চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। কমলনগরের তিন লক্ষাধিক মানুষের দাবী, নদী ভাংগা এই জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবার একমাত্র মাধ্যম এই হাসপাতালটি। দ্রুত এখানে জনবল নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে কার্যকর ভুমিকা রাখতে সংশ্লিষ্টদের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী। 


 

আরও পড়ুন

×