রাণীশংকৈলে ভূমিহীন , ছিন্নমূল ও গৃহহীন মানুষের পুনর্বাসনে এসিল্যান্ড    

রাণীশংকৈলে ভূমিহীন , ছিন্নমূল ও গৃহহীন মানুষের পুনর্বাসনে এসিল্যান্ড    

রাণীশংকৈল উপজেলা ঘনশ্যামপুর গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সদস্য সাথীর বয়স ০৬ বছর। ছোট বেলায় সে তার বাবাকে হারায়। বাবা কিরকম দেখতে ছিল তা ও জানত না। গত ৩০ জুলাই পিতৃহীন, ছিন্নমূল, ভূমিহীন সাথীর পরিবার এক খন্ড খাস জমির দখল বুঝে পেল এসিল্যান্ড সোহাগ চন্দ্র সাহার নিকট হতে। এভাবে ঘনশ্যামপুর গ্রামে খাস পুকুরে প্রস্তাবিত গুচ্ছগ্রামে ৩০ টি দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমিহীন, ছিন্নমূল ও গৃহহীন পরিবার খাস জমির দখল বুঝে নেন। তাদের জন্য ইতোমধ্যে একটি পৃথক গুচ্ছগ্রাম নির্মানের প্রস্তাব পক্রিয়াধীন রয়েছে।একইভাবে পার্শবর্তী অন্য একটি খাস পুকুর পাড়ে মুক্তিযোদ্ধা, ভিক্ষুক ও বৃদ্ধাসহ আর ও ২৫ জন ভূমিহীনকে খাস জমির দখল বুঝিয়ে দেন এসি ল্যান্ড সোহাগ চন্দ্র সাহা । পাশবর্তী মহেষপুর গ্রামে প্রস্তাবিত গুচ্ছগ্রামের খাস পুকুরে ২৩ জন ভূমিহীনকে খাস জমির দখল বুঝিয়ে দেয়া হয় এসিল্যান্ড অফিসের মাধ্যমে।এভাবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহাগ চন্দ্র সাহা রাণীশংকৈল উপজেলায় ৫০০ জনের অধিক ভূমিহীন, ছিন্নমূল ও গৃহহীন মানুষের বাসস্থানের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। গত দুই বছরে প্রায় ২৪০ জন ভূমিহীনকে কবুলিয়ত দলিল সম্পাদন করে দেয়া হয়েছে। তারা গ্রচ্ছগ্রামে ঘর বুঝে পেয়েছে। বিনামূলে টিউবওয়েল ও বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়েছে। সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক প্রশিক্ষণ ও  ্  ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণের মাধ্যমে তারা সাবলম্বী হচ্ছে।ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সক্রিয় উদ্যেগে রাউতনগর গুচ্ছগ্রাম, বাসনাহার গুচ্ছগ্রাম, মানিকাদিঘী গ্রচ্ছগ্রাম, মলানীদিঘী গুচ্ছগ্রাম ও রন্ধনদিঘী গ্রচ্ছগ্রামে সম্পন্ন হয়েছে এবং এসব গ্রচ্ছগ্রামে ২১১ জন ভূমিহীনকে পূনর্বাসন করা হয়েছে।এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার ভূমি জানান “শেখ হাসিনার অবদান, সবার জন্য বাসস্থান” এই মুলমন্ত্র সামনে রেখে রাণীশংকৈল উপজেলার ভূমিহীন, ছিন্নমূল ও গৃহহীন মানুষদের গুচ্ছগ্রাম, আশ্রয়ণ ও সরকারী খাস জমিতে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাণীশংকৈল উপজেলায় প্রায় ৩৪ একর খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে যার অনুমানিক মূল্য ১৪ কোটি টাকা। এসব খাস জমি দীর্ঘদিন প্রভাবশালীদের দখলে ছিল। এসব খাস জমিতে প্রাথমিক ভাবে অন্তত ১০০০ ছিন্নমূল, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্য রয়েছে।  ছিন্নমূল ও ভূমিহীনদের মধ্যে বৃদ্ধা, মহিলা, ভিক্ষুক, অসহায় ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কে পুনর্বাসনের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন এ অর্থবছরে ঘনশ্যামপুর গ্রামে ০২ টি খাস পুকুর, মহেষপুর গ্রামে ০১ টি খাস পুকুর, ব্রক্ষ্মপুর গ্রামে ০১ টি খাস পুকুর, করনাইট গ্রামে ০২ টি ও গরকতগাঁও গ্রামে ০১ করে মোট ০৭ টি পুকুর পাড় উদ্ধার করা হয়। এ ০৭ টি পুকুর পাড়ে মোট ২০ একর জমি উদ্ধার করা হয়। এই সাতটি পুকুর পাড়ে ৩৬০ জন ভূমিহীনকে ইতোমধ্যে পুনর্বাসন করা হয়েছে এর এবং পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া গ্রচ্ছগ্রামের প্রস্তাব প্রেরণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় যে, বহুদিন যাবৎ প্রভাবশালীদের দ্বারা এই পুকুরগুলো দখলে ছিল। এসিল্যান্ড পুকুর পাড়গুলি উদ্ধার করে ভূমিহীনদের পুনর্বাসন কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। এতে করে উপজেলা বহু আশ্রয়হীন ও ভূমিহীন মানুষ নতুন করে ঠিকানা পেয়েছেন। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী আফরিদা বলেন আমরা উপজেলা প্রশাসন ভূমিহীনদের পুনর্বাসনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। এসিল্যান্ড অফিস ভূমিহীন ও ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসনে মুল দায়িত্ব পালন করছে। এদিকে এসিল্যান্ড এর ভূমিহীন পুনর্বাসনের এ উদ্যোগ কে স্বাগত জানিয়েছেন রাণীশংকৈল উপজেলা ও ঠাকুরগাঁও জেলার সুধী মহল।এসিল্যান্ড সোহাগ চন্দ্র সাহা খাস জমি ও খাস পুকুর পাড়গুলি উদ্ধার করে ভূমিহীনদের পুনর্বাসন কার্যক্রমের এ উদ্যোগকে   স্বাগত জানিয়ে রাণীশংকৈল নেকমরদ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক বলেন, ‘সরকারের জমিতে কিছু মানুষ এতোদিন অবৈধভাবে বসবাস করে আসছিল, সরকারের জমি সরকার উদ্ধার করেছে’। অপরদিকে  ঐ উপজেলার সাবেক আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক ও রাতোর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আঃ কাদের বলেন, নেকমরদ বাজারের খাসল্যান্ড সরকার উদ্ধার করেছে। এ এলাকার মানুষ খুব খুশি, কারন কিছু মানুষের সাময়িক কষ্ট হলেও এমনকি তাদের পুর্নবাসনের মাধ্যমে বাজারটিতে অনায়াসে মানুষের চলাফেরা সহজ হয়েছে। আমি এসিল্যান্ডকে অভিনন্দন জানায়।রাণীশংকৈল উপজেলা আ’লীগের ভারঃপ্রাপ্ত সম্পাদক তাজউদ্দীন আহম্মেদ বলেন, সরকারের সম্পদ রাষ্ট্রের সম্পদ রাষ্ট্র উদ্ধার করছে এবং ভূমিহীনদেরকে ইতোমধ্যে পুনর্বাসন করা হয়েছে। বিশেষ করে বাজারের খাসজমি উদ্ধার করা হয়েছে তাতে যারা দীর্ঘদিন দোকান পাট করছে তাদের অংশীদারিত্ব যেন থাকে। রাণীমংকৈল কলেজের অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি রাণীশংকৈলের জমিদার বাড়ি’র খাস ল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে এসিল্যান্ড মহোদয় উদ্ধার করেছেন।এটি একটি রাণীশংকৈলের জন্য উদাহরণ বলতে পারি। একই সাথে ভুমিহীনদের পূর্নবাসন রনণীশংকৈলের একটি ইতিহাস তো বটেই।’ এদিকে উপজেলার বহু আশ্রয়হীন ও ভূমিহীন মানুষ নতুন করে ঠিকানা খুঁজে পেয়ে একজন সৎ অফিসার হিসেবে এসিল্যান্ড সোহাগচন্দ্র সাহা’র দীর্ঘজীবন কামনা করেন।
 

আরও পড়ুন

×