প্রকাশিত: 03/11/2019
ইতিহাস বইতে মুঘল রাজাদের বেশি মহান হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু ভারতীয় হিন্দু রাজাদের সম্পর্কে কিছুই পড়ানো হয় না। অনেকে মনে করে যে মুঘল শাসনের পর ইংরেজ শাসন চলে এসেছিল। এই ধারণাও ভুল ইতিহাস পড়ার ফল। আসলে মুঘল শাসনকে উপড়ে ফেলার পর হিন্দু রাজরা দেশে ধীরে ধীরে ভারতের ইতিহাস পাঠ্য পুস্তক মুঘল রাজাদের কাহিনীতে পরিপূর্ণ। হিন্দু সংস্কৃতির বিকাশ করতে শুরু করেছিল। যার কিছু সময় পর ইংরেজরা ব্যাবসার সূত্রে এসে ভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিল। আজ এমন এক হিন্দু রাজার সম্পর্কে জানাবো যাকে দেখে মুঘলরা কাপতো। সাহসিকতার কারণে ভারতের ইতিহাসে মহারাণ প্রতাপের নাম অমর হয়ে আছে। মহারান প্রতাপ সেই রাজা যিনি মুঘল সম্রাট আকবরের অধীনতা গ্রহণ করেন নি। আকবরের সেনাবাহিনী তার মোকাবিলা করতে না পারায় কয়েকবার পালিয়েও যান তিনি। মহারাণার পিতার নাম ছিল মহারানা উদয় সিংহ এবং মাতার নাম মহারাণী জশবন্ত বাই। প্রতাপ ছিলেন তাঁর পরিবারের বড় সন্তান। উনার শৈশবের নাম কিকা ছিল। শৈশব থেকেই মহারাণা প্রতাপ সাহসী ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। সাধারণ শিক্ষার চেয়ে খেলাধুলা ও অস্ত্রশস্ত্র তৈরির শিল্প শেখার প্রতি তাঁর আগ্রহ বেশি ছিল। তিনি সম্পদের চেয়ে শ্রদ্ধার প্রতি বেশি যতœশীল ছিলেন। মুঘল দরবারের কবি আবদুর রহমান তাঁর সম্পর্কে লিখেছিলেন, “এই পৃথিবীতে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।” সম্পদ শেষ হয়ে যাবে তবে একজন মহান ব্যক্তির গুণাবলী সর্বদা জীবিত থাকবে। তিনি হলেন মহারানা প্রতাপ।” আকবর মহারান প্রতাপকে মেবাড় রাজ্যের পরিবর্তে অর্ধেক হিন্দুস্তান দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মহারান প্রতাপ রাজি হননি। মহারানা প্রতাপ প্রায় ৭ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা ছিলেন। এবং তিনি প্রায় ১১০ কেজির কবচ পরতেন, কিছু ভিত্তিতে যে কোনও বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন। তাঁর কবচ ও তরোয়ালগুলি রাজস্থানের উদয়পুরের একটি যাদুঘরে সংরক্ষিত। মহারাণাকে ভারতের প্রথম মুক্তিযোদ্ধাও বলা হয়, কারণ তিনি কখনই আকবরের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। তিনিই একমাত্র রাজপুত যোদ্ধা ছিলেন যিনি আকবরের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করার সাহস দেখিয়েছিলেন। আকবর ১৫৭৬ সালে মহারাণা প্রতাপের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেন। মোগল সেনাবাহিনীর ২ লক্ষ সৈন্য ছিল, আর রাজপুত ছিল মাত্র ২২ হাজার। এই যুদ্ধে মহারাণা, গেরিলা যুদ্ধের কৌশল গ্রহণ করেছিলেন। ১৫৮২ সালে, দেওয়ারের যুদ্ধে মহারাণা প্রতাপের সেনাবাহিনী মোগল দের পরাজিত করার পর চিতোর ছাড়া মেওয়ারের বেশিরভাগ ভূমির উপর দখল করেছিল। আকবর তাকে পরাস্ত করার জন্য সমস্ত কৌশল অবলম্বন করেছিলেন, কিন্তু মহারানা শেষ অবধি অভিজিত ছিলেন। একবার আবদুল রহিম খান-ই-খানা মোগল অফিসারের সাথে মহারাণ প্রতাপের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছিলেন। তাঁর শিবিরের সমস্ত মহিলাকে কারাগারে নিয়েছিলেন মহারানার পুত্র অমর সিং। অমর সিং তাদেরকে ধরে মহারানার সামনে এনেছিলেন। মহারানা তৎক্ষণাত্ তাঁর পুত্রকে আদেশ করেছিলেন যে সমস্ত মহিলাকে যেন নিরাপদ ভাবে তাদের শিবিরে ফিরে যেতে পারেন। কারণ মহিলাদের প্রচ- শ্রদ্ধা করতেন মহারান প্রতাপ মহারানা প্রতাপের সময়ে দিল্লিতে মুঘল শাসক আকবরের রাজত্ব ছিল। আকবরের রাজত্বকালে রাজপুত রাজাদের মধ্যে একমাত্র মহারানা প্রতাপ ছিলেন যিনি মুঘল সম্রাটের দাসত্ব পছন্দ করতেন না। এই কারণেই আমেরের মানসিংহের সাথে উনার বিচ্ছেদ হয়েছিল, যার ফলস্বরূপ মানসিংহের প্ররোচনাতে আকবর নিজেই মানসিংহ এবং সেলিমের (জাহাঙ্গীর) সভাপতিত্বে মেওয়ারকে আক্রমণ করার জন্য একটি বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন। ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুন, রাজা মানসিংহ এবং আমের আসফ খানের নেতৃত্বে মোগল সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য প্রেরণ করা হয়। ই যুদ্ধটি হলদিঘাটির যুদ্ধ হিসাবে পরিচিত। ‘হলদিঘাটির যুদ্ধ’ ভারতের ইতিহাসে বিখ্যাত। এই যুদ্ধে, মহারাণা প্রতাপের যুদ্ধ-কৌশল ছিল গোরিলা যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আকবর বা রানা দুজনই পরাজিত হননি। মোঘলদের কাছে সৈন ক্তি বেশি ছিল এবং রানা প্রতাপের যুদ্ধকৌশমূলক শক্তির অভাব ছিল না। প্রতাপ শেষ সময় অবধি আকবরের সাথে চুক্তি স্বীকার করেন নি এবং সম্মানের সাথে হলদিঘাঁটির যুদ্ধের পর অক্টোবোর ১৫৮২ সালে হয় দিবের যুদ্ধে। এই যুদ্ধ সম্পর্কে ইতিহাস বইতে থুব কম লেখা থাকে। বিজয়া দশমীর দিন শুরু হয় ভীষণ যুদ্ধ। মা দুর্গার আশীর্বাদ নিয়ে মা ভবানীকে স্মরণ করে শুরু হয় মুঘল বিনাশের পর্ব। মহারান প্রতাপের ছেলে অমর সিং তারা ভাল মুঘল সেনাপতির উপর এত শক্তির সাথে ছোড়েন যে ঘোড়া সহ সেনাপতির বুক চিঁরে ভাল মাটিতে গেঁথে যায়। অন্যদিকে মুঘলদের নেতৃত্বকারী বেহলল খানকে ঘোড়া সমেত দু-টুকরো করে দেন মহারান প্রতাপ। ভারতের ইতিহাসে যতটা মহারাণ প্রতাপের সাহসীতার প্রশংসা করা হয় ততটাই প্রশংসা তার রস কবিতা ‘চেতকের বীরত্বে’ সেখানে চেতকের খুব প্রশংসা করা হয়েছে। হলদিঘাটির যুদ্ধে চেতক আকবরের সেনাপতি মানসিংহের হাতির মাথার উঁচুতে ইগলের মতো লাফিয়ে উঠেছিল। আর তখন মহারানা প্রতাপ মানসিংহে উপর ভালা ছুঁড়ে আক্রমণ করেছিলেন। হলদিঘাঁটি যুদ্ধতে মুঘল সেনাবাহিনী যখন মহারানার পিছনে ছিল, তখন চেতক প্রতাপকে পিঠে বহন করে প্রায় ২৭ ফুট দীর্ঘ নালা পার করেছিল, যা মুঘল সেনাবাহিনীর কোনও অশ্বারোহী অতিক্রম করতে পারেনি। প্রতাপের সাথে যুদ্ধে চেতকও আহত হয়েছিল ও সে বীরগতি প্রাপ্ত করেছিল।