প্রকাশিত: 06/08/2020
১৯৮৩ সালে আমি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে শিক্ষকতা পেশা পরিত্যাগ করে সৌদি আরবে গমণ করি। সেখানে দীর্ঘ দিন থাকার সুবাদে বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে চলা, পরিচয় ও কাজকর্ম করতে হয়েছিল। কোন কোন সময় ভিন দেশের মানুষের সাথে স্বাভাবিক ভাবে পরিচয, বন্ধুত্ব গড়ে উঠে, বন্ধুত্ব সম্পর্ক বজায় রেখে চলাফেরা করতে হয়। অথবা আপন স্বার্থসিদ্ধি বা রক্ষার্থে সম্পর্ক রাখতে হয়।ঠিক এভাবে চলতে গিয়ে একজন পাকিস্তানির সাথে আমার পরিচয় চলার পথে স্বাভাবিক ভাবে।পরিচয়ের গল্পটি বলার লোভ এ মুহুর্তে সংবরণ করতে পারিনি বলে এখানে তুলে ধরতে চাই। তাহলে গল্পটি বলা শুরু করি।
১৯৮৭ সালে আমার বাসস্থান থেকে প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার দুরে একটি কাজ রাখি। কাজটি সমাপ্ত করতে বেশ ক’দিন সময় লাগবে। তাই যাওয়া আসার ক্ষেত্রে গাড়ির প্রয়োজন। অনতি দুরের একটি বাসায় পরিবার পরিজন নিয়ে একজন পাকিস্তানি বসবাস করে।তার গাড়ি আছে এবং ভাড়ায় গাড়ি চালায়। সুতরাং আমি তার সরনাপন্ন হয়ে যে ক’দিন কাজ হবে, সে ক’দিন আমাকে সকালে নিয়ে যাবে এবং বিকালে গিয়ে নিয়ে আসবে।আমি চুক্তি করে নিলাম তাকে। দু’দিন এভাবে আসা যাওয়ার পর একদিন পাকিস্তানি কথা প্রসঙ্গে আমাকে জিঙ্গেস করে বাংলাদেশের কোন জেলার আমি অধিবাসী? আমার বসবাসের জেলার নাম বলেই আমি তাকে পাল্টা প্রশ্ন করি, তুমি কি চেন এবং কি ভাবে চেন ইত্যাদি? তখন সে বলে গেল ইতিবৃত্ত। অর্থ্যাৎ সে ১৯৭১ সালের পূর্ব থেকে বাংলাদেশে ছিল এবং সে যুদ্ধ করেছে। বেশ কয়েকটি জেলায় গিয়েছে এবং সবই তার চেনা-জানা একজন সৈনিক হিসাবে। অত:পর শুরু হল আমাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক, বাক-বিতন্ডা, প্রশ্নোত্তর ও যুক্তিতর্ক।
পাকিস্তানি তার স্বপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করতে থাকলেও আমি তা জোরালো ভাবে প্রত্যাখান , খন্ডন করে যাচিছ। কোন যুক্তি আংশিক মেনে নিলেও কোন যুক্তি উপস্থাপনে ছিল তার গলাবাজি, গায়ের জোরে প্রতিষ্টা করার ইচ্ছা, চাপাবাজির প্রচেষ্টা,ধ্যান-ধারণা। এক সময় প্রশ্ন এসে দাড়ায় বাংলা ভাষার কথায়। সে বলছিল বাংলা ভাষা মুষ্টিমেয় জনসংখ্যার ভাষা হিসাবে। আমি যতই যুক্তির উপস্থাপনা করছিলাম। তা সে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চাইলে আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সহিত তার সাথে কথা বলতে শুরু করি এবং প্রমাণ আমি দিতে পারলে সে মেনে নেবে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হই। সেদিন আমি তাকে নিয়ে আসি আমার বাসায় প্রমাণ দিতে।
কয়েকদিন পূর্বে আমি এক সৌদি দোকান থেকে এক প্যাকেট বিস্কুট কিনে এনেছিলাম। ঐ বিস্কুট প্যাকেটের অভ্যন্তরে আমি একটি মিনি বুকলেট পাই ইংরেজি ভাষায় লিখিত শিশুদের উপযোগি কিছু সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কিত কথামালা। বইটির এক জায়গায় পৃথিবীর শ্রেষ্ট ভাষার একটি তালিকা সংযুক্ত ছিল ক্রমানুসারে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় এভাবে সাজানো।তালিকার পঞ্চম স্থানে ছিল বাংলা ভাষার ক্রম। আমার নিকট বইটি ছিল রক্ষিত। সুতরাং উক্ত বইটি বের করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে তাকে দেখিয়ে দিলাম এবং দ্বাদশতম স্থানের উল্লেখ থাকার মধ্যে ও উর্দু ভাষার স্থান নেই দেখিয়ে দেবার পর সে মেনে নিতে বাধ্য হল বাংলা একটি উল্লেখযোগ্য ভাষা হিসাবে। তখনই আমি তার সম্মুখে উচ্চসিত কণ্ঠে গেয়ে উঠি, “ বাংলা আমার মায়ের ভাষা, বাংলা আমার প্রাণের ভাষা, আ-মরি বাংলা ভাষা”, বাংলা আমার দেশ, আমি বাঙ্গালী, বাংলায় কথা বলি। নেতা আমার ভাসানি, শেখ মুজিব।
লেখক মিজানুর রহমান মিজান , সম্পাদক দীপ্তি, সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব, বিশ্বনাথ, সিলেট।