প্রকাশিত: 08/07/2021
১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর বন্দী শিবিরে আলহাজ্জ্ব ছমরু মিয়া
মিজানুর রহমান মিজান
হযরত শাহজালাল(র:)ও শাহ পরান(র’র দেশ বৃহত্তর সিলেট।যে কারনে সিলেটের আরেক নাম আধ্যাত্বিক রাজধানী নামে খ্যাতি লাভ করে।এ সিলেটেরই পার্শ্ববর্তী একটি উপজেলা হচ্ছে প্রবাসী অধ্যুষিত ধনে জনে আলোকিত বিশ্বনাথ উপজেলা। যেখানে জন্ম গ্রহণ করেছেন হাছন রাজা,ড. অরুপ রতন চৌধুরী, মুসলিম সাহিত্য সংসদের প্রাণ পুরুষ নুরুল হক,বিশিষ্ট আইনজীবি শাহদীন মালিক, মাওলানা গোলাম হোসেন (র:), মাওলানা আশরাফ আলী (র:)গং প্রমুখ।যাঁরা দেশে বিদেশে বিশ্বনাথের আলোকবর্তিকা হয়ে আলো ছড়িয়ে বিশ্বনাথকে করেছেন আলোকিত এবং বিশ্বনাথবাসী হয়েছেন আনন্দিত ও গর্বিত।বিশ্বনাথের অন্তর্ভুক্ত একটি ইউনিয়নের নাম হচ্ছে খাজাঞ্চি ইউনিয়ন। যার আরেকটি খ্যাতি বা নাম রয়েছে সর্বত্র প্রচার কৌডিয়া নামে। কেীডিয়া একটি পরগণার নাম হলেও অদ্যাবধি যাঁর গুণের কারনে কেীডিয়া নামকরণ সার্থকতা পেয়েছে বেশী বা পরিচিতির ক্ষেত্রে নামটি উজ্জ্বল আলোয় দীপ্তমান, তিনি হচ্ছেন মাওলানা আব্বাস আলী(র:)এর সুযোগ্য উত্তরসুরী হাফিজ আব্দুল করিম (র:) কেীডিয়ার খ্যাতি।কেীডিয়ার ছাব বলতেই এসে যায় তিনির নাম। সহজে যে কেউ পরিচিত হন কেীডিয়ার পরিচিতি বা অবস্থানের ক্ষেত্রে।এখানে জন্ম গ্রহণ করে আরো আলো ছডিয়ে যাঁরা হয়েছেন সুখ্যাতির অধিকারী, তাঁরা হচ্ছেন মাওলানা ইজ্জত উল্লাহ (র:),মাওলানা আব্দুছ ছালাম (র:), মুফতি আব্দুল খালিক (র:),সিনিয়র রেঞ্জার আব্দুর রহিম,শহীদ সোলেমান, মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার আব্দুন নুর প্রমুখ।খাজঞ্চিবাসী এ সকল কীর্তিমানদের গৌরবে গৌরবান্বিত হয়েছেন।কীর্তিমানদের পদাংক অনুস্মরণ করে আরো অনেকে হয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলোকিত, রেখেছেন অবদান, এগিয়ে যাচ্ছেন আলোর দিশারী হতে।এ ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আমার আজকের এ লিখার অবতারনা্।
খাজাঞ্চি ইউনিয়নের সবুজ শ্যামল পাখি ডাকা একটি গ্রামের নাম ঘাসি গাঁও। গ্রামটি সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থান ছিল। গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে সিলেট-ছাতক রেললাইন।কিন্তু কালের পরিক্রমায় এবং সুরমা নদীর ভাঙ্গনরোধে সুরমা নদীর গতিপথে আনা হয়েছে পরিবর্তন।পরিবর্তনের ফলে সুরমা নদীর বহতা আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ঐ অংশে। তাই বর্তমান প্রজন্ম বা ভবিষ্যত প্রজন্ম অজ্ঞাতই থেকে যাবে যে এক সময় ঘাসি গাঁও ছিল সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ের একটি সবুজ শ্যামল গ্রাম।এ গ্রামেরই একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৩৫ সালের দশ জুলাই আলহাজ ছমরু মিয়া।তিনির পিতার নাম ছিল সোনা মিয়া ও মাতার নাম ছিল মসতুরা বিবি।সোনা মিয়ার তিন ছেলের মধ্যে আলহাজ ছমরু মিয়া ছিলেন সবার বড়।আমরা সবাই আমাদের পিতা মাতার সংমিশ্রণে মায়ের গর্ভে লালিত পালিত হয়ে এ পৃথিবীতে করি আগমন। আগমনের প্রাথমিক সময়কে বলা হয় শিশুকাল।এ সময় কেহ কথাবার্তা বলতে পারি না।শিশুটি যখন কান্নাকাটি করে তখন বুঝতে পারি যে সে দুধ পান করার জন্য কাঁদছে। তারপর শুরু হয় শৈশবকাল। আস্তে আস্তে কথা বলতে শিখি এবং লঘু পাক খাবার খেতে অভ্যস্ততা শুরু হয়। আলহাজ ছমরু মিয়ার শৈশবকাল কাটে পিতৃ-মাতৃ কোলে নিজ বশত বাড়িতে। আগেকার দিনে প্রথমে পাঠানো হত মক্তবে আরবী শিক্ষা গ্রহণের নিমিত্তে। কায়দা, ছিপারা ও কোরআন শিক্ষার জন্য। অত:পর প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের জন্য বিদ্যালয়ে। এ শিক্ষা-দীক্ষা মানব জীবনের প্রাথমিক সুচনা। শিক্ষার ফলেই তাঁর ভবিষ্যত ভাগ্য হত নির্ধারিত, নিয়ন্ত্রিত ও সৌভাগ্য অর্জনের ছিল পথ নির্মাতা।প্রাথমিক অবস্থাতেই সে জন্য ছেলেমেয়েদের প্রতি একটু বেশী নজরদারী করা উচিত বলে মনে করতেন তখনকার অভিভাবকরা।যাতে করে সুচরিত্রের অধিকারী হয়ে উঠে সন্তান। নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করতে থাকতেন সচেতন।“পড়ার সময় পড়া, খেলার সময় খেলা” এ রীতিনীতিতে অভ্যস্থ করতে সচেষ্টতা ছিল বিদ্যমান।চরিত্র এক অমুল্য সম্পদ।আলহাজ ছমরু মিয়া লেখাপড়ার প্রতি একটু মনোযোগি ছিলেন বলে মেট্রিক পাশ করে পিতার সহিত সহায়তার মানসে কৃষি কাজে জড়িয়ে পড়েন।কিন্তু তিনির মন প্রাণ ছিল, “ এখানে নয় অন্যখানে”।তাই ১৯৫৬সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সৈনিক (ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) পদে যোগদান করেন।কিছুদিন ট্রেনিং দেন। কিন্তু তিনির পিতা এ কাজে পুত্রকে নিয়োজিত রাখার পক্ষপাতি ছিলেন না এবং তখনকার দিনে অনেক অভিভাবক ছেলেকে সামরিক বাহিনীতে নিয়োজিত করলে আর পুত্রকে পাবেন না এ অভিধায় ছিলেন আসক্ত।অনেক পরিবারের অভিভাবক থাকতেন বড় ছেলের প্রতি ভালবাসার মোহে প্রবল অন্ধ বা প্রবল ভালবাসার বহি:প্রকাশ।তাই কান্নাকাটি করে চাকুরীতে ইস্তফা প্রদান করে আসতে বাধ্য করেন। উৎসাহের সহিত গ্রহণ করলে অতি অল্প বিদ্যাও এক সময় বা কখন ও কখন ও এত শক্তি অর্জন করে যে, তা সর্বাপেক্ষা সম্মানিত বিদ্যাকে পরিপূর্ণ করে তোলে।এ কথাটি বলার কারন আমার অনুমিত হয়েছে তিনির আচার-আচরন,কথাবার্তা, চলাফেরা , সামাজিকতা, শালীনতা, নৈতিকতা ও মার্জিত রুচিবোধ দর্শনে।তাহলে তা নিম্নে প্রকাশ করা আবশ্যক বলে মনে করি।
আমি যখন হাই স্কুলে লেখাপড়া করি। তখন থেকে তিনিকে চিনতাম।স্কুলের অনতি দুরে তিনির বাড়ির অবস্থান ছিল এবং অনেক সময় তিনি স্কুলে বা স্কুলের পাশ দিয়ে চলাফেরা করতেন। তাছাড়া তিনি উপজেলা সদর বিশ্বনাথ যেতে প্রায়ই আমার বাড়ির পাশ দিয়ে বহমান রাস্তা ধরে আসা-যাওয়া করতেন।আর এ রাস্তাটি উপজেলা সদরের সহিত যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা ছিল তখনকার দিনে। অপরদিকে আমার মামার বাড়ি ছিল তিনির পার্শ্ববর্তী গ্রাম।আমি মামার বাড়ি যাবার সময় প্রতিবার তিনির বাড়ির পাশ দিয়ে যেতাম।ছাত্র জীবনে আমি লেখাপড়ায় মেধাবী ছিলাম বরাবরই।সেজন্য তিনি আমাকে আদরমাখা সুললিত কণ্ঠে করতেন আহবান, সম্মোধন বা কোশলাদি বিনিময়, যেন যাদুযুক্ত বাক্যবানে করতেন মুগ্ধ ও প্রীত।আমিও তিনিকে অত্যন্ত সমীহ, শ্রদ্ধা, ভক্তি নিয়ে সম্মান প্রদর্শন করতাম। অপরদিকে আমার পিতা ছিলেন তখনকার সময়ের একজন বিশিষ্ট বাউল শিল্পী।আমার বাবার সহিত ও তিনির একটি সুসম্পর্ক ছিল।আমি দশম শ্রেণীতে পাঠরত ছিলাম ১৯৭৬ সালে।এ বৎসর বাংলাদেশ সরকার ইউনিয়ন পরিষদে ভাইস-চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করেন এবং নির্বাচনও হয়। সেই নির্বাচনে তরুণ ছমরু মিয়া তরবারী প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন। তিনির প্রতিবেশী তিনজন ছিলেন আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক।পরম শ্রদ্ধাভাজন ও আমার সুপ্রিয় শিক্ষক মরহুম আলতাফুর রহমান ছমরু মিয়ার নির্বাচনী পোষ্টারে স্কুলের কয়েকজন ছাত্রের নাম পোস্টারের নীচে দিয়েছিলেন প্রচারনায় বলে আমার এ বিষয়টি আজো স্পষ্ট মনে আছে।তিনির পুরো মেয়াদকাল অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সহিত দায়িত্ব পালন করেন।ভাইস-চেয়ারম্যান পদটি এই এক টার্মই ছিল বহাল। অত:পর তা হয়ে যায় বিলুপ্ত।১৯৮০ সালে আমি পঠিত হাই স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করি।তিনির প্রথম পুত্র হয়ে যায় আমার ছাত্র। সে সুবাদেও তিনির সহিত আমার আত্বীয়তা সম্পর্ক না হলেও আমার অত্যন্ত একটি ঘনিষ্ট হৃদ্যতা পূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে।তিনি ছিলেন আমার একজন সুহৃদ স্বজ্জন অভিভাবক তুল্য।আলহাজ ছমরু মিয়া একজন সুদর্শন, সুঠাম দেহের অধিকারী ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন নিরহংকারী, সদালাপী, হাসোজ্জ্বল বন্ধু বৎসল, সমাজ সেবক ও খাঁটি দেশপ্রেমিক মানুষ ছিলেন।বঙ্গবন্ধুর ডাকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সংগঠকের ভুমিকায় হন নিবেদিত।
বাড়িতে এসে পিতার সহিত অন্যান্য ভাইদের সাথে নিয়ে হয়ে উঠেন সাংসারিক। কিন্তু শুধু সংসার ও কাজ নিয়েই তিনি ব্যস্ত ছিলেন না। এক সময় হয়ে উঠেন জনস্বাস্থ্য বিভাগের খাজাঞ্চি ইউনিয়নের টিউবওয়েল মেকানিক। বেশ কিছুদিন তিনি এ কাজে ছিলেন নিয়োজিত।অন্যদিকে তিনি ১৯৬৮ সালে রাজা গঞ্জ বাজারে (চৌধুরী বাজার)তিন শতক ভুমি ক্রয় করেন রাইছ মিল স্থাপনের উদ্দেশ্যে। প্রায় দু’বৎসর পর তা বিক্রি করেন পারিবারিক অসুবিধা হেতু।পাশাপাশী তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সহিত জড়িয়ে পড়েন। হয়ে যান একজন সংগঠক ও কর্মী।আসে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন।একজন কর্মী হিসাবে অন্যান্য নেতাদের সহিত চষে বেড়ান ইউনিয়নের সর্বত্র।বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ একক সংখ্যা গরিষ্টতা অর্জন করলেও জল্লাদ ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর না করে সময়ক্ষেপন করে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের কালো রাত্রিতে নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর লেলিয়ে দেয় সশস্ত্র পাকসেনাদের। শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ।
১৯৭১ সালের ২৬ শে এপ্রিল সন্ধ্যার পরক্ষণেই পাকবাহিনীর হাতে ধৃত হন ইউনিয়নের অন্য চারজনের সহিত আলহাজ ছমরু মিয়া।সে চারজনের পরিচিতি এখানে উল্লেখ করা বাঞ্জনীয় মনে করি।সংক্ষেপে তাদের পরিচিতি প্রদান করছি পাঠক আপনাদের ধৈযর্চ্যুতির আশংকায়।তখনকার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতা মরহুম লিলু মিয়া পাহাড় পুর, মরহুম ডা: আব্দুল করিম নুর পুর, মরহুম মজম্মিল আলী (আওয়ামীলীগের একজন সাধারণ সদস্য)গমরাগোল ও রন দাস সিলেট শহরের বাসিন্দা।রন দাস শহর ছেড়ে এসেছিলেন আত্বীয় বাড়ি পাকবাহিনীর ভয়ে নিরাপত্তা জনিত কারনে। কিন্তু প্রবাদ আছে, “ যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত হয়”।রন দাসের ক্ষেত্রে ঘটেছিল তাই।আলহাজ ছমরু মিয়াকে পাকবাহিনী ধরে ছিল আওয়ামীলীগ নেতা এবং তিনি ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য পদ থেকে ইস্তফা প্রদানকারী হিসাবে।তাদেরকে নিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছিল সিলেট ক্যাডেট কলেজে পাকবাহিনীর সিলেট হেড কোয়ার্টারে।তাদের সম্মুখ দিয়ে অনেককে আনা হয়েছে চোখ বেঁধে, নেয়া হয়েছে অন্যত্র।পরিনতি রয়েছে অজানা, অজ্ঞাত।হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দী হয়ে বিভিন্ন নিযার্তনের ষ্টীম রোলার সহ্য করে , দু:খ , কষ্ট , বেদনাকে অনিচ্ছার ইচ্ছায় একান্ত সঙ্গী ভেবে নেন অনিশ্চয়তার মধ্যে। তাদেরকে কয়দিন পর পরই করা হত জিজ্ঞাসাবাদ এর নামে নির্যাতন। সময়ে অসময়ে ডাক পড়ত পাঁচ বন্দীর অস্ত্র, গোলা-বারুদ বহনের শ্রমিক হিসাবে। আহত পাক সেনাদের চিকিৎসার্থে রক্তের গ্রুপ মিলিয়ে নেয়া হত পাঁচ তরুণের শরীরের সবচেয়ে মুল্যবান উপাদান রক্ত যখন তখন। ওদের সময় ব্যয়িত হয়েছে শংকা, উদ্বেগ, উৎকন্ঠায়।কখন জানি কি হয়?মৃত্যু ভয় ছায়ার ন্যায় রয়েছে সঙ্গী , সাথী হয়ে। আপনজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ হবে কি না আদৌ ছিল ধারণা বহির্ভুত।এদিকে স্বজনরা ছিলেন হতাশায় নিমগ্ন বেঁচে আছেন কি না, বা কোথায় , কি ভাবে রয়েছে তা অজানা শংকার ভয়ে বিহব্বল।এ দু:শ্চিন্তার পরিমান করা বড্ড কষ্টসাধ্য।এতসব শংকার অবসান ঘটিয়ে অক্টোবরের এক সন্ধ্যায় চারজন আসেন আপন নিবাসে ফিরে। টিক্কা খানের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতাধীন এ মুক্তি।নিরাশায় আশার আলো। সবাই আনন্দে আত্মহারা। এ আবেগ শুধু কল্পনা করা যায়। বলা বড্ড কঠিন।কিন্তু ছমরু মিয়া মুক্তি পাননি ঐ চারজনের সঙ্গে।তিনিকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।তিনি ফিরে আসেন ১৭ ডিসেম্বর বিজয়ের একদিন পর।বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে।বন্দী জীবনের একেকজন নিরব সাক্ষী বুকের ভিতর পাথরসম বোঝা বয়ে হয়েছেন মৃত্যু মুখে পতিত।কেহ নেয়নি খবর, রাখেনি খোজ। কারন ওরা মুক্তিযোদ্ধ করেনি হাতে অস্ত্র তোলে , প্রশিক্ষিত হয়ে। আবার হানাদার বাহিনীর সহযোগিতার খাতায় নাম লেখায়নি কখনও দোসর সেজে।তবে বাংলাদেশের লাল পতাকা, স্বাধীনতা অর্জনের প্রাক্কালে এ দেশের একজন নাগরিক হিসাবে বন্দীত্ব জীবন কাটাতে হয়েছে পাক হানাদারদের হাতে এ এক চরম সত্য কথন।জানি না কোন অভিধার অন্তর্ভুক্ত তাদের এ দু:সহ বেদনা বিধুরতা।
আলহাজ্জ ছমরু মিয়া ধৃত হন দুই সন্তানের জনক হিসাবে।তিনি রেখে গেছেন ছয় পুত্র ও এক কন্যা সন্তান।বড় তিন ছেলে মোস্তাক আহমদ, মুনসুর আলম ও জালাল উদ্দিন বর্তমানে দেশে বসবাস করছেন।অপর তিন পুত্র সন্তান আশরাফ উদ্দিন, আফসার আহমদ ও আনছার আহমদসহ এক মাত্র কন্যা সন্তান লাভলী বেগম স্বামী সন্তান নিয়ে লন্ডনে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন।আলহাজ্জ ছমরু মিয়া পৃথিবীর মায়া ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ২২শে সেপ্টেম্বর ২০০০ সালে। আমি মহান আল্লাহর দরবারে তিনির আত্মার মাগফেরাত ও জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দানের প্রার্থনা করি নিরন্তর।
লেখক- মিজানুর রহমান মিজান সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব,বিশ্বনাথ, সিলেট।