শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেলের শুভ জন্মদিন আজ

শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেলের শুভ জন্মদিন আজ

আজ  হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে ও দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভায় শেখ রাসেলের শুভ জন্মদিন

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে ও দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভায় শেখ রাসেলের শুভ জন্মদিনে তাকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও দেশের সকল জনগনের পক্ষ থেকে অফুরন্ত ভালবাসা। ঘাতকদের গুলিতে নিহত নিস্পাপ, নম্র ভদ্র, শান্তশিষ্ট সভাবের ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

                                             

অক্টোবর ১৯৬৪ সালের ১৮ তারিখে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনে শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন নেসার কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল জন্মগ্রহন করেন। মা ফজিলাতুন নেসা বুজিব বই পড়তে ভালবাসতেন এবং ইংরেজ দার্শনিক বাট্রান্ড রাসেলের খুব ভক্ত ছিলেন। তাই তিনি তার ছোট ছেলের নাম রাখেন রাসেল।  পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শেখ রাসেল ছিলেন সবার ছোট। অন্যদের মধ্যে আন্তর্জাতিক ভাবে সম্মানিত ও শক্তিশালী, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়, মাদার অব হিউমেনিটি

খেতাব সহ জাতিসংঘ থেকে অসংখ্য পুরষ্কার প্রাপ্ত দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম এবং ১৯৭১সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তি বাহইনীর অন্যতম সংগঠক শেখ কামাল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা শেখ জামাল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ শেখ রেহানা।

শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো ৫৫ বছর। ঘাতকরা তাকে বাঁচতে দেয়নি। রাসেলের একটি কথা আমাদের কানে খুব বাজে, সে বলেছিল- আমাকে মেরোনা, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি হাসু আপার কাছে চলে যাব। তার আকুতি ঘাতকদের মনকে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলেনি। আমাদের খুব জানতে ইচ্ছে করে খুনিদের শিশুকালকাল কেমন ছিল!  শেখ রাসেলের সেই হাসু আপা আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তার বোন শেখ রেহানা অন্যতম রাজনীতিবিদ এবং তারা বিশ্ব রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর। সেই হাসু আপা তাকে নিয়ে লিখেছেন, চমৎকার ঝরঝরে লেখা ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ বইটি।

শেখ রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র ছিলেন। শেখ রাসেলের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র প্রতিষ্ঠা করা হয়, এটি বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল ক্লাব। ১৯৯৫ সালে পাইওনিয়ার ফুটবল লীগ খেলার মাধ্যমে এটির যাত্রা শুরু করে। রাসেলের ছোটকাল কেটেছে বাবাকে ছাড়াই। কারন তার বাবা রাজনৈতিক বন্দী হয়ে কারাগারে ছিলেন দীর্ঘদিন। বাবাকে দেখতে না পেয়ে মা ফজিলাতুন নেসা মুজিবকে আব্বা বলে সম্বোধন করতেন। কারাগারে ‘রোজনামচা’ বইয়ে বঙ্গবন্ধু অসংখ্যবার রাসেলের কথা তুলে ধরেছেন এবং তার নিকট ছোট্র সন্তান রাসেল খুব প্রিয় ছিল সেটিও ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি রাসেলকে সময় দিতে না পেরে মাঝে মাঝে নিজেকে বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতেন।

রাসেলের জন্মের সময় বঙ্গবন্ধু ছিলেন চট্টগ্রামে। রাসেলের জন্মটি পরিবারের সকলের কাছে ভিন্ন আনন্দের মাত্রা প্রদান করে। রাসেলের জন্মের সাথে সাথে বড় ভাইবোনদের সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে রাসেলের পরিচর্যায়। রাসেলের যা যা ভালো লাগে সেগুলো কিংবা সে বিষয়গুলি সবাই করার চেষ্টা করতেন। রাসেলের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিতেন বঙ্গবন্ধু। সভা-সমাবেশ করে ফিরতে রাত হলেও রাসেলকে ঘুমের মধ্যে আদর করতেন শেখ মুজিব। জন্মালগ্ন থেকেই রাসেল ছিল চঞ্চল প্রকৃতির। সারাবাড়ি সবসময় মাথায় তুলে রাখত। তবে রাসেলের দুর্ভাগ্য বাবাকে খুব বেশি কাছে পায়নি।

১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনের পর থেকেই রাজবন্দী হিসেবে জেলে ছিলেন রাসেলের বাবা। কারাগারে দেখা করার সময় রাসেল কিছুতেই তার বাবাকে রেখে আসবে না। এ কারণেই তার মন খারাপ থাকতো। পরিবারের সকলেই চাইতো রাসেলের মন যেন কোন কারণে খারাপ না হয়। রাসেলের আম্মা রাসেলকে একটা তিন চাকার সাইকেল কিনে দিয়েছিল। এবং সাইকেলটি রাসেলের খুব প্রিয় ছিল ও সর্বক্ষণ খেলাধূলায় ব্যস্ত থাকতো।

রাসেলের চরিত্রে আভিজাত্যের ছোঁয়া ছিল, গাম্ভীর্যতাও লক্ষ্য করা গেছে। পরিস্থিতি এবং সময়ের দাবি মিটিয়ে রাসেল তাল মিলিয়ে চলেছেন। বাড়িতে দুষ্টুমি করত সবসময়, কিন্তু রাষ্ট্রীয় সফরে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন সর্বদাই। অনুষ্ঠান এবং পরিস্থিতির সাথে মিল রেখেই পোশাক পরিধান করতেন ছোট্ট শিশু রাসেল। সচরাচর প্রিন্স কোট, সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী ও মুজিবকোট পরত রাসেল। বঙ্গবন্ধুর পোশাক পরিধানেও মাঝে মধ্যেও নজরদারি করতেন ছোট্ট শেখ রাসেল।

শেখ রেহানার বর্ণনামতে জানা যায়, একবার বঙ্গবন্ধু বন্যার্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন সে সময়ে বঙ্গবন্ধুর পোশাক, পায়ের স্যান্ডেল কী হবে ঠিক করে দিয়েছিলেন শেখ রাসেল। পরিবারের অন্যদের ভাল-মন্দের বিষয়ে নজরদারি করতেন শেখ রাসেল।

রাসেল ৪ বছর বয়সে প্রথমে স্কুলে যাওয়া শুরু করে। প্রথম দিকে পরিবারের কাউকে না কাউকে স্কুলে দিয়ে আসতে হত। ধীরে ধীরে নিজেই আগ্রহ নিয়ে স্কুলে যেত এবং স্কুলে তার বেশ কিছু বন্ধুও জুটেছিল। বন্ধুবৎসল ছিল রাসেল। পর্যায়ক্রমে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে উঠে রাসেল। নিজেই পড়তে বসত এবং স্কুলে একাই যেত।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে শেখ রাসেলের জন্য একজন গৃহশিক্ষিকা রাখা হয়। শেখ হাসিনার বরাতে জানা যায়, শিক্ষিকাকে খুব সম্মান করতেন শেখ রাসেল। খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিল তাই শিক্ষককে রাসেলের কথা শুনতে হত নইলে সে পড়াশোনায় মনোযোগী হত না। তাই শিক্ষিকাও রাসেলের কথা অনুযায়ী শিক্ষা দান করতেন। শিক্ষিকার খাবার-দাবারের ব্যাপারে খুব সচেতন ছিল শেখ রাসেল। প্রত্যেকদিন শিক্ষিকার জন্য দুটি করে মিস্টি বরাদ্দ থাকতো এবং শিক্ষিকাকে তা খেতে হত রাসেলের ইচ্ছানুযায়ী।

এ রকম ভাবে বাড়িতে কোন আত্মীয়স্বজন আসলে তাদের ব্যাপারে শেখ রাসেলকে উৎসাহী হতে এবং অগ্রণী ভূমিকা নিতে দেখা গেছে।

রাসেলের বড় বোন বঙ্গবন্ধু পরিবারের জীবিত সদস্য শেখ রেহানা রাসেলকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন, “মা বলতেন, লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে থেকো, তাহলে তোমাকে একটা ছোট্ট বাবু এনে দেব। মার কথামতো লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে থাকার চেষ্টা করতাম। গভীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকতাম কখন মা আমাকে একটা বাবু এনে দেবে। রাসেলের জন্ম হয় অনেক রাতে। আমি ঘুমিয়েছিলাম। আমার মেজফুফু ঘুম ভাঙিয়ে বললেন, জলদি ওঠ, তোমার ভাই হয়েছে। জন্মের পরে ওকে আমার মনে হয়েছিল একটা পুতুল। কী সুন্দর হাসে, আবার কাঁদেও। রাসেল একটু একটু করে বড় হয়ে ওঠে। মা ও আব্বা নাম রাখলেন রাসেল।

স্কুলের নাম ছিল শেখ রিসালউদ্দীন। হাসু আপা ওকে কোলে করে কত গান শোনাত, কত কবিতা শোনাত। কামাল ভাই আর জামাল ভাইও কোলে নিত। আমিও নিতাম। ভয়ও করতাম যদি পড়ে যায়। যদি ব্যথা পায়। ওর খুব কষ্ট হবে।” এভাবেই সকলে রাসেলের প্রতি বিশেষ যত্নআত্নি করত,এখনো রাসেলের বোনেরা রাসেলের কথা স্মরণ করে স্মৃতিকাতর হয়ে যায়, ফিরে যায় রাসেলের শৈশবের দিনগুলিতে।

প্রয়াত সংসদ সদস্য, সাংবাদিক এবং শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বেবি মওদুদের লেখনির মাধ্যমে জানা যায়, “রাসেল একদিন মাকে জিজ্ঞেস করে, ‘মা আব্বার কাছে যাবে না?’ মা কোন উত্তর দেন না। শুধু তাকে বুকের কাছে টেনে আদর করেন। রাসেল আবার জিজ্ঞেস করে, ‘মা , আব্বার নাকি ফাঁসি হবে। ফাঁসি কি মা?’ মা বলেন, “কে বলেছে তোমাকে এ কথা?’ রাসেল উত্তর দেয়, ‘সেদিন কাকা আর দুলাভাই, কামাল ভাই বলছিল, আমি শুনেছি মা।” এমন রাজনৈতিক সচেতন ছিল শেখ রাসেল এবং কারাগারে বাবার সাথে সাক্ষাতের সময় জয় বাংলা বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল এবং বাবার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে মাঝে মধ্যে ঝাঁঝালো উক্তি প্রদান করতেন।

অথচ ছেলেটি বাঁচার জন্য কত আকুতি জানিয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ওয়াজেদ মিয়ার ভাষ্যমতে; রাসেল ঘৃণিত আর্মিদের বলেছিলেন: “আল্লাহর দোহাই, আমাকে জানে মেরে ফেলবেন না। বড় হয়ে আমি আপনাদের বাসায় কাজের ছেলে হিসেবে থাকবো। আমার হাসু আপা দুলাভাইয়ের সাথে জার্মানিতে আছেন। আমি আপনাদের পায়ে পড়ি, দয়া করে আপনারা আমাকে জার্মানিতে হাসু আপা ও দুলাভাই-এর কাছে পাঠিয়ে দিন।” এমন আকুতি স্বত্ত্বেও ছোট্ট বাচ্চাটিকে রেহাই দেয়নি খুনিচক্র।

সেই খুনিদের বর্তমান সরকার ফাঁসির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে, ইতিমধ্যে কয়েকজনের ফাঁসিও হয়েছে বাকি কয়েকজন বিভিন্ন দেশে পলাতক অবস্থায় রয়েছে। সরকারের কাছে নিবেদন যত দ্রুত সম্ভব খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা।

আরও পড়ুন

×