স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে দুর্নীতির সিন্ডিকেট: শত কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা

প্রকাশিত: 28/11/2019

স্টাফ রিপোর্টার: 

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে দুর্নীতির সিন্ডিকেট: শত কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টেন্ডার জালিয়াতি, নিম্ম মানের কাজ ও অনিয়মের মাধ্যমে বিল তুলে নেয়া সহ নানা কায়দায় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক শত কোটি টাকা। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা চতুর্থ গ্রেডের ওই কর্মকর্তা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দূর্নীতি অব্যাহত রাখতে এবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে শুরু করেছেন দৌড়ঝাপ। সম্প্রতি এ নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগও জমা পড়েছে।
 
জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই সবচেয়ে বেশী বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিগত সময়ে নতুন নতুন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ, জেলা উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালের কার্যক্রম সম্প্রসারনসহ উপজেলা পর্যায়ে প্রায় চার শতাধিক কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হয়। এসব কাজের মান নিয়ে স্বয়ং সংস্থার প্রকৌশলীদের মধ্যেও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। শুধু তাই নয় সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর দুর্বলতার সুযোগে সংস্থার তৃণমূল পর্যায়ে অনিয়ম দুর্নীতি লাগামহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম ও নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান মোল্লাসহ দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী ্ও ঠিকাদারদের সমন্বয়ে গড়ে উঠে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।  এসবের পুরস্কার হিসেবে নজরুল ইসলাম গত বছরের ২০ ডিসেম্বর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর (চ: দা:) দায়িত্ব পান। বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে আছেন। এই কর্মকর্তা তার ৩২ বছরের চাকুরী জীবনের প্রায় ২৯ বছর প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে তাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে ঠিকাদারদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। হালে এমন অবস্থায় পৌছেছে যেন প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতির আখড়া।

একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ইজিপির আওতায় টেন্ডারে সুক্ষè ভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দেয়ার ঘটনা অহরহই ঘটছে। ধূর্ত ্ও চতুর  কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম অপকৌশল প্রয়োগ করে কার্যাদেশ দিয়ে থাকেন। টেন্ডার মূল্যয়ন কমিটির সভাপতি হওয়ায় তিনি এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কতিপয় নামধারী মাস্তান, টেন্ডারবাজদের নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত প্রধান কার্যালয়ের টেন্ডার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। যার ফলস্বরূপ তার পছন্দের কয়েকজন ঠিকাদারকে ঘুরেফিরে কাজ পাইয়ে দেন। বিনিময়ে পকেটস্থ করেন ৫শতাংশ হারে কমিশন। যা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে এখন ওপেন সিক্রেট। গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুলহাই এবং সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর মত নজরুল ইসলাম স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে একচ্ছত্র ক্ষমতার মালিক। গত ৫ বছরে পিপিআর লংঘন করে তার সিন্ডিকেটের মাত্র ৮/১০টিপ্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে নজরুল ইসলাম এপর্যন্ত প্রায় ২শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঠিকাদারদের অভিযোগ নজরুল ইসলামের সিন্ডিকেটের কাছে তারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে অপদস্থ হবার পাশাপাশি কাজ প্রাপ্তি হারাতে হয়। দীর্ঘদিন প্রধান কার্যালয়ে চাকুরী করার কারনে অন্যান্য প্রকৌশলী বা কর্মচারীরাও তার সাথে দ্বন্দ্বে জড়াতে সাহস পান না।  

অভিযোগ আছে, জিকে শামীম ও খালেদের মতো তার সিন্ডিকেটের লোকজনকে কাজ পাইয়ে দেবার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকেন নজরুল ইসলাম। তার পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য কাজের প্রাক্কলন ২৫% থেকে ৩০% বেশী করার পর ঐ প্রাক্কলন গোপনে জানিয়ে দিয়ে কাজ পাইয়ে দেন। অনেক সময় তার পছন্দের ঠিকাদারদের দরপত্রে ত্রুটি থাকল্ওে মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি অনেক যোগ্য ্ও সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে তার পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেয়ার সুপারিশ করেন। এর ব্যত্যয় ঘটলেই টেন্ডার বাতিল করে পুন: টেন্ডার আহবান করা হয়। নজরুলের সিন্ডিকেটের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, ঢালী কন্স্ট্রাকশন, কেটিএমসি (জেভি), মাইশা কন্ট্রাকশন, প্দ্দোার এন্টারপ্রাইজ, এমএস এন্টারপ্রাইজ, কবির ট্রেডার্স, শপ-ই ট্রেড, অনিক ট্রেডিং কর্পোরেশন, ঢাকা ওপেন স্টুডিও এবং খাজা বিলকিস রাব্বী। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে সব কাজ অলৌকিক ভাবে পেয়ে যায়। এরমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বড় কাজের কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও নজরুল ইসলামের বদৌলতে তারা কাজ বাগিয়ে নিচ্ছেন। শুধু তাই নয় এ সব প্রতিষ্ঠান নি¤œমানের কাজ করে কিংবা কাজ না করেই নজরুলের প্রভাবে বিলও পেয়ে যান।

তার দূর্ণিতীর খবর চাউর হলে চতুর তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম নিজেকে বাঁচাতে মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়কে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পাবার জন্য দেনদরবার চালাচ্ছেন। আগামী ১৯ জানুয়ারি, ২০২০জনাব নজরুল ইসলামের চাকুরী শেষ হচ্ছে। বর্তমানে যেখানে সরকারের গ্রেড-১ পদ মর্যাদাভুক্ত সচিব মহোদয়রাই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাচ্ছেন না, সেখানে চতুর্থ গ্রেডের একজন প্রকৌশলী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দৌঁড়ঝাপ করে বেড়াচ্ছেন। চুক্তিতে নিয়োগ পাবার জন্য তার সিন্ডিকেটের ঠিকাদারদের কাছ থেকে দশ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করার চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া গেছে।

বিএনপি জামায়াতের সমর্থনপুস্ট নজরুল ইসলাম চাকুরীর শেষ সময়ে এসে আওয়ামীলীগ সেজে দোর্দন্ড প্রতাপে নিজের খেয়াল খুশিমত দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে বর্তমানে তার সমমর্যাদার আরো যোগ্য এবং দক্ষ ৮জন তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কর্মরত আছেন। তাদের বাদ দিয়ে নজরুল ইসলামকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হলে অধিদপ্তরে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়বে বলে ধারনা করছেন খোদ ওই প্রতিষ্ঠানের অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানিয়েছেন ওই তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে এবং চাকুরীর মেয়াদ বাড়ানো হলে প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযানও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত  তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন

×