বিচেছদ

বিচেছদ

“ নিমেষেই টুটে গেল দীর্ঘ দিনের ভালবাসার বন্ধন , মমত্বের শৃংখল , বন্ধুত্বের অপূর্ব নিদর্শন”। বহু দিনের তিলে তিলে গড়া , সঞ্চিত আবেগ আর অনুভুতির অপমৃত্যু হল ছোট একটি সংবাদ ,

ফিস ফিস কথাবার্তাকে উপলক্ষ্য করে। হায়রে জগত সংসার ধ্বংস করা যত সহজ , গড়া কিন্তু বড় কঠিন , কষ্ট সাধ্য অত্যন্ত পরিশ্রমের ফসল। ১৯৭৪ সালে আমি অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত।

নভেম্বর মাসের এক বিকেল স্কুল ছুটির পর বাড়ির দিকে রওয়ানা দিয়েছি অত্যন্ত দ্রুতলয়ে। উদ্দেশ্য পেঠের ক্ষুধা নিবারণের পরবর্তী পর্যায়ে যৌবনের বা কৈশোরের স্বাভাবিকতায় খেলায় অংশ গ্রহণ।

আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ট সহপাঠি ঐ দিন অসুস্থতাহেতু স্কুলে যায় নাই বলে আমি ছিলাম একাকী। হঠাৎ পিছন থেকে শুনতে পেলাম আমাকে যেন কে ডাকছেন অত্যন্ত আদর জড়িত কণ্ঠে।

তাকাতেই হাতের ইশারায় দাড়াবার সংকেত দিলেন এলাকার একজন বর্ষিয়ান ব্যক্তিত্ব। অনিচছা সত্তে¡ ও দাড়ালাম। যেহেতু আমি বরাবরই বর্ষিয়ানদের উপেক্ষার অপবাদ থেকে রেহাই

এবং মনের গভীর অনুভুতি থেকে সমীহ , সম্মান , শ্রদ্ধা প্রদর্শন করি। কারন আমাদের সমাজ উভয় কুলে আপনার সমালোচনায় মুখরিত হবে। তবে মন্দটা একটু বেশি বৈ কি ?


” পাছে লোকে কিছু বলে ” এ তাড়া সর্বক্ষণ , সর্বক্ষেত্রে বিহবল চিত্তে শংকিত করবে। যাহোক তিনি কাছে এসে আমার মনে আনন্দ দানের বৃথা চেষ্টা করে শুরু করলেন একটা গল্প।

পূর্বেই বলেছি শংকার ভয়ে না শুনে উপায় নেই গোলাম হোসেন। কিন্তু আমার কোন কথা শোনার আগ্রহ নেই মোটেই। অনুরোধে ঢেকিঁ গেলার মত শুনতে লাগলাম। তিনি শুরু করলেন গল্প বলা।

এক দিন আমার কাজে লাগবে বলে। গল্পটি হল  রহিম ও করিম দুই বন্ধু। শিশু কাল থেকে পূর্ণ যৌবন পর্যন্ত গলায় গলায় ভাব। এ দৃশ্য তিনির মোটেই পছন্দ হচিছল না। সুতরাং ভাঙ্গাতে হবে।

শুরু করলেন ভাঙ্গার কাজ। তাই একদিন কায়দা করে রহিমের সঙ্গ থেকে করিমকে ডেকে আনলেন। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে চাইলাম ডাটার (ডেঙ্গা) চারটে বীজ।

করিম হ্যাঁ সুচক জবাব দিয়ে কয়েক হাত দুরে যাবার পর উচচ স্বরে এবার বললাম স্মরণ থাকবেতো এবং দেবার জন্য প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিলাম। করিম রহিমের সঙ্গে চলে গেল ইত্যকার মত।

স্বাভাবিক প্রকৃতি প্রদত্ততায় আন্দাজে অনুমিত হল , রহিম অবশ্যই জিজ্ঞেস করবে চুপি চুপি বলা কথা জানার উদগ্রীবতা আগ্রহ সহকারে। ডাটার বীজ শুনে সন্দেহ প্রবনতার বীজ অংকুরিত হবে

চুপিসারে এ সাধারণ দ্রব্য চাওয়ার হেতু। ঝড়ের পূর্বাভাস পরিমাপক যন্ত্রে ইঙ্গিত শুরু। পরবর্তী সপ্তাহে অনুরুপ কায়দায় একই সঙ্গ থেকে করিমের পরিবর্তে রহিমকে ডেকে এনে সামান্য তুলা প্রদানের কথা ফিসফিস করে বললাম।

করিমের নিকটবর্তী হতেই এখন জোরে স্মরণ থাকা এবং দেবার প্রতিশ্রুতি আদায় করলাম। অদ্য যখন করিম জিজ্ঞাস করবে চুপিসারে কি বলা হল ? প্রতি উত্তরে রহিম বললেই করিম ধরে নেবে যে,

সে দিন ডাটার কথা বলায় আজ তার পরিবর্তে তোলার কথা বলা হচেছ। প্রকৃত পক্ষে সেদিনের প্রতিশোধ , প্রতিহিংসা বা বদলা নেয়া হচেছ। “সন্দেহ প্রবণ মন, আঁধার ঘুচে না কখন”।

এ বীজ যেখানে একবার বপন করা হয় , অতি দ্রুত তার ডালপালাসহ পরিপূর্ণ বৃক্ষে রুপান্তর অনায়াস লব্ধ। ডাল-পালা ছড়াবেই , বিস্তৃতি লাভে সক্ষম।

অনুরুপ মানুষের ক্ষেত্রে সন্দেহের বীজ একবার মনের দ্বার প্রান্তে হাজির হলেই যথেষ্ট। অতিরিক্ত প্রয়োজন। এর প্রভাব ও ফলাফল প্রাপ্তি সন্দেহাতীত। তিনি বললেন ,

পরবর্তী সপ্তাহে আর দু’জনকে একত্রে দেখি নাই। কৌশল প্রয়োগে সফলতা অর্জিত হয়েছে বলে তিনি বিজয়ের হাসি হাসলেন। আমার ক্ষুধার্ত অবস্থা পাল্টা প্রশ্ন করে অযথা বাক্য ব্যয়ে জানার আগ্রহ ছিল না বিধায় ,

“কেটে পড়লে বাঁচি অবস্থা”। যাহোক আমার মনের গহীনে বিস্মৃতির অতলান্তে জমায়িত কথাগুলো মাঝে মধ্যে স্মরণ করে বা স্মৃতির আয়নায় প্রতিচছবি দর্শনে বা রোমন্তনে শুধু বিস্মিত হই।

এ মন মানসিকতা মানুষের মন থেকে ধুয়ে মুছে সাফ হোক। আবর্জনা মুক্ত হোক। সুস্থ , সুন্দর পরিবেশের মাধ্যমে পরিপুষ্টতা লাভ করুক এ দৃপ্ত প্রত্যয় ঘোষণা করছি কায়মনোবাক্যে স্রষ্টার বরাবরে।

আরও পড়ুন

×