ডায়াবেটিস এবং রমজানের শৃঙ্খলা

ডায়াবেটিস এবং রমজানের শৃঙ্খলা

ডায়াবেটিস এবং রমজানের শৃঙ্খলা 

রমজান ডায়াবেটিস রোগীকে শৃঙ্খলা পূর্ণ জীবন যাপন করার সুযোগ করে দেয়। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে রোজা - ওজন নিয়ন্ত্রন, কোলেস্টেরল কমানো ও সুগার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভুমিকা পালন করে থাকে। রমজানে মানুষের জীবনধারায় বেশ কিছুটা পরিবর্তন হয়ে থাকে একইভাবে খাদ্যাভাসেও বিরাট একটা পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে প্রথমেই জেনে নিন আপনার রোজা পালনে কোন বাধা আছে কিনা ? নিয়মিত রক্তের সুগার, সুগারের গড় মাত্রা , রক্তে লিপিডের পরিমাণ, চোখ পরীক্ষাসহ আরও কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। এসব পরীক্ষার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে রোজা পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। অপরিকল্পিতরোজা রাখার কারণে সৃষ্ট সমস্যা সমূহ
১। রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ।
২) রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত হওয়া, সেই সাথে এসিটোন বেড়ে কঠিন বিপদজনক অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে।
৩) রক্তের মধ্যে ফ্যাট বা চর্বি উচ্চ মাত্রায় বেড়ে যাওয়া।
৪) অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের কারণে ওজন বেড়ে যাওয়া।
৫) শরীরে পানি শুন্যতা দেখা দেয় ।
সেহরীর খাবার সেহরীর শেষ মূহুর্তের অল্প কিছুক্ষণ আগে খাওয়া।
ইফতারের সময় অধিক পরিমানে মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ না করা। ডায়াবেটিক রোগীদের পর্যাপ্ত পরিমানে পানি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যেন তারা পানি শুন্যতায় না ভোগেন। ফলমুল, শাকসবজি, ডাল ও টক দই তালিকাভুক্ত করতে পারেন। ডাবের পানি পান করতে পারেন। ভাজা পোড়া খাবার অল্প পরিমাণে খেতে পারেন তবে পরিহার করাই উত্তম ।খাদ্যের ক্যালরি ঠিক রেখে খাওয়ার পরিমান এবং ধরন ঠিক করতে হবে। ইফতারের সময় অতি ভোজন এবং শেষ রাতে অল্প আহার পরিহার করতে হবে।
পানিশুন্যতা রোধে এবং শরীরে বিপাকক্রিয়ার জন্য শরবত একটি অপরিহার্য পানীয়। বিকল্প চিনি নিয়ে ইসবগুলো,তোকমা, লেবু, কাঁচা আম বা তেঁতুল শরবত করে খাওয়া যেতে পারে।

ডাব ছাড়া অন্যান্য মিষ্টি ফলের রস না খাওয়াই শ্রেয়।

টক ও মিষ্টি উভয় ধরনের ফল দিয়ে সালাদ খেলে যেমন উপাদেয় হবে, তেমনি এতে খনিজ লবন ও ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হবে।

কাঁচা ছোলার সঙ্গে আদাকুচি, টমেটোকুচি, পুদিনাপাতা ও লবন মিশিয়ে খেলে বেশ সুস্বাদু হয়। কাঁচা ছোলা রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, রাতের খাবার একেবারেই বাদ দেয়া উচিত নয়। রাতের খাবারে ভাত খাওয়া যাবে। তবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ বরাদ্দ খাবারের পরিমানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। হালকা মসলায় রান্না করা যে কোন ছোট-বড় মাছ এবং সবজি থাকলে ভালো হয়।যে সকল রোগী ইনসুলিন গ্রহন করেন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মুখে খাওয়ার ঔষুধ এবং ইনসুলিনের ডোজ ঠিক করে নিতে হবে ।রমজান মাসে সপ্তাহে এক বা দুই দিন বাড়িতে গ্লুকোমিটারে নিজের রক্তের সুগার নিজে মেপে দেখতে হবে । এছাড়াও দিনের যে কোন সময় খারাপ লাগলে বা শরীর কাঁপলে, ঘেমে উঠলে, মাথা ঝিম ঝিম লাগলে অবশ্যই সুগার মাপুন। যেকোন জরুরি পরিস্থিতিতে আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন ।
রোজার সময় নিজে ডায়াবেটিসের ওষুধ সমন্বয় করবেন না, এতে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে।সেহরীর খাবার সেহরীর শেষ সময়ের কিছু আগে খাওয়া উচিত। রোজার সময় দিনের বেলা ব্যায়াম করা উচিত নয়।
সবাই সুস্থ থাকুক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জীবন যাপন করুন ।

ডা:মোআবু কাওছার (স্বপন
এম বি বি এস , সি সি ডি , এম পি এইচ ।

আরও পড়ুন

×