আমার বাবা

প্রকাশিত: 22/06/2020

মিজানুর রহমান মিজান

আমার বাবা

মহান আল্লাহ তায়ালা সকল সৃষ্ঠির সৃষ্ঠিকর্তা। অগণিত সৃষ্ঠির মধ্যে মানুষের জন্য অপূর্ব সেরা নিয়ামত হিসেবে মাতা-পিতাকে দান করেছেন সন্তানের আপন জন রুপে।

পৃথিবীতে সন্তানের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হচেছ মাতাপিতা। আমার পিতা ছিলেন একজন প্রখ্যাত মরমী বাউল শিল্পী চাঁন মিয়া, যিনি দীর্ঘদিন গানের ভূবনে বিচরন করেন।

আপন প্রতিভা ,সাধনা বলে খ্যাতি,মানুষের ভালবাসায় হয়েছেন সিক্ত। এক সময় মানুষের মুখে উচচারিত হত ভাবুক, বিষাদ লহরী, ভাব, তত্বপূর্ণ গানের এক সুকণ্ঠী, সুরেলা সাধকের নাম।

বাবার এ সুখ্যাতি থেকে আমি সেই ছোট বেলায় যখন ,যেখানে গিয়েছি মানুষের মুখে ছিল একটি অভিব্যক্তি বড় হয়ে আমি হবো একজন স্বনাম ধন্য গায়ক।

কিন্তু সেই সৌভাগ্য আর দূর্ভাগ্য যাই বলুন আমি হতে পারিনি ঐ পথের পথিক। জানি না এর অন্তর্নিহিত রহস্যের মর্মভেদ। একমাত্র আল্লাহই সর্বজ্ঞাত। আমার বাবা ছিলেন একজন ধনীর আদুরে দুলাল।

যা হোক এক সময় অর্থনৈতিক দৈন্যতা আমার পরিবারকে আষ্টে-পৃষ্টে জড়িয়ে ধরে গাছের সহিত লতার প্রেম,ভালবাসার অনুরাগে সযত্নে।

পিতার একমাত্র পুত্র সন্তান আমি।আট বোনের মধ্যে কৈশোর বয়সে তিন বোন মারা যায় জরা ব্যাধিতে। আট সদস্যের পারিবারিক বন্ধন ছিল সুদৃঢ়।

পিতা বাউল শিল্পী হবার সুবাদে অধিক রাত্রি জাগরনে একদিকে পিতার কষ্ঠ অনুভব করতাম হৃদয়ে তুমুল ভাবে। তাছাড়া তিনির সান্নিধ্য পেতাম অত্যধিক কম। দায়িত্ব, কর্তব্য, ও নিষ্ঠা সচেতনতা আমাকে আন্দোলিত করত দারুন ভাবে প্রতিনিয়ত।

মনে হত বার বার একাধিক পুত্র সন্তান হলে একজন না একজন হয়ত বাবা-মাকে সুখ , শান্তি ,আনন্দ দান করত অজস্রতায়। ফলে বাবা-মার সেবা যত্নে অমিয় ধারা থাকত বহমান। কারন আল্লাহ পাক কোরানে বলেছেন , “মা বাবার পদতলে সন্তানের বেহেস্ত “।

পিতার একমাত্র পুত্র সন্তান বলে এ ধারনা বোধ তাড়িত করত সর্বক্ষণ। মাতা-পিতাকে সুখ , শান্তি প্রদানের প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রাখা অবশ্য করণীয়, পালনীয় , দায়বদ্ধতার কিঞ্চিত উপলক্ষ্য বা অবলম্বন।

তাছাড়া একটি ভাই এর অভাববোধ , শূন্যতা হৃদয়ের প্রান্ত বিন্দু পর্যন্ত করুন ব্যঞ্জনাময় সুর তুলতো বার বার , প্রতিবার। সুতরাং এ সকল কার্য কারনের সঙ্গে শ্রদ্ধা, ভালবাসা, সম্মান, দায়িত্ব-কর্তব্যের বোধে উপার্জনক্ষম সামর্থ্য অর্জনের সাথে সাথে পিতাকে পরোক্ষ ভাবে অবসরে যাবার বিনম্রতার সহিত কথা বলি। চলে যান অবসরে ।

তখন থেকে অবসরে স্বাচছন্দ্যবোধ অবলোকন করেছি তিনির সর্ব প্রকার চলাফেরায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ , নিয়মিত রোজা পালন ইত্যাদি ছিল তাঁর দৈনন্দিন কার্য ক্রমের তালিকায় সতর্কতা অবলম্বনে। ছিলেন জয় নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এবং রাজা গঞ্জ বাজার হাফিজিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য।

তাছাড়া সাংসারিক কর্ম কান্ডে অত্যন্ত নিষ্টাবান ও সচেতন । তিনি আমার লেখাপড়ার সময় সঙ্গীত জগতের সহিত ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন।

তথাপি সান্নিধ্য কালীন প্রেরণা আমাকে এ পর্যন্ত সক্ষমতা অর্জনের শ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক। পিতা এবং ব্যক্তি হিসেবে সমান্তরাল আদর্শের প্রতীক আমার বাবা ছিলেন। তাঁর নীতি বাক্য, উপদেশ, আদেশ, নির্দেশ, সবই ছিল শিক্ষণীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে।

আমার বাবা প্রিয় তালিকার শীর্ষে আমার ক্ষেত্রে ছিলেন। অনেকে বাবা হারান বিভিন্ন সময়। কেহ বা জন্ম পূর্ব সময়ই হারান। এ ক্ষেত্রে আমি সৌভাগ্যবান একটা দীর্ঘ সময় সান্নিধ্য পেয়ে হারিয়েছি। কিন্তু বর্তমানে বড় অস্কস্থিকর এবং শূন্যতা আমাকে মর্মবেদনায় ভোগাচেছ।

কিন্তু পৃথিবীর চিরাচরিত নিয়মে সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে আগে পিছে যা রোধ শক্তি কারো নেই , থাকবে ও না অনাদিকাল পর্যন্ত।

২০০০ সালে আমার বাবার গলায় মরণ ব্যাধি ক্যান্সার বাসা বাধে শক্ত সামর্থে। খোদার অপার বিস্ময় দীর্ঘ একটি বৎসরের ওসমানী হাসপাতালের ক্যান্সার নিরাময় বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. উরিদ আহমদের অপরিসীম আন্তরিক চিকিতসা সেবায় আরোগ্য লাভ করেন।

যদি ও রেডিও থেরাপি প্রদানের ফলে খাবার জাতীয় সকল প্রকার দ্রব্যের স্বাদ বঞ্চিত হয়ে পড়েন। ২০০৪ সালের ২৮ রমজান আবারো ফুসফুসে বাসা বাঁধে। কিন্তু এ যাত্রা রক্ষা দেয় নাই সকল প্রকার চিকিৎসা ব্যর্থ বলে প্রমানিত করে ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৫-৫৫ মিনিটে চির নিদ্রায় হন শায়িত।

আমার বাবা সঙ্গীতের সহিত সম্পৃক্ত থাকা এবং ১৯৮০ সালের দিক থেকে বিরত থাকার কারনে আমি প্রায়ই দু‘ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে থাকি।

কারো অভিমত আমি বাবাকে ,বাবার প্রতিভাকে ধবংশ করেছি। আবার কারো মতে ভাল সুন্দর দিক নির্দেশনা দিয়েছি। উপরে উল্লেখিত মূল উদ্দেশ্য বিবৃত করায় পাঠকের নিকট হয়ত ব্যাপারটি স্পষ্ঠ হয়ে উঠবে বলে আমার ধারণা ও বিশ্বাস। ভাল-মন্দ এক মাত্র আল্লাহ জ্ঞাত।

তাছাড়া আমার জীবনে বাবার প্রভাবকে অনেক মানুষের নিকট ভ্রান্ত ধারণার শিকার হয়েছি। যেমন অনেকে ছাত্র জীবনে আমাকে গান পরিবেশন করার অনুরোধ বার বার করেছেন আমি গান জানি ভেবে।

কিন্তু কোন দিন আমি কারো অনুরোধ রক্ষা করতে পারিনি বিধায় কেহ কেহ ধরে নিয়েছেন আমি উপেক্ষা করছি, অহংকারী, অবমূল্যায়ন করছি ইত্যাদি।

কিন্তু যা নির্মম ও বাবা সত্য , তা হচ্ছে আমার অজ্ঞতা,অক্ষমতা। তাই বলে কি আমি গান ভালবাসি না,শুনি না? নাই আমি গানের একজন ভাল শ্রোতা, ভক্ত ,অনুরাগী।

আমার বাবার প্রতিভা ধবংশ করা, বাবার অনুরাগী , ভক্ত ,শ্রোতাদের অবহেলা , অবজ্ঞা বিন্দু মাত্র আমার হৃদয়াসনে ছিল না ,নেই বিদ্যমান।

আমার বাবাকে নিয়ে লেখার প্রথম সুযোগে আমার অব্যক্ত কথা গুলো প্রকাশে আনন্দ বোধ করছি । অপর দিকে প্রত্যেকের নিকট ক্ষমা প্রার্থী আমার সঠিক অভিমত জানাতে পেরে।

আমি মানুষকে গভীর শ্রদ্ধা ,সম্মানের সাথে ভালবাসি। সেই সাথে বাবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি খোদার দরবারে বিনম্র চিত্তে।

আরও পড়ুন

×