সুগন্ধী ধানে সুখের হাসি

সুগন্ধী ধানে সুখের হাসি

বাম্পার ফলনও ধানের উচ্চ মুল্য পেয়ে আনন্দের জোয়ার নেমেছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার সুগন্ধি ব্রি-ধান ৩৪ (চিনিগুরা) আবাদী কৃষকদের ঘরে ঘরে।
একটি করে চারা রোপণ, পার্চিং করায় রোগ ও পোকামাকড় আক্রমণ কম হওয়ায় উচ্চফলনশীল সুগন্ধী ধান চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে এ ধান।
জানা যায়, বেসরকারী সংস্থা গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র (জিবিকে), আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবীল (ইফাদ) ও পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ ) আর্থিক সহযোগিতায় পেইস সুগন্ধী ধান ভ্যালু চেইন প্রকল্পের আওতায় ফুলবাড়ী উপজেলায় চলতি বছরে ব্রি-ধান ৩৪ চাষ করেছেন ৮৪৫ কৃষক। তারা ইতোপূর্বে পুরনো দেশি জাতের ধান চাষ করে লোকসান গুনতেন। কিন্তু অন্যদের দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবার তারা সুগন্ধী ধান চাষ করেছেন। শুরুতে কৃষকদের মধ্যে দ্বিধা থাকলেও ফলন ঘরে ওঠার পর ঘরে ঘরে আনন্দ বিরাজ করছে তাদের। ধানের গুনগতমান ভাল হওয়ায় ঘরে বসেই পাইকারদের কাছে ধান বিক্রয় করেছে ৩হাজার ২০০টাকা থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা দরে। ভবিষ্যতে সুগন্ধী ধান চাষে এখন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওইসব কৃষকরা।
ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ আলাদীপুর গ্রামের কৃষক মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, গতবছর আমন মৌসুমে তিনি ৫ একর জমিতে সুগন্ধী ব্রি ধান ৩৪ চাষ করে ১৯০ মণ ধান পেয়েছিলেন। প্রথমে ওইধান ৭৫ কেজির বস্তা প্রতি ৩ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও পরবর্তীতে করোনার ছোঁবলে পরে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। তাই এ বছর করোনার কারণে ৩ একর জমিতে সুগন্ধী ধান চাষ করেন।
পার্শ্ববর্তী উত্তর আলাদীপুর তালতলা গ্রামের থলেশ্বর চন্দ্র বর্মণ বলেন, ইতোপূর্বে তারা মোটা ধান চাষ করতেন এবং লোকসান গুনতেন। সংস্থার উদ্যোগে চাষাবাদের আধুনিক কলাকৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ, মাঠ প্রদর্শনীও মাঠ দিব করা হয়। ওই ধান স্বল্পখরচে অধিক মূল্য পাওয়ায় তারা ধান চাষ শুরু করেন এবং লাভের মুখ দেখেন। তাদের সংরক্ষিত বীজ সংগ্রহ করে গ্রামের আরো কৃষকরা এইধান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
উত্তর রঘুনাথপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম বলেন, পেইস প্রকল্পের সহযোগিতায় সুগন্ধী ব্রি-৩৪ ধানের বীজ বিনামূল্যে পেয়ে ২০১৭ সালে শখের বসে এই ধান চাষকরেছেন। ভালো ফলন পেয়ে তারপর থেকে বানিজ্যিকভাবে ৩ একর জমিতে এইধান চাষ করেছেন। ওই সংস্থা থেকে বীজ ও পরামর্শ নিয়ে অন্যান্য কৃষকের চেয়েও ভালো ফলন হয়েছে।
পাইকার ধান ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেয়ে কৃষকের বাড়ি থেকে সুগন্ধী ধান সংগ্রহ করছি। বস্তা প্রতি ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৪৫০ টাকা দরে ক্রয় করছি। এইধান সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন বড় বড় অটো রাইস মিল, প্রাণ, সিটি গ্রুপ কোম্পানীর স্থানীয় এজেন্টের নিকট বিক্রয় করা হয়।
পেইস প্রকল্প প্রধান কৃষিবিদ লিয়াকত আলী বলেন, জিবিকে প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালের ১ জুন থেকে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ীসহ পার্বতীপুর, বিরামপুর ও চিরিরবন্দরে সুগন্ধী ব্রি ধান-৩৪ ও ৫০ (বাংলামতি) ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সংস্থার উদ্যোগে প্রশিক্ষণ, মাঠদিবস, প্রদর্শনী, কৃষিযান্ত্রিকীকরণ ও বাজারজাতকরণসহ বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়। বর্তমানে ফুলবাড়ীতে ১ হাজার কৃষক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং এইধান চাষে সুফল ভোগ করেছেন। 
গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন,  কৃষকরা সনাতন পদ্ধতির চাষাবাদ থেকে বের হয়ে আধুনিক ও প্রযুক্তিগত চাষাবাদ এবং বাজার সংযোগের ফলে সুগন্ধী ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন। 
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দফতরের সাথে সমন্বয় করে কৃষক প্রশিক্ষণ করেছে। সুগন্ধী ধান চাষে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় এইধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।  

সুগন্ধী ধানের একটি চারা সারিতে রোপণ, পার্চিংকরণ, বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
 

আরও পড়ুন

×