প্রকাশিত: 20/11/2019
বিজিবির কঠোর নজরদারী সত্ত্বেও ভারত থেকে বাংলাদেশে শত শত মানুষ
জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) আতঙ্কে ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে মানুষ। গত দুই সপ্তাহে কমপক্ষে দুই শতাধিক ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছেন খালিশপুরস্থ ৫৮ বিজিবির সদস্যরা।
বিজিবি বলছে, যারা অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এদের মধ্যে বেশির ভাগই মুসলমান। এরা এনআরসি আতঙ্ক ও স্থানীয় নির্যাতনে দেশ ছেড়ে চলে আসছেন। তারা আর ভারতে যাবেন না বলে বিজিবির কাছে জানিয়েছেন। সহায়-সম্বল নিয়ে তারা এদেশে চলে এসেছেন। তাদের আটকের পর অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, মহেশপুর উপজেলার জলুলী, পলিয়ানপুর, খোসালপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছে বাঙালিরা। গত ১৫ দিনে ৭৫ নারী, ৬৪ পুরুষ ও ৬৪ জন শিশুকে তারা আটক করেছেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) আটক করেছেন চারজনকে। এছাড়া চলতি নভেম্বরের ১৫ দিনে শুধুমাত্র মহেশপুর থানার মাধ্যমে ১৫৭ জন অনুপবেশকারীকে আদালতে পাঠিয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসের ১৩ নভেম্বর ৩৩ জন ও ১৪ নভেম্বর ৪৯ জনসহ মোট ৮২ জনকে আটক করেছে বিজিবি। এটাই বিজিবির হাতে আটক হওয়া বড় সংখ্যার অনুপ্রবেশকারী দল। বিজিবি ৫৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল আহসান গনমাধ্যমকে বলেন, মাইগ্রেশন করে যারা ভারতে গিয়েছিলেন তাদের সেখানে বসবাসে অসুবিধা হচ্ছে। নানাভাবে তারা চাপের মধ্যে পড়েছেন।
বিশেষ করে ব্যাঙ্গালুর এলাকায় এই সমস্যা বেশি হচ্ছে। যে কারণে তারা ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে প্রবশের চেষ্টা করছেন। তারা এক সময় বাংলাদেশে ছিলেন বলে দাবি করছেন। তারা বেশিরভাগ দুর্গম এলাকার ঠিকানা দিচ্ছেন। যে কারণে বিজিবি যাচাই করতে পারছে না। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
আপাতত আটকদের অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অবশ্য স্থানীয়রা বলছেন, বিজিবি যে কয়েকজনকে আটক করেছে অনুপ্রবেশকারী তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। তারা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে এদেশে প্রবেশ করেছে। অবশ্য বিজিবি কর্মকর্তা কামরুল আহসানের দাবি, তারা কঠোর নজরদারি করছেন। সে ক্ষেত্রে চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রবেশের সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে মহেশপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল আলম বলেন, যারা আটক হচ্ছে তাদের পরিচয় নিয়ে দেখা যাচ্ছে তারা বেশির ভাগ বাগেরহাট ও খুলনা এলাকার। তারা দুই দশক ধরে ভারতে গিয়ে কাজ করছিলেন। সেখানে স্থানীয় ঝামেলায় চলে আসছেন। তাদের বাংলাদেশে আত্মীয়-স্বজন রয়েছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের মানবাধিকার কর্মী আমিনুর রহমান টুকু বলেন, সম্প্রতি ভারত সরকার ভারতের প্রকৃত নাগরিকদের তথ্য বের করতে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন প্রকাশ করে। সেখানে নাম না থাকায় নির্যাতনের ভয়ে এসব নারী-পুরুষ বর্ডার পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। তিনি বলেন, আমাদের একটা ঘনবসতি দেশ। ইতোমধ্যে আমরা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে জায়গা দিয়েছি।
এভাবে যদি আবার ভারত থেকে মানুষ চলে আসে তাহলে আমাদের আরও একটা সমস্যা সৃষ্টি হবে। তারা অনেকেই সম্পত্তি বিক্রি করে চলে গিয়েছিলেন। এখন ফিরে এসে তারা কর্মসংস্থান না পেয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি। এছাড়া যারা ভারত থেকে আসছে তারা কোনো মারাত্মক রোগ বা এইচআইভি বহন করছে কি-না এটাও বড় চিন্তার বিষয়।
তারা দেশ থেকে চলে গিয়ে দীর্ঘদিন সেখানে ছিলেন। তাদেরকে এখন অবৈধভাবে আমাদের দেশে আসতে দিতে পারি না। ভারত আমাদের বন্ধু দেশ এই বিষয়ে আলোচনা করে সমাধান করা যেতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, গত শনিবার থেকে প্রচুর পরিমাণে নারী-পুরুষ ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত অঞ্চলে আটক হচ্ছেন।
আটকরা দাবি করছেন- তারা বাংলাদেশের নাগরিক। কারাগারে পাঠানোর পর তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাদের ভাষ্য, তারা পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে ছিল। ওখানে কোনো বাসা বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো। সম্প্রতি ওখানে তাদেরকে কিছু লোকজন খোঁজ করছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিল তারা তাদেরকে বলেছে তারা তাদের আর রাখতে পারবে না।
তখন বাধ্য হয়ে তারা ভারতের স্থানীয় দালাল ধরে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর বিজিবির হাতে আটক হচ্ছেন। জেলা প্রশাসক বলেন, আমি তাদের বক্তব্য যাচাই করেছি, তারা বাংলাদেশের নাগরিক। তারা পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে গিয়েছিল।