বিদ্যুৎ বিলকে কেন্দ্র করে বীর মুক্তিযোদ্ধা স্ত্রী ও প্রসূতি মেয়েকে মারপিট তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

বিদ্যুৎ বিলকে কেন্দ্র করে বীর মুক্তিযোদ্ধা স্ত্রী ও প্রসূতি মেয়েকে  মারপিট  তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

ফুলবাড়ীতে মিটার না দেখে বেশি বিদ্যুৎ বিলকে কেন্দ্র করে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা স্ত্রী ও প্রসূতি মেয়েকে  মারপিট  তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বাসাবাড়ীর মিটারের রিডিং না দেখেই বেশি বিদ্যুৎ বিল করার বিষয় জানতে চাওয়ায় গত মঙ্গলবার পিডিবি’র কর্মচারী মো. ইসলামের হাতে মারপিটের শিকার হয়েছেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও প্রসূতি মেয়ে।

এ বিষয়ে গতকাল বুধবার তিনজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আহত মা ও মেয়ে হলেন উপজেলার পৌর শহরের উত্তর সুজাপুর (ডাড়ারপাড়) এলাকার প্রয়াত

বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানের স্ত্রী মোমেনা বেওয়া (৪৫) ও মেয়ে জোয়ায়রা বেগম (২৭)। জোয়ায়রা বেগম চার মাসের সন্তান প্রসূতি মা। ঘটনাটি ঘটেছে,

গতকাল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় উপজেলার পৌর শহরের উত্তর সুজাপুর (ডাড়ারপাড়) এলাকায়। আসামীরা হলেন, পৌরএলাকার পশ্চিম গৌরীপাড়ার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে

মো. ইসলাম (২৭), উত্তর সুজাপুর (ডাড়ারপাড়) এলাকার মোস্তাকিমের ছেলে আব্দুর রহিম (২৮) ও জিয়াবুর রহমান। বিদ্যুৎ কর্মচারীর হাতে মারপিটের শিকার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী আহত হয়ে

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন মোমেনা বেগম বলেন, বিদ্যুৎ কর্মচারী ইসলাম প্রতি মাসে গ্রামের জনৈক ব্যক্তির বাড়ীতে বসে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিদ্যুৎ মিটারের রিডিং না দেখেই নিজ খেয়ালখুশি

মতো রিডিং বসিয়ে বিল করে থাকেন। ইতোপূর্বের প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল ৫০০ থেকে ৬০০টাকা হলেও আকস্মিকভাবে গত অক্টোবর মাসের তাদের বাসাবাড়ীর বিল এক হাজার ৬০০ করা হয়।

হঠাৎ করে এতো বেশি বিল কীভাবে হয়েছে বিষয়টি জানার জন্য গতকাল মঙ্গলবার বেলা একটায় বিদ্যুৎ কর্মচারী ইসলামকে তার মুঠোফোনে ফোন করা হয়।

বিষয়টি বলার সাথে সাথেই সে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করার এক পর্যায়ে আগামী মাসগুলোতে এর চেয়েও বেশি বিল করা হবে বলেও হুমকি দেন। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেশি

মো. মোস্তাকিনের ছেলে বিদ্যুৎ মিস্ত্রি আব্দুর রহিমের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানান। এ সময় রহিম বিষয়টি নিয়ে ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে ইসলামকে তার বাড়ীতে ডেকে নেন।

এ সময় বিদ্যুৎ বিল বেশি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সাথে সাথে ক্ষিপ্ত হয়ে উপস্থিত প্রতিবেশিদের সামনেই বিদ্যুৎ কর্মচারী ইসলাম প্রথমে তাকে (মোমেনা বেওয়া) হাত ধরে মোছড় দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন।

এ সময় তার চার মাসের প্রসূতি মেয়ে জোয়ায়রা বেগম আটকানোসহ ঘটনার প্রতিবাদ করায় তাকেও ইসলাম চুল ধরে আছাড় দেওয়াসহ পেটে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়।

এতে সে ঘটনাস্থলেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। এ সময় প্রতিবেশী নারীরা তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায়সহ আমাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন।

ঘটনার সময় ইসলাম অকথ্যভাষায় গালিগালাজসহ বাড়ীঘর পুড়িয়ে ও উড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেয় ইসলাম।  এ ঘটনার পর থেকে তিনিসহ তার পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি মহোদয়কে আমার ছোটমেয়ে জানিয়েছে।

প্রতিবেশী গৃহবধূ শিরিন আক্তার ও রোকেয়া বেগম বলেন, গ্রামের বিদ্যুৎ মিস্ত্রি রহিম বিদ্যুৎ কর্মচারী ইসলামকে ডেকে এনে সংঘাত সৃষ্টি করিয়েছে।

ঘটনার সময় রহিমের বাড়ীর দরজায় দাঁড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও প্রসূতি মেয়ে ইসলামের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যুৎ কর্মচারী ইসলাম প্রথমে মোমেনা বেওয়াকে আছাড় দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় মারপিট করে।

এ সময় প্রসূতি মেয়ে জোয়ায়রা মাকে রক্ষায় এগিয়ে আসলে তাকেও মারপিটসহ পেটে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয় ইসলাম। এতে ঘটনাস্থলেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে ও

তার মাকে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার সময় বিদ্যুৎ কর্মচারী ইসলাম মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও মেয়েকে বিভিন্ন অকথ্যভাষায় গালিগালাজসহ ঘরবাড়ীসহ তাদেরকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

এ সময় গ্রামের অন্যান্য নারীরা প্রতিবাদসহ তেড়ে আসলে ইসলাম আত্মরক্ষায় রহিমের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। পরে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন গিয়ে সেখান থেকে ইসলামকে নিয়ে আসে।

এ ব্যাপারে মুঠোফোনে বিদ্যুৎ কর্মচারী মো. ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা স্ত্রী ও মেয়েকে মারপিটের কথা অস্বীকার করে বলেন, বিদু্যুৎ বিল সংক্রান্ত বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর সাথে তার কথা হয়।

এ সময় তাকে ফোনে গালাগালি করার কারণে সে ওই নম্বরটি বøাকলিস্টে রেখে দেন। পরে তাকে তার বন্ধু রহিম ডাকলে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় রহিমের বাড়ীর সামনে বিদ্যুৎ বিল

বেশী হওয়ার বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলার এক পর্যায়ে মোমেনা বেওয়া এবং তার মেয়ে জোয়ায়রা তাকে গালিগালাজ করার এক পর্যায়ে শার্টের কলার ধরে টানাটানি করতে শুরু করে।

এ সময় নিজের আত্মরক্ষায় সে তাদেরকে ধাক্কা দিলে দুইজনই পড়ে যায়। এতে জোয়ায়রা দেওয়ালের সাথে ধাক্কা লেগে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। থানার এসআই সেকেন্দর আলী বলেন,

ঘটনাটি জানার পরপরই ঘটনাস্থল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল।  গতকাল বুধবার তিনজনকে আসামী করে ৩২৩, ৩২৫, ৩৫৪, ৩৬০ ও ৫০৬ (২) ধারায় মামলা দায়ের করেন

প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার আহত স্ত্রী মোমেনা বেওয়া। ফুলবাড়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী মো. উজ্জ্বল আলী বলেন, ঘটনাটি বিদ্যুৎ কর্মচারী ইসলামের কাছে শুনেছেন।

বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি মহোদয়ও দেখতে বলেছেন।

ইসলাম বিদ্যুৎ অফিসের স্থায়ী কর্মচারী নয়, সে মাস্টাররোলে মিটার রিডার হিসেবে কাজ করে আসছেন। রংপুরে মিটিংয়ে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক কোন পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি।

তবে ফুলবাড়ী এসে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

আরও পড়ুন

×