জবি ক্যাম্পাসে বহিষ্কৃত ছাত্রদের দৌরাত্ম্য, কর্তৃপক্ষের নীরবতা 

জবি ক্যাম্পাসে বহিষ্কৃত ছাত্রদের দৌরাত্ম্য, কর্তৃপক্ষের নীরবতা 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) বহিষ্কৃত ছাত্রদের দৌরাত্ম্যে প্রতিনিয়ত অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এসব ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বহিষ্কারাদেশের তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাস ও এর আশেপাশের এলাকায় ইভটিজিং, চাঁদাবাজি ও মারামারির মতো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাচ্ছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের এসব অপকর্ম সম্পর্কে জানলেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে তাদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। অন্যদিকে বারংবার অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ায় এসব শিক্ষার্থী ক্রমেই মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিযুক্তদের বেশিরভাগই বিভিন্ন সময়ে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে শাস্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী। এ অবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করেন রাজনৈতিক ছত্রছায়া এবং প্রশাসনের উদাসীনতাই এদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইতিহাস বিভাগের ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী নূরে আলম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১১ব্যাচের আল সাদিক হৃদয় ইতিপূর্বে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার হলেও বর্তমানে ক্যাম্পাস ও এর আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঘটাচ্ছেন।  তাদের বিরুদ্ধে গত ১৩ তারিখ রাতে এক নারী শিক্ষার্থীকে উত্যক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে আসে, ইতিপূর্বে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের অক্টোবরে সাময়িক বহিষ্কার হয় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নূরে আলম।

একই বছর ১৫ নভেম্বর আল সাদিক হৃদয়কে এক টমটম চালককে মারধর ও ছাত্রলীগের দুইগ্রুপের  সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জারে মেসেজ চালাচালির জের ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাবেক দুই শিক্ষার্থীকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর অভিযোগে ৭ ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম হলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আল সাদিক হৃদয়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দোকানপাট থেকে নূরে আলম ও আল সদিক হৃদয় দৈনিক প্রায় ১০ হাজার টাকা চাঁদা তুলে থাকেন। জানা যায়, ফুচকা দোকান সহ ১৩টি চায়ের দোকান থেকে দৈনিক ১৫০-২০০ টাকা, ৩ টি খিচুড়ির দোকান থেকে ৩০০ টাকা ,২ টি ভাতের হোটেল থেকে ৩০০ টাকা ,রুটি-লুচির ৩ টি দোকান থেকে ৩০০ টাকা, সিংগারা-সমুচা দোকান থেকে ৫০০,  এছাড়াও শরবত, জুস ও শুকনো খাবারের দোকানসহ কয়েকটি পান-সিগারেটের দোকান থেকে ১০০-২০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। এছাড়াও গত ফেব্রুয়ারিতে প্রেমঘটিত কোন্দলের জেরে শাখা ছাত্রলীগের দুইগ্রুপের সংঘর্ষের সময়ও অস্ত্রহাতে দেখা গেছে নূরে আলমকে। 

এসমস্ত অভিযোগের বিষয়ে আল সাদিক হৃদয় বলেন,  টিএসসিতে আমরা সবসময় যাতায়াত করি, চা খাই। আমরা ওখান থেকে কোনো প্রকার চাঁদা নিই না। বরঞ্চ আমরা দোকানদারদের বলে দিয়েছি, কেউ চাঁদা চাইলে আমাদের জানাতে। 

নারী শিক্ষার্থী লাঞ্চিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ছোট ভাইয়ের বাইকে করে আসছিলাম। মেয়েটি সাইড দিচ্ছিল না। আমার ছোটভাই সোজা চালিয়ে দেয়। এতে মেয়েটির গায়ে লেগেছে কি লাগেনি। তারপরও আমি তাকে ৭-৮ বার সরি বলেছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বলেন, যারা ক্যাম্পাসে অপকর্মে করবে তাদের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে তাদের শাস্তি প্রদান করা হবে।

এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে যদি কেও চাঁদাবাজি করে থাকে এবং তাদের নাম জানতে পারলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো। আমরা এ ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাই।

আরও পড়ুন

×