প্রকাশিত: 25/12/2019
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) আওতাধীন দত্তনগর কৃষি খামারের ৩ উপ- পরিচালকের ধান চুরির দুর্নীতি ধরিয়ে দিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) আব্দুল কাদের।
একের পর এক হয়রানী মুলক বদলী ও বরখাস্তকৃত উপ-পরিচালকদের ষড়যন্ত্রে পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গত আগষ্ট মাসে বিএডিসির যশোর বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে প্রগ্রাম বহির্ভুত প্রায় ৫ কোটি টাকার বীজ সংরক্ষনের তথ্য তিনি জানতে পেরে বিষয়টি চিঠি লিখে সদস্য পরিচালককে জানান।
এই ধান মহেশপুরের দত্তনগর কৃষি খামারের ৩ উপ- পরিচালক যথাক্রমে তপন সাহা, ইন্দ্রজিৎ শিল ও মোঃ আক্তারুজ্জামান যশোরের উপ-পরিচালক আমিন উল্লার সহায়তা মজুদ রাখেন। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা ও সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নড়ে চড়ে বসে বিএডিসির হেড অফিস।
তারা বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে প্রমান পায়। দুর্নীতি দমন কমিশনও অনুসন্ধান চালিয়ে চোরাই বীজ জব্দ করে। এদিকে যশোরে থাকা অবস্থায় আব্দুল কাদেরকে মারধরসহ মোবাইলে চাঁদা দাবী করা হয়।
এ নিয়ে তিনি যশোর কতোয়ালী মডেল থানায় জিডি ও একাধিক অভিযোগ দেন। বীজ চুরির তথ্য উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানোর পর ৯ সেপ্টম্বর বিএডিসির সচিব আব্দুল লতিফ মোল্লা তার দপ্তরের ১৮৯৯ স্মারকের এক আদেশে আব্দুল কাদেরকে যশোর থেকে ঝিনাইদহে বদলী করেন। প্রায় দুই মাস হলো উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) আব্দুল কাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ঝিনাইদহে বসবাস করছেন।
অথচ দুই মাস যেতে না যেতেই আব্দুল কাদেরকে বিএডিসির ব্রাক্ষনবাড়িয়া দপ্তরে বদলীর আদেশ হয়েছে। এই ঘন ঘন বদলীর কারণে বিএডিসিতে সৎ ও নিষ্ঠাবান হিসেবে পরিচিত উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল কাদের অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে ধান চুরির দায়ে বরখাস্তকৃত চার উপ-পরিচালকের একজন হচ্ছে আমিন উল্লা। তার বাড়ি বিএডিসির ব্রাক্ষনবাড়িয়া দপ্তরের হবিগঞ্জ। নতুন আদেশে উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) আব্দুল কাদের কেও ব্রাক্ষনবাড়িয়া দপ্তরের হবিগঞ্জ বদলী করা হয়েছে।
ফলে সেখানে পোস্টিং হলে তার জীবন বিপন্ন হতে পারে এমন আশংকা করছেন তার পরিবার। এ বিষয়ে উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) আব্দুল কাদের তার বদলীর খবরের সত্যতা স্বীকার করে জানান, ঘন ঘন বদলীর কারণে তিনি মানসিক ভাবে খুবই বিপর্যস্ত। এ বিষয়ে তিনি মিডিয়ার সাথে কথা বলতে পারছেন না।
উল্লেখ্য মহেশপুরের দত্তনগর কৃষি খামারের গোকুলনগর ইউনিটের উপ-পরিচালক তপন কুমার সাহা, করিঞ্চা খামারের উপ- পরিচালক ইন্দ্রজিৎ চন্দ্র শীল, পাথিলা কৃষি খামারের উপ-পরিচালক আক্তারুজ্জামান তালুকদার এবং যশোর বীজ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রর উপ-পরিচালক মো. আমিন উল্লা কর্মসুচি বর্হিভুত এক’শ ২৯ দশমিক ২২ মেট্রিক টন এস এল ৮ এইচ হাইব্রিড ধান বীজ মজুদ করেন।
এ বীজের মধ্যে ৭৫ দশমিক ০৭৫ মেট্রিক টন গোকুলনগর খামার, ৩২ দশমিক ১১ মেট্রিক টন পাথিলা খামার ও ২২ দশমিক ০৩৫ মেট্রিক টন করিঞ্চা খামার থেকে কর্তৃপক্ষের কোন অনুমোদন ও চালান ব্যাতিরেকে যশোর বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে চুরি করে বিক্রির জন্য মজুদ রাখা হয়।
ফলে তদন্ত করে সত্য প্রমানিত হওয়ায় দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচারণ, চুরি, আত্মসাৎ, তহবিল তছরুপ ও প্রতারণার অভিযোগে গত ৯ সেপ্টেম্বর উল্লেখিত ৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়। বর্তমান তাদের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা চলছে।