চাহিদা মাফিক টাকা না দিলে জুটত ক্রসফায়ার

প্রকাশিত: 09/08/2020

নিজস্ব প্রতিবেদন :

চাহিদা মাফিক টাকা না দিলে জুটত ক্রসফায়ার

টেকনাফ থানার সদ্য বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নানান অপকর্ম একে একে বেরিয়ে আসছে। তার অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার মানুষের আত্মীয়স্বজন মুখ খোলায় গা শিউরে ওঠার মতো সব ভয়ংকর ঘটনা প্রকাশ পাচ্ছে।

চাহিদা মাফিক টাকা দিতে না পারলেই মিথ্যা অজুহাতে আটক ব্যক্তিদের ভাগ্যে জুটত ক্রসফায়ার।সাবেক মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খানের হত্যার ঘটনায় প্রদীপের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তার নানা অমানবিক ও লোমহর্ষক ঘটনা বেরিয়ে আসছে।

টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সিএনজিচালক আবদুল জলিলকে মাদক উদ্ধারের ঘটনায় আটকের সাত মাস পর ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। টেকনাফ থানার পুলিশ প্রথমে মাদক মামলা দিয়ে তাকে হেফাজতে নেয়।

এরপর তার পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দেয়া হলেও জলিলের মুক্তি মেলেনি। পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধের পর তার লাশের সন্ধান মেলে মর্গে। এ বছরের ৭ জুলাই গভীর রাতে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে জলিল নিহত হন।

জলিলের হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন তার স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম।তিনি জানান, ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর কক্সবাজারের আদালতপাড়ার মসজিদ মার্কেটে গিয়েছিলেন জলিল। ওই সময় ডিবি পুলিশের এক ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন তাকে আটক করে। এ খবর পেয়ে তার সন্ধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন দফতরে যাই। কিন্তু কোথাও তার খোঁজ পাইনি। কিছুদিন পর প্রদীপের টর্চার সেল থেকে জেলহাজতে যাওয়া হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. জাহেদের কাছ থেকে জলিলের খবর পাই।

ছেনুয়ারা বেগম আরও জানান, প্রদীপের টর্চার সেলে জলিল আছেন বলে জানতে পারেন। কয়েকবারের চেষ্টার পর তিনি প্রদীপের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। এ সময় প্রদীপ জানান, জলিলের মুক্তির জন্য ৩০ লাখ টাকা লাগবে, এ টাকা না দিলে তাকে ক্রসফায়ারে দেয়া হবে।

ছেনুয়ারা আরও বলেন, স্বামীর মুক্তির জন্য প্রদীপকে পাঁচ লাখ টাকা দিই। জলিলের বিদেশ যাওয়ার জন্য জমিয়ে রাখা টাকা দিয়েও তাকে মুক্ত করতে পারিনি। শত চেষ্টায়ও স্বামীর সঙ্গে দেখাও করতে পারিনি।

জলিলের বড় ভাই আবদুর রশিদ জানান, হোয়াইক্যং খারাংখালী সীমান্তে ৭ জুলাই গভীর রাতে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে জলিল নিহত হয়েছেন বলে আমরা জানতে পারি। খবর পেয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে জলিলের লাশ দেখতে পাই। কিন্তু তাকে চেনার কোনো উপায় ছিল না। ৩৪ বছরের যুবক জলিল চুল-দাড়ি ও শরীরের অবস্থা দেখে মনে হয়েছিল ৯০ বছরের বৃদ্ধ।

আরও পড়ুন

×