প্রকাশিত: 13/08/2020
বিগত ১০ আগষ্ট ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ যুগান্তর পত্রিকার অনলাইন ভার্সন এ প্রকাশিত “ আলুর তরকারি খেতে না চাওয়ায় স্বামীকে বেধড়ক পিটুনি!” একটি সংবাদ আমার এক বন্ধু আমাকে ট্যাগ করে আমার দৃষ্টি গোচরীভুক্ত করতে হয়তবা। ধন্যবাদ সেই বন্ধুকে। সংবাদটি পাঠে আমি খুবই মর্মাহত, দু:খিত ও বেদনাতুর। সংবাদটি আমাকে খুবই পীড়া দিয়েছে, কষ্ট মনে হয়েছে।সংবাদটির মর্মার্থ হচেছ, বেচারা স্বামী ডায়াবেটিস রোগি থাকায় আলু খেতে অনিহা প্রকাশ করায় স্ত্রী নামক ব্যক্তিত্ব তিনিকে বেধড়ক পিটিয়ে হাসপাতালের বেডে পৌছিয়েছেন। এখন কথা হল, স্বামী রোগাক্রান্ত থাকায় তরকারি খেতে অনিহা প্রকাশ করেছেন। স্বামী না হয়ে অন্য কেউ হলেও তো এমনতর ঘটনা সংগঠিত হবার কথা নয়।নির্যাতীত ব্যক্তি ঐ মহিলার স্বামী। প্রশ্ন এসে যায় স্বামীর অধিকার নিয়ে। যাক আমি সে দিকে যাচিছ না। আমার কথা হল, আমি কোন প্রকার নির্যাতনের পক্ষপাতি নয়। না নারী নির্যাতন, না পুরুষ নির্যাতন, না সন্তান নির্যাতন, না বন্ধু নির্যাতন, না প্রতিবেশি নির্যাতন। মানে খুবই সহজ কোন প্রকার নির্যাতনই ভাল নয় মোটেই।এ কথা হোক ধর্মীয়, হোক সামাজিক কোন ক্ষেত্রেই তা গ্রহণ যোগ্য নয়।মানবাধিকার ও তাই বলেছে। অথবা সর্বক্ষেত্রে নির্যাতন পরিহার করার কথা বলা আছে আইন আদালতে।দয়া করে কেউ আবার আমাকে পুরুষের পক্ষে ওকালতি করছি তা মোটেই ভাববেন না। আমি এক কথায় সর্ব প্রকার নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলি বা বলছি।
স্বামী বেচারার অপরাধ খেতে অনিহা প্রকাশ। এদিকে সংবাদে উল্লেখ আছে স্বামী তার দায়ের করা মামলায় বলেছেন,“আমি তখনই মানতে চাইনি। স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করি আমার শরীরের জন্য আলু ভালো নয় জেনেও কেন আলুর তরকারি রান্না করলে। এই কথা শুনতে আমার স্ত্রীর ভালো লাগেনি। এরপরই সে আমায় হেনস্থা করতে শুরু করে।”পাঠক চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আর মনে করি না।
স্বামী স্ত্রী যুগল জীবনের অধিকারী। একজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি যা আহার রুপে গ্রহণ করলে জীবন সংহার এর সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে অনিহা প্রকাশ করতেই পারে। তাছাড়া সংবাদে আরো উল্লেখ আছে যে, আলুর তরকারি স্বামীর রোগের কারনে ক্ষতিকর।তা জেনে শুনে ঐ মহিলা তা রন্ধন করে খাওয়ানোর পক্ষপাতি। না জেনে করলে হয়তো তা ধর্তব্যে আসতো না।যাহোক তা বিচারিক বিষয় সে সম্বন্ধে আদালত রায় দেবেন বা বিচার করবেন।
বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ হচ্ছে নির্যাতীত আমাদের দেশেও। যা অনেক সময় পুরুষরা লোক লজ্জার ভয়ে তা প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক। থেকে যাচ্ছে আড়ালে আবড়ালে। নারী হচ্ছেন সম্মানীয়। তারা মা,বোন, স্ত্রীর মর্যাদায় অধিষ্টিত। কিন্তু অনেক মহিলার কারনে পুরুষ হয় বিপথগামী। অথবা নারীর কারনে পুরুষ হয়ে যায় বা নারী বাধ্য করেন পুরুষকে বিপথগামী হবার।
তাই বলে আমি এক তরফা নারীকে দোষারুপ করে পুরুষকে সার্টিফিকেট দিচ্ছি না যে পুরুষ ধুয়া তুলশী পাতা দয়া করে কেহ তা ভাববেন না।অনুরুপ অনেক পুরুষ আছেন নারীকে বিপথে পরিচালনার পরিচালকের ভুমিকায়।তবে গ্রামাঞ্চলে অনেক প্রবীণের মুখে শুনেছি, শুনি যে কোন নারী ইচছা করলে একজন পুরুষকে সুপথে পরিচালিত করতে পারেন অনায়াসে।
যেমন একজন স্বামী যদি চুরি করে যে কোন মালামাল আনেন, আর তা স্ত্রী নামক ব্যক্তি গ্রহণ না করেন, তবে ঐ পুরুষ চুরি ছেড়ে অন্য পথে মানে সুপথে আসতে বাধ্য। ব্যতিক্রম যে নেই তা কিন্তু নয়। ব্যতিক্রমকে ব্যতিক্রম রুপে আমরা ধরে নিতে চাই। আরো উল্লেখ করার মতো একজন স্ত্রী যেমন স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে দেবার ক্ষেত্রে যে পরিমাণে বাঁধা প্রদান করেন, প্রতিবাদী হয়ে উঠেন, অনুরুপ ভুমিকায় নারী আসন গেড়ে বসলে স্বামী বেচারা, পুরুষটি সুপথে আসার ক্ষেত্রে বহুলাংশে বাধ্য।আমার এ কথাটি আশা করি অনেকেই সমর্থন করবেন।
মানুষের সংসার জীবন বড় জটিল ও ভিন্নমুখী সমস্যায় জর্জরিত। একই ক্ষেত্রে একজন পুরুষকে শুধু পিতার দায়িত্ব পালন করলেই চলে না, তাকে একাধারে স্বামী,ভাই, চাচা, বন্ধু ইত্যাদি নানাবিধ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। সংসার নামক জগতে শান্তি আনয়নের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী’র মধুর আচরণ ও পরস্পরকে গভীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধার ওপর নির্ভরশীল হতে হয়।আমি ১৩/৮/২০ খ্রিষ্টাব্দ ফেসবুকে পোষ্টকৃত একটি ভিডিও দেখলাম একজন নারী তারই গৃহে পরিচারিকার কাজে নিয়োজিত বালিকাটিকে বর্ণনাতীত অমানসিক শারিরিক নির্যাতন করছেন যা ভাষায় বর্ণনা করা আমার পক্ষে অসম্ভব।অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নারীই নারীর শত্রু।সত্তর দশকে আমি স্বচক্ষে দেখেছি, আমাদের মা-চাচীরা ফজরের নামাজ নিয়মিত আদায় করে শিশু সন্তানদের দেখ-ভালের পাশাপাশি পরিবারস্থ সবাইকে নাস্তা তৈরী করে মাঠে পাঠিয়ে, ধান গাইল-ছিয়া সহযোগে কুটে মরিচ বাটা, হলুদ বাটা, তরিতরকারি প্রস্তুত পর্ব সমাপনান্তে সাংসারিক কাজকর্ম সম্পাদন করতে।
সময় বদলের পাশাপাশি যুগ ও পাল্টেছে। আজ নেই এ সমস্ত কাজকর্ম।সবই আজ বাজারে প্যাকেটজাত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে হয়েছে সহজলভ্য।নেই আগের মত ধান সংরক্ষণের কাজ।তথাপি অনেক ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয় নারীরা আরো সহজতর উপায় না প্রাপ্তির অতৃপ্তি।স্বামীর সাধ্যাতীত ভরণ পোষণের দায়ভার স্বামীর উপর বর্তায়। স্বামী ভদ্রলোক দিনমান খেটে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে আয় দিয়ে সংসার নামক যন্ত্রের হাল ধরেছে।এ সময় স্বামী ভদ্রলোক আশা পোষন করতেই পারে একটু তৃপ্তির ঢ়েকুর, স্ত্রীর ভালবাসার। এক্ষেত্রে ও অনেক সময় অনেক নারী তৃপ্তি প্রকাশের পরিবর্তে অতৃপ্তির, মনতুষ্টির পরিবর্তে ভৎসনা ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে।এ কি নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে না।
আমি আমার এক বন্ধুর স্ত্রীর কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই যা অকাট্য সত্য। বন্ধুটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। সে সমপর্যায়ভুক্ত একটি পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে তুলেছে।তারই এক চাচাতো ভাই একটু দরিদ্র।এক জায়গায় যাবেন উভয়ের স্ত্রীআত্মীয়তায়।
দরিদ্র বঁধুটি বন্ধুর বউয়ের একটি শাড়ি চেয়ে বসল পরে আত্মীয় বাড়িতে যেতে। বন্ধুর বউ রেগে যায়। তার শাড়ি দেবে না। স্বামী বেচারা বলেও দিতে পারল না।বরঞ্চ স্বামীর মুখের উপর বলে বসল, ঐ মেয়ে আমার শাড়ি পরার যোগ্য নয়।শুধু মাত্র গরিব বলে।স্বামী বেচারা মানে বন্ধুটি বা তারই ভাইয়ের বঁধুটি কথাটি শুনলে কি পরিমাণ আঘাত পেতে পারে।বন্ধুটি এখন বাধ্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে, করতে বাধ্য করা হল লোক-লজ্জার ভয়ে।এ কি নির্যাতন নয়। এতো অহংকার।
পাঠক-বন্ধুরা এ অহংকারি বঁধুটির স্বামীর ঘর করা হয়নি।মধ্যবিত্ত পরিবারের হয়ে এতো যার অহংকার, সে যদি হতো ধনীর মেয়ে বা ধনীর দুলালী, তবে কি করতো প্রশ্ন থেকেই যায়।আমার এক দাদি ছিলেন, তিনি অনেক সময় কথা প্রসঙ্গে বলতেন যা আমি নিজ কানে শুনেছি। তিনি বলতেন এ যুগের মেয়েরা (সব নয়) আটা, ময়দা, চন, বুতু, পাউডার মেখে (মাখে), আমরা যে ব্যবহার করিনি, কই কোন অসুবিধা তো হয়নি।
অনেক মেয়ে আছে যারা অতি লোভী, অহংকারি, উচ্চবিলাসী।তাদের এ সকল আব্দার রক্ষা কল্পে অনেক পুরুষ বিপথগামী হতে বাধ্য, শুধু মাত্র সংসার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। অনেক পুরুষকে ঘুষ খেতে বাধ্য করে বা স্ত্রীর মন রক্ষার্থে বা সংসার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ঘুষের বা অবৈধ পন্থায় আয় রোজগারের পথে হয় ধাবিত।উদাহরণ অনেক আছে, দেয়া যাবে।এ জাতীয় নারীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে।আমি আর দীর্ঘায়িত করব না আপনাদের ধৈর্যচ্যুতির আশংকায়।পরিশেষে পুরুষ নির্যাতনকারি সকল নারীদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক এ কামনান্তে।প্রত্যেকটি পরিবার হোক শান্তি, সুখের নীড় এ প্রত্যাশায়।
লেখক মিজানুর রহমান মিজান, সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব, বিশ্বনাথ, সিলেট।