প্রকাশিত: 10/10/2020
বাগেরহাটের শরণখোলায় ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা দ্বিতীয় স্ত্রী জোছনা বেগমকে (৩৫) টুকরো টুকরো করে কেটে হত্যা করেছেন তাফালবাড়ী ক্যাম্পে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল মো. সাদ্দাম হোসেন (৩০)।
গত বৃহস্পতিবার ভোরে তাফালবাড়ী ফাঁড়িসংলগ্ন একটি ভাড়া বাসায় রোমহর্ষক এ ঘটনা ঘটে। হত্যার পর চার টুকরো লাশ বস্তায় ও গর্ভের ভ্রুণ পলিথিনের প্যাকেটে ভরে গুম করারও চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তার আগেই সাদ্দাম হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
ঘাতক পুলিশ কনস্টেবলের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়ধাল গ্রামে। এ ঘটনায় নিহতের মা জুলেখা বেগম বাদী হয়ে শরণখোলা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আর পুলিশ কনস্টেবলকে গতকাল দুপুরে আদালতের মাধ্যমে বাগেরহাট কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাগেরহাট পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় জানান, কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেন চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাচ্চাসহ স্বামীপরিত্যক্তা জোছনা বেগমকে দ্বিতীয় বিয়ে করে শরণখোলায় নিয়ে আসেন।
জোছনার প্রথম পক্ষে জিসান নামে ১০ বছরের একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে সাদ্দাম শরণখোলার তাফালবাড়ী পুলিশ ফাঁড়িসংলগ্ন ভাড়া বাসায় থাকতেন। রাতে জোছনার আগের ঘরের বাচ্চা নিয়ে কলহের জেরে তাকে হত্যা করেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাদ্দাম স্বীকার করেছেন। জোছনা খুলনার রূপসা উপজেলার চানপুর (নারকেলি) গ্রামের মৃত আবু বকর শেখের মেয়ে। সাদ্দামের প্রথম স্ত্রী সাতক্ষীরায় সাদ্দামের বাবা-মায়ের কাছে থাকেন।
যেভাবে খুন করা হয় : শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান জানান, জোছনা বেগমের সঙ্গেই থাকত তার প্রথম পক্ষের একমাত্র ছেলে জিসান। তাফালবাড়ী পুলিশ ফাঁড়িসংলগ্ন ভাড়া বাসায় জিসান প্রতিবেশী এক শিশুর সঙ্গে বুধবার বিকালে হাতাহাতি করে। ওই শিশু সাদ্দামকে বিষয়টি জানালে তিনি জিসানকে কান ধরে উঠবস করান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জোছনা স্বামীকে গালাগাল করেন।
এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ চরমে উঠলে বৃহস্পতিবার ভোরে জোছনাকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন সাদ্দাম। পরে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করেন। কাটেন দুই হাতের কব্জি। তারপর পেট কেটে গর্ভের ছয় মাসের ভ্রুণ বের করে পলিথিনে প্যাকেট করেন। শেষে স্ত্রীর চার টুকরো লাশ ও ভ্রুণ বস্তাবন্দী করে রেখে দেন। রাতের বেলা পাশের বলেশ্বর নদে ফেলে বা মাটিতে পুঁতে লাশ গুম করার জন্য সাদ্দাম অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তার আগেই ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়।
কাজের বুয়া বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ওই বাসায় গিয়ে দেখতে পান সাদ্দাম একটি বস্তায় টুকরো-টুকরো লাশ ভরছেন। সাদ্দাম তাকে অর্থের প্রলোভন দিয়ে কাউকে বিষয়টি না জানাতে বলেন। কাজের বুয়া ওই বাসা থেকে বের হয়ে বিষয়টি স্থানীয় লোকজনকে জানান। লোকজন তখন বিষয়টি শরণখোলা থানায় জানান।
পুলিশ রাত ১১টার দিকে এসে ভ্রুণসহ বস্তাবন্দী জোছনার চার টুকরো লাশ উদ্ধার এবং গ্রেফতার করে ঘাতক সাদ্দামকে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাদ্দাম হত্যাকান্ডের এ তথ্য জানিয়েছেন। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর আরও বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।