প্রকাশিত: 14/10/2020
নিয়মিত নেশা ছিল গাঁজা। আর জন্য টাকা প্রয়োজন; তাই ছোটখাটো চুরি ছিল তাদের নিত্যদিনের কাজ। হঠাৎ পরিকল্পনা হল, এভাবে ছোটখাটো চুরি আর কতদিন! একটা বড়দান মেরে রাজার হালে গাঁজা হলে তো বেশ হয়। রাজার হালে গাঁজা খাওয়ার আশায় পরিকল্পনা সাজানো হয় হত্যাকান্ডের। সেই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী-ই ব্যাটারি চালিত রিকশাভ্যান চালক হাছেন বাবুকে হত্যা করে তার রিকশাভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যানা তারা।
হত্যাকান্ডের এমনই বর্ণনা দিয়েছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের রিকশাভ্যান চালক হাছেন বাবু হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আটক জুয়েল রানা (২০)। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে গত সোমবার দিবাগত রাত ২টায় হাছেন বাবু হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আটক জুয়েল রানাকে কুশলপুর খেলার মাঠ থেকে আটক করে ফুলবাড়ী থানা পুলিশ।
আটক জুয়েল রানা বলিভদ্রপুরের সামসুল আলমের ছেলে এবং বলিভদ্রপুর এমএম দাখিল মাদ্রাসার ৮ শ্রেণির শিক্ষার্থী। মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) নিজবাড়ি থেকে ব্যাটারি চালিত রিকশাভ্যানটি নিয়ে বের হন হাছেন বাবু। ওইদিন গভীর রাত নেমে আসলেও বাবু নিজ বাড়িতে না ফেরায় তাকে খুঁজাখুঁজি শুরু করে পরিবারের লোকজন।
পরের দিন শুক্রবার (৯ অক্টোবর) পাশের গ্রাম বড়নগর বলিভদ্রপুরে জুয়েলের কলাবাগানে হাছেন বাবুর মরদেহের সন্ধান পান তারা। পরে সেখানে ছুটে গিয়ে মরদেহটি শনাক্ত করেন এবং ওইদিনই নিহত হাছেন বাবুর চাচা আব্দুর রউফ মন্ডল বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে ফুলবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ৮।
মামলার তদন্তকারী উপ-পরিদর্শক (এসআই) পলাশ কুমার রায় বলেন, নিহত হাছেন বাবু হত্যা মামলা মামলা দায়ের পর থেকেই ফুলবাড়ী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিয়া মোহাম্মদ আশিষ বিন হাছানের নির্দেশে এবং থানার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে হত্যাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত ছিল। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে গত সোমবার দিবাগত রাত ২টায় হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত জুয়েল রানাকে আটক করা হয়।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুল আমিনের কাছে আটক জুয়েল রানা হত্যাকান্ডের বিস্তারিত জানিয়ে হত্যাকান্ডের জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে। সাথেই হত্যাকান্ডের মূল হত্যাকারীর বিস্তারিত তথ্য ম্যাজিস্ট্রেটকে জানায় জুয়েল রানা। পরে তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্র্দেশ দেন ওই ম্যাজিস্ট্রেট।
স্বীকারোক্তিতে জুয়েল রানা বলেন, তারা নিয়মিত নেশা করতেন এবং নেশার টাকা জোগারে ছোটখাটো চুরি করতেন। মোটা অঙ্কে নেশার টাকার জন্য পরিকল্পনা করেন জুয়েল ও মূল হত্যাকারী। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৮ অক্টোবর রাত ৮টায় রিকশাভ্যান চালক হাছেন বাবুকে বিরামপুর উপজেলায় যাওয়া কথা বলে ভাড়া করেন জুয়েল।
বিরামপুর যাওয়ার পথে বড়নগর বলিভদ্রপুর ভাটপাড়ি এলাকায় রাস্তার পাশের জামিলের কলার বাগানের কাছে এলে ভ্যানটি থামিয়ে হাছেন বাবুকে নেশা করার প্রস্তাব দেয় জুয়েল। সেখানে পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন মূল হত্যাকারী। জুয়েল কলাবাগানের ভিতরে হাছেন বাবুকে নিয়ে যায় এবং সেখানে বসে মূল হত্যাকারীসহ হাছেন বাবু ও জুয়েল আড্ডা দেন এবং মাদক সেবন করেন তারা।
তবে হাছেন বাবু মাদক সেবন করেন’নি। আড্ডার এক পর্যায়ে হাছেন বাবু প্রর্সাব করেতে গেলে পেছন থেকে তার মাথায় কুড়াল দিয়ে কোপায় মূল হত্যাকারী। পরে তার গলায় কোপানো হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় হাছেন বাবুকে দেখে জুয়েল দৌঁড়ে ভ্যানে গিয়ে বসে।
ৎপরে হাছেন বাবুর মৃত্যু নিশ্চিত করে মূল হত্যাকারী ভ্যানের কাছে আসলে তারা দুজনে হাছেন বাবুর ভ্যানটি নিয়ে বিরামপুর উপজেলায় পালিয়ে যান। পরের দিন ভ্যানটি বিক্রির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে একটি গ্যারেজে ভ্যানটি রেখে পালিয়ে যান জুয়েলসহ মূল হত্যাকারী।
থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে রিকশাভ্যান চালক হাছেন বাবু হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত জুয়েল রানাকে আটক করা হয়েছে। জুয়েল রানা হত্যাকান্ডের ঘটনা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকান্ডের মূল আসামীকে আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।