প্রকাশিত: 19/11/2020
দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে এখন চলছে রাজস্ব ফাঁকির মহাউৎসব। গত ১৫ দিনে রাজস্ব ফাকির অভিযোগে ৫ কোটি টাকার পন্য চালান আটক করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবুও থামানো যাচ্ছে না রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতা।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে বছরে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বানিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেনাপোল কাস্টমস হাউসের জন্য চলতি অর্থ বছরে ৬ হাজার ৫’শ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে। একটি অসাধু চক্র রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পুরনে অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে। রাজস্ব ফাকির অভিযোগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ইতমধ্যে ৭ টি সিএন্ডএফ এজেন্ট লাইসেন্স বাতিল করেছেন।
চকলেটের চালানে উন্নত মানের শাড়ী, ব্লিচিং পাউডারের চালানে কফি ও ওষুধ, মেশিনারি পার্টস এর ভেতরে প্যাডলক ও রেক্সিন, আমদানিকৃত ঘোষনাতিরিক্ত ১৯ টন মাছ আটক করা হয়। জরিমানা বাবদ এসব চালান থেকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকার জরিমানা আদায় করেছে। জব্দকৃত পণ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করে নিলাম করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অবশ্য রাজস্ব ফাকি রোধে ঝটিকা অভিযান শুরু করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। পরিচ্ছন্ন ব্যবসায়ীরা চাইছে এসব রাজস্ব ফাকি বাজাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের।
রাঁজস্ব ফাকির ঘটনায় ৭টি সিএন্ডএফ লাইসেন্স বাতিল করেছে কাস্টমস কতৃপক্ষ।বাতিল কৃত লাইসেন্স গুলো হচেছ রিমু এন্টারপ্রাইজ,তালুকদার এন্টারপ্রাইজ, এশিয়া এন্টাপ্রাইজ, সানি ইন্টারন্যাশনাল, মদিনা এন্টারপ্রাইজ (ভাড়ায় খাটানো হয়), মুক্তি এন্টারপ্রাইজ, রিয়াংকা এন্টারপাইজ। কমিশনার আজিজুর রহমানের নির্দেশে বেনাপোল কাস্টমস’র ডিপুটি কমিশনার অনুপম চাকমা আইআরএম দায়িত্বপ্রাপ্ত এসব পণ্য চালানগুলো আটক করেন।
সবচেয়ে বড় ধরনের রাজস্ব ফাকির ঘটনা ঘটায় বেনাপোলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিড এন্টারপ্রাইজ ৪ হাজার ৬৭৫ কেজি ব্লিচিং পাউডার ঘোষণা দিয়ে বস্তার মধ্যে কফি, ওষুধ জাতীয় পণ্য আমদানি করে। যার মেনিফেস্ট নম্বর হলো ২৭৫৭৮/১। বিল অব এন্টি নং- সি-৫৪৫২৫।প্রতিষ্ঠানটির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বেনাপোলের রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল। এতে ঘোষণার অতিরিক্ত ৩৬০ কেজি কফি ও ১৯২৭ কেজি ওষুধ জাতীয় পণ্য আটক করা হয়। এই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মূল মালিক হচ্ছেন রতন কৃষ্ণ হালদার।
এদিকে বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি বেড়েই চলছে। কখনও কাস্টমস-বন্দরকে ম্যানেজ করে আবার কখনও বিভিন্ন পরিচয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে চলছে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির উৎসব। মাঝে মধ্যে দু-একটি চালান আটক হলেও অধিকাংশই থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, শুল্ক ফাঁকির ঘটনা দুঃখজনক। এসব ঘটনায় প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুন হচ্ছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের হয়রানি বেড়ে যাচ্ছে।
বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, আমরা শুল্ক ফাঁকি প্রতিরোধে অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে আমরা অনেক প্রতিষ্ঠানের সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স বাতিল করেছি। মিথ্যা ঘোষনায় যে সব পণ্য আমদানি করা হচ্ছে তাদের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল ও পণ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করছি।
তিনি আরো জানান, রাজস্ব ফাঁকি রোধে বেনাপোল কাস্টমস হাউস জিরো টলারেন্স ভূমিকা গ্রহন করেছে। বন্দরে রাতে কাস্টম’র একাধিক মোবাইল টিম কাজ করছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনে তৎপর রয়েছি।