তিনবার প্রস্তাব পেয়েও কর্তৃপক্ষকে না জানানোর কথা যেহেতু প্রমাণিত হয়েছে, ধারা অনুযায়ী শাস্তি পেয়েছেন সাকিব।

তিনবার প্রস্তাব পেয়েও কর্তৃপক্ষকে না জানানোর কথা যেহেতু প্রমাণিত হয়েছে, ধারা অনুযায়ী শাস্তি পেয়েছেন সাকিব।

ক্রিকেট বোর্ড, কর্মকর্তা, খেলা ও খেলোয়াড়দের নিয়ে তৈরি হওয়া এমন উদ্ভটতম পরিস্থিতিতে অনেকে অনেক ধরনের মন্তব্য করতেছেন বিশেষ করে বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার সাকিবুল হাসানকে তার ভুলের জন্য শাস্তি প্রদানকে অনেকেই ভিন্ন ভাবে দেখতেছেন যা মোটেই কাম্য নই। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অর্জন, বিশ্বব্যাপি পরিচিতি ও গৌরবের পিছনে এই সাকিবের অনেক বেশি অবদান রয়েছে তা সবাইকে মানতে হবে কিন্তু তাই বলে গুরুতর অপরাধ করলে সে ছাড়া পেয়ে যাবে এমন তু কিছু নই, তাকে তু শাস্তি পেতেই হবে। এখন কথা হচ্ছে কেমন অপরাধের জন্য কেমন শাস্তি হওয়া উচিৎ ছিল, এটা কি খুব বেশি হয়েগেল কিনা? এটা ঠিক করবেন প্রচলিত আইন প্রশাসন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আইসিসির তদন্ত থেকে যতটুকু নিশ্চিত হতে পেরেছেন, তা প্রকাশ করা হয়েছে বিস্তারিত। ২০১৭ এর নভেম্বরে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে বিপিএল খেলেছেন সাকিব। সে সময় আগারওয়াল সাকিবের ফোন নম্বর পান। সেইসময় অন্য ক্রিকেটারদের ফোন নম্বরও চেয়েছিলেন আগারওয়াল। নভেম্বরের প্রাই শেষের দিকে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে সাকিবের সঙ্গে দেখা করতে বারবার জোর করেন আগারওয়াল। জানুয়ারি ২০১৮ তে দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে বাংলাদেশ।

ওই টুর্নামেন্টের সময় আবার আগারওয়ালের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকবার আলোচনা হয় সাকিবের। ১৯ জানুয়ারির ম্যাচে সাকিব সেরা খেলোয়াড় হন। সেদিন সাকিবকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি বার্তা পাঠান আগারওয়াল। পাশাপাশি এটাও বলেন, “আমরা কি এখানে কাজ করব নাকি আইপিএল পর্যন্ত অপেক্ষা করব?” ‘কাজ’ বলতে এখানে দলের ভেতরের খবর বোঝানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিসি। এই যোগাযোগের কথা সাকিব আইসিসি বা বিসিবি বা কোনো ধরনের দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষকে জানাননি। চার দিন পর আবার আগারওয়াল বার্তা পাঠান সাকিবকে, “ব্রো, এই সিরিজে কিছু হবে?” সাকিব জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, কিছু হওয়া বলতে বোঝানো হচ্ছিল দলের ভেতরের খবর জানিয়ে দেওয়াকে।

যথারীতি এই ঘটনাও সাকিব সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষকে জানাননি। এপ্রিল ২০১৮ আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে খেলেন সাকিব। আগারওয়াল এবার একজন ক্রিকেটারের ব্যাপারে জানতে চান যে সে ওই ম্যাচে খেলছে কিনা। আবারও জানতে চান দলের ভেতরের খবর। সেখানেই না থেমে সাকিবের সঙ্গে বিটকয়েন,

ডলার অ্যাকাউন্ট নিয়ে কথা বলেন আগারওয়াল। জানতে চান সাকিবের ডলার অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত। এই আলোচনার সময়ই সাকিব বলেন, যে তিনি ‘আগে’ দেখা করতে চান আগারওয়ালের সঙ্গে। সেদিনের বেশ কিছু বার্তা সাকিব মুছে ফেলেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সাকিব জানান, সেগুলো ছিল দলের ভেতরে খবর জানতে চাওয়ার কথা। আইসিসি জানিয়েছে, ওই আলোচনার পরই আগারওয়ালকে নিয়ে সাকিবের ভাবনা হতে থাকে। আগারওয়াল একজন জুয়াড়ি হতে পারেন ভেবেও সাকিবের ধারণা হয়। তবে সেদিনের কথাও সাকিব সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষকে জানায়নি।

তদন্তের অংশ হিসেবে গত ২৩ জানুয়ারি ও ২৭ অগাস্ট সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে সাকিব জানান যে, আগারওয়ালের কাছ থেকে কয়েকবার প্রস্তাব পেয়েও তিনি তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাননি। এটাও বলেন যে, তিনি জানতেন প্রস্তাব পেয়েও না জানানো মানে আইসিসির বিধি ভঙ্গ করা।আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের কাছে সাকিব দাবি করেছেন, আগারওয়ালের অনুরোধে সাড়া দিয়ে কোনো তথ্য তিনি জোগান দেননি। আগারওয়ালের কাছ থেকে অর্থ বা উপঢৌকন নেননিও বলে দাবি করেছেন। তিনবার প্রস্তাব পেয়েও কর্তৃপক্ষকে না জানানোর কথা যেহেতু প্রমাণিত হয়েছে, ধারা অনুযায়ী শাস্তি পেয়েছেন সাকিব।

ক্রিকেটের এহেন পরিস্থিতিতে আমরা হতবাক, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথা চিন্তা করে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মানের কথা চিন্তা করে আমাদের প্রিয় খেলোয়াড়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের শোনালি ফসল, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবুল হাসানের অপরাধের ধরন ও মানবিক দিক বিবেচনা ও চিন্তা করে তার শাস্তি কমিয়ে আনা হোক এবং যদি সম্ভব হয় তাকে মাফকরে দেওয়া হোক। ক্ষমা এক মহত্তম গুণ, ক্ষমা পেলে ও দিলে তার জীবনে অনেক পরিবর্তন আসে।

আরও পড়ুন

×