প্রকাশিত: 05/07/2020
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের অবিভাবক ও প্রতিষ্ঠানের যথাযথ সমন্বয়-হীনতা ও যথেষ্ট সহনশীলতার অভাবে ঝুকিপূর্ণ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা অর্জন ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
“শিক্ষাই শক্তি, শিক্ষাই শান্তি, শিক্ষাই প্রগতি” উক্তি গুলোর পূর্বশর্ত হচ্ছে মানসম্পন্ন শিক্ষা অর্জন ও শিক্ষার্থীদের যথাযথ মানুষিক, আত্মিক উন্নয়নের সাথে ভবিষ্যতের জন্য বেড়ে ওঠা। বিশেষজ্ঞ শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য জনাব আ আ ম ফ আরেফিন সিদ্দিক স্যারের মতে “শিক্ষা কখনো একক বা একপক্ষীয় হয় না, শিক্ষাকে সবার জন্য উন্মুক্ত ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য চলমান অবস্থা ও অবস্থানের প্রেক্ষাপটে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন ও সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির প্রয়োজন হয়। কার্যকর শিক্ষা প্রদান ও শিক্ষার মান বজায় রাখতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক এবং অবিভাবকের যথাযথ সমন্বয় তৈরি এবং হাতেকলমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা-ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ”।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের একজন প্রভাষক এই করোনা পরিস্থিতির আলোকে তার মতামত দিয়েছেন যে “সার্বজনিন শিক্ষা ও উচ্চপর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থা তরান্বিত করা সহ শিক্ষার উন্নয়নগত কার্যক্রম চলমান রাখতে এবং শিক্ষার্থীদেরকে পিছিয়ে পরা থেকে রক্ষার্থে প্রাই সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষা প্রদান কার্যক্রম ভিন্ন কৌশল ও মাধ্যমে চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তাছাড়া, চলমান স্থবিরতার মধ্যে সম্পুর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখানে একটি বৃহৎ চলমান কর্মসংস্থানের ও জীবিকার ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে নিয়ম নীতি না মেনে অসম সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। তাই, আমি মনে করি এক সাথে তালমিলিয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সমূহ যথাযথ সচেতনতা অবলম্বন করে চলমান স্থবিরতার মধ্যেও তাদের শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পরা রোধে ও সার্বজনিন শিক্ষা ও উচ্চপর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থা তরান্বিত করা সহ শিক্ষার উন্নয়নগত কার্যক্রম চলমান রাখবে”।
অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের অবিভাবকরা মনে করেন যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো অনেকটা চাপাচাপির মাধ্যমে ও নানান কারণ দর্শানোর মাধ্যমে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ডিজিটাল মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান সহ শ্রেণীকক্ষের পরিবর্তে অনলাইনে শিক্ষাদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন এবং চলমান স্থবিরতা বিবেচনায় কোনরকম সহনশীল না হয়ে আগের নিয়ম অনুযায়ী সব শিক্ষা খরচ ও ফি সমূহ আদায় করে নিচ্ছেন। অবিভাবকদের চিন্তা ও আশংকার জায়গাটা হচ্ছে, সব এলাকার সব শিক্ষার্থীরা এই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। সবার প্রয়োজনীয় সুযোগ ও মাধ্যম না থাকায় সময়মতো শিক্ষকদের নির্দেশনা ও পাঠ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমতাবস্থায়, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে বড় সমন্বয়হীনতা ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে যা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। শুধুমাত্র একপক্ষীয় ভাবে সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম চলতে পারে না। চলমান মহামারী স্থবিরতায় অনেক পরিবারের সচ্ছল অবস্থা না থাকায় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ ব্যহত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী বেতন ও অন্যান্য ফি দিতে ব্যর্থ হওয়াতে অনেক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। এই জাইগাটিতে এখনো সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সব অবিভাবকদের সমন্বয় ও সহনশীলতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
অধিকাংশ স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ চলমান স্থবিরতা ও করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সংক্রমণের আশংকাজনক অবস্থায় এবং সাধারণ অসচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েদের কথা বিবেচনায় রেখে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন এবং পাশাপাশি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজস্ব যুক্তি ও ডিজিটাল পদ্ধতিকে মাধ্যম দেখিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন সমন্বয়হীনতা ও অনিয়ম শিক্ষার্থীদের জন্য চরম সমস্যার কারণ ও ক্ষতিকর।
করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতিতে স্থবির হয়ে যাওয়া ব্যবসা বানিজ্যের সুযোগ সুবিধা, রোজগারের কর্মকান্ড ও সুযোগ সুবিধা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যাওয়ায় গ্রামের সাধারণ অসচ্ছল পরিবার থেকে আসা একজন ছাত্রের পক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী নিয়মিত ভাবে শিক্ষা খরচ ও বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। একই ভাবে, সব এলাকায় সবার বাড়িতে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় অথবা ডিজিটাল যন্ত্রপাতি সহ প্রয়োজনীয় মাধ্যমের অভাবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পাঠ কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না। অনেক অবিভাবক আর্থিক ভাবে সচ্ছল ও প্রয়োজনীয় ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ দিয়ে ছেলেমেয়েদের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে সাহায্য করছেন, আসলেই কি এই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছেন? একপক্ষীয় ও সমন্বয়হীন শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কি সঠিক মানসম্পন্ন পাঠ পাচ্ছেন? শিক্ষার্থীরা কি হাতেকলমে শিক্ষকদের সাথে পাঠ্য বিষয় নিয়ে ও নানারকম প্রশ্ন ও কৌতুহল নিয়ে আলোচনা বা কাজের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করছেন? শুধুমাত্র শ্রেনীকক্ষে উপস্থিতির মাধ্যমে ও কতিপয় এসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার পূর্ণতা আসে না অথবা কার্যকর শিক্ষা অর্জন সম্ভব না। তাই, প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীরা অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। যথাযথ কতৃপক্ষ, প্রতিষ্ঠান মালিক, অবিভাবক ও শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করতে হবে।