ধর্ষণের দর্শন ২

প্রকাশিত: 14/10/2020

শামীম আহমেদ

ধর্ষণের দর্শন ২

আগে ধর্ষণ পরে বিয়ে। আমার বিবেক ও মননে এই দীক্ষা নিয়েই শেষ করলাম প্রাইমারী স্কুল। ১৯৯৫ সালের ঘটনা। আমি তখন প্রাইমারীতে পড়ি। আমাদের এলাকা বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকে অর্থাৎ বাংলাদেশের দক্ষিন পশ্চিমের জেলা বরগুনার পাথরঘাটায়। স্কুলের নাম পশ্চিম জালিয়াঘাটা তোমেজিয়া রেজিষ্ট্রি প্রাথমিক বিদ্যায়ল। কাজী বাড়ির দরজার এই স্কুল ছাড়াও প্রায় ৬টি স্কুলে পড়ে আমি প্রাইমারী শিক্ষা শেষ করছি। মাধ্যমিক স্তর শেষ করতে আমি আরো প্রায় দশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলাম। ছেড়ে আসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দোষ ছিলো সেখানের শিক্ষার মান ভালো না এবং শিক্ষকরা বেত দিয়ে বেশি পিটায়। পিটায় কম এমন স্কুলের খোজ করতে করতে আমার জেলা বাদ দিয়ে অন্য দুটি জেলা ঝালকাঠি ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটায়ও পড়তে গিয়েছিলাম। অবশেষ ইন্টারমিডিয়েট পড়তে ২০০২ সালে যে কলেজে ভর্তি হয়েছি সেই কলেজটি ছিলো সম্পুর্ন নতুন। এসএসসির মেইন কাজগ পত্র দিয়ে ভর্তি হতে হয়েছিলো তাই কলেজ পরিবর্তন করার সুযোগ পাইনি। বরগুনা ২ আসনের তৎকালীন সাংসদ তার পিতার নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। আমি ছিলাম সেই কলেজের প্রতিষ্ঠা ব্যাচের শিক্ষার্থী।

রবীন্দ্র নাথের গানে আছে, "আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল"। এবার পাঠককে ফিরিয়ে নিয়ে আসি আমার সেই প্রাইমারীর শিক্ষকের হৃয়ের কথা জানাতে। ধর্ষণ শিশুকালেও করা যায় এমন শিক্ষা শিক্ষকের নিকট আমি পেয়েছি শিশুকালে। তবে বড় হয়ে আজ জেনেছি নারীর অনিচ্ছায় যখন যেভাবেই যৌন সম্পর্ক হয় তা সবই ধর্ষণ। আর এই ধর্ষণ মানুষের কর্ম নয়। যারা করে তাদেরকে বন্য পশুর সাথে তুলনা করা যায়। এখন ভাবছি, আমার প্রাইমারীর সেই শিক্ষকগুলো ছিলো পশু। স্কুলে মোট শিক্ষক ছিলেন তিন জন। তাহলে এর মধ্যে দুজনই বন্য পশু। প্রধান শিক্ষকের নাম সুলতান, তিনি ছিলেন আমার পিতার আপন মামাত ভাই। গ্রামে তার সম্মান সর্বাধিক ভাবে দেয়া হয়েছিলো। পশুর সম্মান পশুরাই দেয়না। শক্তিশালী এক পশু দুর্বল অন্য পশুকে আক্রমন করে প্রায়সই। কিন্তু আমাদের সেই শিক্ষক পশু সমতুল্য হলেও গ্রামের সাধারন মানুষ গুলো তাকেই সম্মান দেখাতো। এখন তিনি শয্যায় পরে মৃত্যুর ক্ষন গুনছেন। একদিকে আমার পিতার সম্পর্কে আপন মামাত ভাই অন্যদিকে আমার সরাসরি স্যার। সেই বিবেচনায় এমন সব কথা আমি তার ব্যাপারে বলতে পারিনা। কিন্তু ঘটনা তো লুকিয়েও আর রাখতে পারছিনা। এই ঘটনার বলার মধ্যেদিয়েই আমি আমার স্যারকে হাজার বছর বাচিয়ে রাখতে চাই পাঠক সমাজে। আমার শ্রদ্ধেয় সুলতান স্যার তার এক আত্মিয় এবং প্রতিবেশি মেয়েকে কুড়ি বছর বিবাহ বহির্ভুত ধর্ষণ করছেন। তবে ফ্রিতে নয় একটা অঙ্গীকার দিয়েই সুলতান স্যার কল্পনা নামের সেই মেয়েটিকে ধর্ষণ করছেন। পিতার সম্পর্ক অনুযায়ি এই স্যার আমার চাচা। স্যারের সাথে যে মেয়েটির সেক্সের সম্পর্ক সেই মেয়েটি আমার প্রতিবেশি ফুফি। কল্পনা ফুফির সাথে স্যারের যে সম্পর্ক তাতে তারা মাঝে মাঝে সম্পর্কের দাবীতেও সেক্সের ঘটনা ঘটাতে পারে। কারন হেড স্যার আর কল্পনা পরষ্পর বেয়াই বিয়াইন। হেড স্যারের আপন বড় বোন শেফালি ফুফিকে বিয়ে দিয়েছে কল্পনার আপন ভাই ফারুকের সাথে। কল্পনার সেই  ভাই ফারুক লেখা পড়া করে এক সময় শিক্ষক, মেজিষ্ট্রেট, ইউএনও, ডিসি সর্বশেষ খুলনার কমিশনার অথবা ডেপুটি কমিশনার হয়ে অবসরে গেছেন। আমি কল্পনা ফুফির বাবা মাকে জীবিত দেখিনি। কল্পনাদের সাথে আমার স্কুলের হেড স্যারদের আত্মিয়তার সুত্র ধরেই এই অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কল্পনার ভাই ফারুক ভিবিন্ন জেলায় দ্বায়িত্ব নিয়ে সরকারি জব করতেন। গ্রামের বাড়ি ছিলো প্রায় ফাকা। যেহেতু কল্পনা ছিলো বিবাহ যোগ্য। তাই এমন একটা মেয়ে গ্রামের নির্জন বাড়িতে একা থাকা অনিরাপদ। কল্পনার নিরাপত্তরা কথা ভাবতো সকলেই। তবে কাছে থাকার মানুষ ছিলো একজনই, সে মানুষটি আমার স্কুলের হেড স্যার এবং কল্পনার বিয়াই সুলতান। বিয়াইনের নিরাপত্তা দিতেই রাতে থাকতেন স্যার কল্পনার কাছেই। রক্ষক যখন ভক্ষক। আমার মনে হয় এই কথার উৎপত্তি সুলতান স্যারের কারনেই। 

স্যারের ধর্ষণ নিয়ে আমার তখনকার দর্শন ও এখনকার দর্শনে একটা বিরাট তফাত আছে। স্যারের বিবাহবহির্ভূত এমন যৌন সম্পর্কে গ্রামের কোন মানুষের সামাজিক প্রতিবাদ ছিলো না। এসব ঘটনা ছাড়াও আরো কিছু ঘটনা জানি তা সব বলতে গেলে পুরান ঘটনা নতুন করে উত্থাপন করা হবে। স্যারদের মতো এমন আরো একজন স্যারের ঘটনার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ধীরে ধীরে সেচ্ছা যৌন সম্পর্ক তখন বিস্তার ঘটে আমাদের গ্রামে। এই স্যারকে অনুসরন করছে কল্পনার একজন আপন ভাই নাসির। নাসির নামের এই লোকটি গ্রামের গরিব ও বিধবা বহু মেয়ে এবং নারীকে ফুসলিয়ে নিরবে ধর্ষণ করছে। জানাজানি হলেও প্রতিবাদ করার জন্য কেউ ছিলো না। কারন মানুষের ধারনা ছিলো নাসিরের আপন ভাই ম্যজিষ্ট্রেট বিরাট ক্ষমতাধর। কেবল নাসিরের বা কল্পনার কিংবা হেড স্যারের যৌনতা এখানে শেষ কথা নয়। আমার স্কুলের সহপাঠী এবং একই শ্রেণীতে অধ্যয়নকারী একজন সতীর্থের নাম খাদিজা। আমি এবং আমার সাথে যারা প্রাইমারীতে পড়ে সকলেই জ্ঞান বুদ্ধিতে একেবারেই শিশু। কে জানতো বয়স্ক একজন শিক্ষক তার শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করবে। অবিশাস্য হলেও এমন ঘটনা সত্যি। বাংলাদেশের বয়স তখন কেবল ২৫ বছর। গ্রামীণ অর্থনীতি ছিলো অতি দুর্বল। গ্রামের প্রায় ৯৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করতো। বর্গা চাষী কৃষিভিত্তিক পরিবারের সন্তান আমার সহপাঠী খাদিজা। স্কুলের পাশের বাড়ি শিশু খাদিজার। দুপুরে আমাদের স্কুলে যখন বিরতি দেয়া হতো তখন আমাদের শিক্ষক নজরুল স্যার যেতেন খাদিজাদের ঘরে বিশ্রাম নিতে। খাদিজার শিক্ষক হিসেবে নজরুল স্যার খাদিজাদের ঘরে বেশ কদর পেতেন। দুপুরে স্যারকে কিছু একটা খাওয়াতেন খাদিজাদের সাধ্যমতো। দুপুরে স্কুল বিরতির সময় আমরা যা খেতাম তার একটি বর্ননা এখানে করতে চাই। দেশের প্রাথমিক শিক্ষা সবার জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার লক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে এখন যেমন উপবৃত্তি হিসেবে নগদ অর্থ দেয়া হয় তখনকার সময় মেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে দেয়া হয়েছিলো গম। শেখ হাসিনা প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে নারী শিক্ষা বিকাশে মেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে স্কুলগামি করতে এই গম দেয়ার পদ্ধতি চালু করেন। মাসে সম্ভত পাচ বা দশ কেজি গম দেয়া হয়েছিলো। সেই গমের আটা দিয়ে যে রুটি তৈরী করা হতো গ্রামের বাড়িতে দুপুরে কৃষকরা খেজুরে গুড় দিয়ে ওই‌ রুটি খেতেন। আমার মনে আছে ক্ষুধা পেটে সেই রুটি এতোই সুস্বাদু ছিলো যেন আজও সেই স্বাদ জিব্বাহ থেকে একে বারে মুছে যায়নি। এই লেখা লিখতেই আজও লোভ হয়েছে সেই রুটির প্রতি। সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ এই খাবার গ্রামের মানুষের খাদ্য তালিকায় আজ নেই। এই রুটি অনেকের কাছে পছন্দের খাবার হলেও তখনকার সামাজিক অবস্থানের দিক দিয়ে বর্ননা করলে এটি গরিব মানুষের খাদ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। তখন দুপুরে আমাদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য আরো অনেক গ্রামীণ খাবার ছিলো যা এখন প্রায় হাড়িয়ে গেছে। যেমন, মিষ্টি আলু সিদ্ধ, কলই বা ফেরু ডাল ভাজা, চাল ভাজা, ভাতের মার, লাতা ভাজা (অর্থাৎ ভাঙা চাল রান্না করলে যা হয়), এছাড়াও সিজনাল বিভিন্ন ফল, আম, জাম, কাঠাল, পেয়ারা, ইত্যাদি।

পচিশ বছর পুর্বে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা গ্রামগঞ্জে মানুষের জীবন ব্যাবস্থা কেমন ছিলো তা তখনকার গ্রামের মানুষেরা আমার থেকেও ভালো বলতে পারবেন। তখন এই ক্যাটাগরির কোন খাবার রেডি থাকলে স্কুল বিরতিকালে খাদিজাদের ঘরে নজরুল স্যারকে দাওয়াত দিয়ে খাদিজা নিয়ে যেতো। ক্লাশে ১ রোল ধরে রাখতে শিশু মেয়েটি এই চেষ্টাটুকো করতো হয়তো। আমার যেটুকো অনুধাবন ক্ষমতা আছে তাতে আমার উপলব্ধি হয় নজরুল স্যার তার যৌন কৌশল খাদিজার ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। শিশু খাদিজা কল্পনাও করেনি নিজের এমন অনিশ্চিত ভবিষ্যাৎ। খাদিজার সৌন্দর্য নিয়ে আমার মন্তব্য এখানে গৌণ। মেয়েটির গায়ের রঙ যে ফর্সা তা সবার চোখে দৃশ্যমান ছিলো। নজরুল স্যার তার দৃষ্টিতে খাদিজাকে দেখছেন কিভাবে তার নিকট এমন প্রশ্ন করার সুযোগ হয়নি আমার। ফোর এবং ফাইভে পড়ার দু বছর আমি এবং স্কুলের সকলেই দেখতাম নজরুল স্যার প্রতিদিনই খাদিজাদের বাসায় দুপুরে ভাত খেয়ে আসতেন। তবে খাদিজার বাসায় ভাত খাওয়ার বিষয়টি কারোর চোখেই অন্যায় ছিলো না। এটা নিছক ছাত্র শিক্ষকের পবিত্র সম্পর্ক হিসেবেই পরিগনিত হতো। বিরতির পর আমরা ঘন্টা খানেক স্কুলে থাকতাম। এর পর ৩টার দিকে ছুটি হয়ে যেতো। খাদিজা ও তার আপন চাচাত বোন শিরিন আমার সাথেই একই ক্লাসে পড়তো। এই দুবোনের ঘর পাশাপাশি এবং স্কুল মাঠের সাথেই মেলানো। যতদুর মনে পড়ে এই দুজনকে নজরুন স্যার কিছু দিন প্রাইভেট পড়িয়েছেন। প্রাইভেটের ছুতোয় নজরুল স্যারের পথ সুগম হয় খাদিজার ঘরে আসা যাওয়ায়। আমার ক্লাসে খাদিজা- শিরিন ছাড়াও শাহানা, সুরমা, সিদ্দিক, লিয়াকত, নিজাম, আবুল কালাম, রিপন, খোকন, (একজন প্রতিবন্ধি সহপাঠী) বাচ্চু, জসীম, সোবাহান এবং আমার চাচাত ভাই মাহাবুব ও সিদ্দিক ছাড়াও অনেকে ছিলো, যাদেরকে মনে আছে কিন্তু নাম ভুলে গেছি। সবুজ অরন্যে ঘেরা আমাদের গ্রাম। সরু মেঠো কাঁদা পথ। বর্ষা কালে ঘরের বাইরে পা রাখলেই কাঁদা আর কাঁদা। হাটু কাঁদা পার হয়ে গ্রামের সড়ক পারি দিয়ে স্কুলে যেতে হতো। সেই কাঁদা এখন রূপকথার গল্প। রাতে জেলা কিংবা উপজেলা শহরে কেবল বিদ্যুৎ ছিলো। আমাদের বসবাসের আশে পাশে বন জঙ্গলে ঘেরা গ্রাম। রাতের ঘন আধার এবং বনের শিয়ালের ডাক। সেই পরিবেশটা কেবলই উপলব্দি করতে পারি। প্রকাশ করার ভাষা জানিনা। তখনকার বিয়ে ও যৌন সম্পর্ক কেবলই আমার স্কুলের স্যাদের করতেই দেখছি তা নয়। এমন ঘটনা গরিব ও অসহয় নারীদের প্রতি হয়েছে, যার প্রতিকার চাইতে গিয়েই ধর্ষিত নারীরা আরো বেশি ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তখনকার অনেক অত্যাচারি লোকেরা এখনও সমাজে নেতৃত্ব দেয়। আমার এক চাচাত বোন সোনা বরুকে দিলের আলোতে ধর্ষণ করছে আমাদের পাশের গ্রামেরই দুধর্ষ এক ডাকাত গ্রুপ। এক সময়ের ছব্দারআলী মেম্বার বাড়ির বিপদগামি কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলেরা। চাচা জালিয়াঘাটা খালে নৌকায় মাছ ধরতেন এবং রাতে থাকতেন সেই নৌকায়। সেসময় সোনাবরু তার বাবার সাথে মাঝে মাঝে নৌকায় থাকতেন। একটি সুযোগে সেই ডাকাত দল সোনাবরুকে জোরপুর্বক ধর্ষণ করে। এই ধর্ষণের উপযুক্ত বিচার করার কোন লোক পাওয়া যায়নি তখন। সেই গ্রুপের এক লোক এখন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। আমাদের বাড়ির উত্তর দিকে সড়কের পাশে বসবাস করে বাস্তহারা এই মেম্বার। এভাবেই হয়ে চলছে নারী ধর্ষণ! এইতো সমাজের গতি পথ!

যৌন সম্পর্কের ভিডিও দৃশ্য আমি সর্বপ্রথম দেখছি এই শতোকের গোড়ার দিকে। আমাদের গ্রামের এক প্রতিবেশি নানু থাকেন সৌদি আরব। তিনিই সর্বপ্রথম রঙিন টিভি আনেন আমাদের গ্রামে। নানুর ছেলে সুমন ও দুলাল আমার সম্পর্কে চাচা। এরা চাচা হলেও ছিলো বন্ধুর মতোই। সমবয়সি চাচা তাই সম্পর্কটা ছিলো বেয়াই বেয়াই। দুলাল দু বছরের বড় তাই আমি বেশি মিশতাম ছোট চাচা সুমনের সাথে। একদিন সুমন আমাকে তাদের ঘরের দুই তলায় নিয়ে সর্বপ্রথম যৌন ভিডিও দেখায়। টিভিতে এই ধরনের ভিডিও দেখতে হলে তখন কিনতে হতো আলাদা ক্যাসেট। সেই ক্যাসেট চালানো হতো বিসিআরে। গোপন এই ক্যাসেট স্বাভাবিক ভাবে বাজারে পাওয়া যেত না। এই ভিডিও দেখা নানুর নেশা ছিলোকিনা জানিনা, তবে নানু ঢাকা থেকেই এই ধরনের ক্যাসেট নিয়েছে সম্ভবত নানিকে গভির রাতে দেখানোর জন্যই। সেই ক্যসেট সুমন চাচা কিভাবে খুজে পেলো জানিনা। যাইহোক সেটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা ছিলো। নতুন কিছু জানা হলো। যেখানে টিভি দেখাই ছিলো অপরাধ, তার মধ্যে এতো কিছু দেখে ফেলাতো অপরাধের সীমালঙ্গন করার মতোই ঘটনা। তখন প্রতি শুক্রবার বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে একটি বাংলা সিনেমা চালানো হতো। সেই সিনেমা দেখার জন্যে গ্রামের নারী পুরুষে ভিড় লেগে যেতো। আমিও পালিয়ে পালিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে টিভি দেখার চেষ্টা করতাম। অন্য লোকেরা মাবাবা ভাইবোনসহ সবাই প্রকাশ্যে টিভি দেখলেও আমি তাদের থেকে আলাদা এমন একটা সামাজিক বৈষম্যে বড় হয়েছি, সেই সমাজে আমার টিভি দেখা বড় অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। অর্থাৎ সমাজ ও সংস্কৃতিতে অন্য ছেলেদের সাথে মিশতে আমার ব্যাপারে পারিবারিক বিধিনিষেধ ছিলো। টিভি দেখলে পিতা কর্তৃক আমার ওপর চালানো হতো অনেক বেশি শারিরিক নির্যাতন। বলা যায় পারিবারিক অতি শাসনে বেরে ওঠা এক মানুষ। আমাদের বাড়ির আঙিনায় জামে মসজিদ। আমার পিতা সেই মজদিদের ইমাম। ভিবিন্ন অঞ্চলে গিয়ে আমার দাদা হুজুরের সাথে তিনি মাহাফিলে বয়ান দেন। এমন পাক্কা হুজুরের বিশেষ নজরদারিতে থেকে আমার শিশু ও কিশোর কাল অতিবাহিত করছি। পিতার ভাষ্য ইসলাম ধর্মে টিভি দেখা গর্হিত অপরাধ হিসেবে গন্য হয়। তাই আমি যেন এমন অপরাধ না করি সেদিকে তিনি করা নজরদারি করতেন। আমার পিতার আশা ছিলো আমি দেশের সবচেয়ে বড় এবং খ্যাতিমান কেউ হব। লেখা পড়ার খাতিরে তিনি আমাকে সাংসারিক সব কাজ থেকে খানিকটা অবসর দিতেন। তখন আমার সাথে যারা প্রাইমারীতে পড়ছে তারা অনেকেই মাধ্যমিক স্তরে পড়েনি। কেউ কেউ পড়লেও তাদের মধ্যে কলেজে পড়ছে এমন তিন চারজনার কথাই আমার মনে আছে। বাকিরা বিয়ে করে নিজ নিজ অবস্থানের কর্মে যুক্ত হয়ে গেছে। যে কজন কলেজে পড়ছে তাদের মধ্যে আমার প্রামারীর সহপাঠী খাদিজা অন্যতম। স্বপ্ন ছিলো মেয়েটি একদিন সমাজের গুরুত্বপুর্ন দ্বায়িত্ব নেবে। যখন কলেজে পড়ছে তখন সেই শিশু খাদিজা আমাদের নজরুল স্যারের বউ। বউ হওয়ার পুর্বে খাদিজা নিজের শিক্ষকদ্বারা কতো শতো বার ধর্ষিত হয়েছে তার কোন বিচার হয়নি। আর কোন কালেও হবে বলে আমার মনে হয় না।

আমার স্কুলে একদিন নজরুল স্যারের প্রথম বিয়ে করা বউ এসেছিলেন। সেই মহিলা স্কুলের অন্য সব শিক্ষকের নিকট নজরুল স্যারের অন্যায় অত্যারের কিছু অভিযোগ দিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে এর প্রতিকার চাইলেন। স্যারের বউ বললেন- "উনার (নজরুল স্যারের) সংসারে মন বসে না। নিয়মিত বাজার সদাই করেন না। আমার সাথে দুরব্যবহার করেন"। আরো অনেক অভিযোগ দিয়ে মহিলা চোখের জল ফেলছেন। অবশেষে বিচার তো আর পাননি। নিজের স্বামিকে সম্মান শ্রদ্ধা ও সত্যিকারের ভালোবাসা উজার করে দেয়া সেই মহিলার প্রতি আমার শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। স্কুলের অন্য একজন শিক্ষক তার ডাক নাম "পান্না" সেই পান্না স্যার নজরুল স্যারকে অনুরোধ করে বললেন আপনি সংসারে মন দেন। বিরাট এক সড়ক দুর্ঘটনায় পান্না স্যার সে বছর নিজের একটি পা হারান। পাথরঘাটা থেকে তার নিজের বাড়ি কামারের হাট ফেরার পথে টেম্পু দুর্ঘটনায় স্যারের একটি পা ভেঙে যায় অবশেষে চিকিৎসক সেই পা কেটে ফেলছেন। নজরুল স্যারের বউ যখন আমাদের স্কুলে এসে নজরুল স্যারের ব্যাপারে অভিযোগ দিলেন তখন আমি ফাইভে পড়ি এবং খাদিজাও ফাইভে পড়ে। এই সময় খাদিজা যৌনতার জন্য শারিরিক ভাবে প্রস্তুত হওয়ার কথা নয়। তাহলে নজরুল স্যার কি অন্য কোন মেয়ের স্বাদ নিয়ে নিয়ে নিজের বউয়ের থেকে মন ও দেহ ফিরিয়ে নিলেন? না কি খাদিজার সাথে শিশুকালেই স্যার যৌনতা শুরু করেছিলেন? এর কোন প্রমান আমার নিকট নেই, তাই আমি শক্ত করে বলতে পারবো না। তবে পরের দিকে অর্থাৎ খাদিজা যখন সেভেন এইটে পড়ে তখন স্যার তাকে নিয়মিত ধর্ষণ করছে এর যথেষ্ট স্বাক্ষী প্রমান এখন মেলে। প্রাইমারীর পর আমি আর খাদিজা ভিন্ন স্কুলে পড়ি। আমি খাদিজার সাথে একাডেমিক ভাবে আর একত্রে নেই। কেবল দুরত্ব হয়নি খাদিজা ও স্যারের মাঝে। কারন খাদিজার বাড়ি তো এই প্রাইমারী স্কুলের পাশেই। নজরুল স্যার খাদিজাদের বাড়িতে দুপুরে খেতেন। তার বিনিময় স্যার মাঝে মাঝে কিছু বাজার সদাই ক্রয় করে দিতেন এবং  খাদিজাকে পোশাক বা ড্রেস কিনেও দিতেন। খাদিজার দেহের বৃদ্ধির সাথে সাথে এভাবে ধীরে ধীরে আনুষ্ঠানিকতা পেতে শুরুকরে খাদিজা ও স্যারের যৌন সম্পর্ক। গ্রামের শিক্ষকদের বিবাহ বহির্ভুত এমন যৌন সম্পর্ক সমাজকে ও আমাকে ভুল বুঝিয়েছে। খাদিজারা একটু গরিব থাকায় স্যার যে সুযোগ নিয়েছেন এমন কৌশলের ধর্ষণ দেশের অন্য এলাকাতেও কিংবা সমাজের অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। ধনীর যৌনতা গরিব নারীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়, এমন উদাহর একজন স্কুল শিক্ষকের নিকট থেকে আমি শিশুকালেই দেখলাম। বহু যুদ্ধের পরেও এই সম্পর্ক রোধ করতে পারেননি নজরুল স্যারের বউ। কলেজে পড়ুয়া খাদিজার পরিবার যখন সামাজিক ভাবে প্রতিবেশিদের বাকা দৃষ্টিতে পরে যায় তখন কিছু লোকের চাপে নজরুল স্যার খাদিজাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। আসলে স্যারের উদ্দেশ্য ছিলো বিবাহ বহির্ভুত যৌনতা। ঠিক এই ষ্টাইলের ধর্ষণ আমাদের দেশের প্রত্যক গ্রামেই রয়েছে। যুগে যুগে কতো নারী মুখ বুঝে এমন ধর্ষণ সহ্য করছেন তার নির্দৃষ্ট পরিসংখ্যান আমার জানা হয়নি। এমন সব খাদিজাদের ওপর যারা প্রতিনিয়ত যৌন অত্যাচার করে যাচ্ছে তারা কেউ শিক্ষক এমনটা আমি ভাবতে পারিনা।

আমি ঢাকায় থাকি ১৫ বছর। এর মধ্যে গড়ে হয়তো ১৫ বার বাড়িতে গিয়েছি। সবসময় খাদিজার সাথে দেখা হয়নি। দু তিন বার দেখা হয়েছে। তার মধ্যে একবার দশমিনিট আলাপ হয়েছে তার বাড়ির দরজার সড়কে দাড়িয়ে। খাদিজার সাথে আমার দেখা হয়েছে সর্বশেষ গত বছর। ওর দুটি কন্যা সন্তান আছে। বড়টি এখন প্রায় বিবাহ যোগ্য। নজরুল স্যারের নিজ বাড়িতে খাদিজার জায়গা হয়নি। খাদিজা তার নিজের বাবার বাড়িতেই রয়ে গেল। নজরুল স্যার ভরন পোষন দিয়ে দিয়ে যৌন চাহিদাও মেটালেন। খাদিজার শারিরিক চাহিদা এখন হয়তো কেবল শুরু। কিন্তু নজরুল স্যার তো খুব বয়স্ক লোক। তিনি যেকোন দিন মরে যাবেন। এখন খাদিজার কি হবে? হয়তো নিজের স্বামির বাড়ি উঠতে পারবে না কোনদিন। এটা এতো বছরে সকলেই মেনে নিয়েছে। এই অনিয়মটা আজ খাদিজাদের কাছে নিয়মে পরিনত হয়ে গেলো। আমি জানি প্রাইমারীর শিক্ষার্থী মেয়েটি খাদিজা কী অকলঙ্ক শুভ্র, সে কী নিবিড় পবিত্র। এই পরিত্রতা বিসর্জনের কাহিনী আমাকে লিখতে হইবে সে কথা কে জানতো।

গ্রামীন নারী নিজের ওপর নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপরে খুবই দুর্বল। সেখানকার সমাজ ব্যাবস্থা নারীকে এভাবে দুর্বল করেই প্রতিষ্ঠিত করে তোলে। আজ শাহাবাগে যে ধরনের নারীরা যে ধরনের ধর্ষণের প্রতিবাদ নিয়ে হাজির হয় এতে আমি কিছুটা বিরক্ত হই। আবার তাদের কিছু ভূমিকায় সমর্থনও দেই। বিরক্ত হওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে আমি বলতে চাই আপনারা কি সত্যিকারের প্রতিরোধ গড়তে চান? নাকি সরকার বিরোধী দুকথার বক্তব্য দিয়েই এর শেষ করতে চান? আমি জানিনা ওসব নারীদের নিজেদের মধ্যে অথবা তাদের আত্মিয় স্বজনদের মধ্যে কোন নারী খাদিজার মতো এভাবে আক্রান্ত হয়েছে কিনা। কেবল নোয়াখালির এক নারীকে বিবস্র করে নির্যাতনের একটি ঘটনার ভিডিও দেখে কেউ কেউ রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে শাহাবাগে জড়ো হয়ে গেলেন। দুদিন শ্লোগান দিয়ে নিরব রয়ে গেলেন। তাই আমি এতোটুকোর মাঝে এর পরিসমাপ্তি দেখছি না। নারীকে বিবস্র করে নির্যাতনের ঘটনা কেবল নোয়াখালিতে হয় না। এমন ঘটনা নিত্যনৈতিত্তিক যা প্রায় প্রতি দিন ঘরে ঘরে ঘটে। নারীরা সব চেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয় গ্রামে। যার ভিডিও হয় না এবং প্রচারও হয় না। আমি যখন গ্রামে থাকতাম, তখন দেখছি অনেক নারীকে প্রহর করার সময় স্বামী তার নিজের স্ত্রীর প্রতি এতোই কঠোর হয়ে শারিরিক অত্যাচার করতো যে, পিটানোর এক পর্যায়ে সেই নারীর শাড়ি খুলে যেত। তখন সেই নারীর শরিরে কেবল পেডিকোড ও ব্লাউজটাই অবশিষ্ট থাকতো। স্বামী যখন স্ত্রীকে পেটাতেন তখন "চুতমারানী" বলে স্ত্রীর মা বাবা তুলে গালি দেয়া শুরু করতেন। এভাবে শারিক আঘাত করে অনেক স্ত্রীর হাত পা ভেঙে দেয়া হতো। অবশেষে স্ত্রীর বাড়ির লোকেরা এসে আহাত স্ত্রীকে নিয়ে যেতো। দু চারদিন বা সপ্তাহ খানেক পর আবার স্বামী স্ত্রীদের মধ্যে মিল হতো। এভাবেই নারী নির্যাতনের মধ্যে দিয়েই পুরুষেরা চালিয়ে যেতো সংসার। গরীব সংসারে এমন মারামারির ঘটনা ঘটলে অনেক সময় ব্লাউজটাও থাকতো না। কারন অতিদরিদ্র নারীদের সামান্য ব্লাউজ পড়ার সমর্থটুকোও ছিলো না। তবুও কোন না কোন ভাবে নির্যাতিত হয়ে নারীকে থাকতে হয় স্বামীর সংসারে। খাদিজাও তার শিক্ষক স্বামীর হাতে ভিবিন্ন ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। খাদিজার জন্য আমার ভালোবাসা রইলো নিরন্তর। আমার চেনা খাদিজা অত্যান্ত সভ্য ও নির্ভেজাল এক খাটি মেয়ে। খাদিজার এই বর্তমান জীবনের অবস্থার জন্য শিক্ষক তার দায় এরাতে পারেন না। ছাত্রীদের এমন ক্ষতি শিক্ষকের নিকট থেকে জাতি আশা করে না। খাদিজাকে তার নিজের শিক্ষক ধর্ষণ করে করে ধরা পরে একসম বিয়ে করতে বাধ্য হলেন যেভাবে, ঠিক একই ভাবে অসংখ্য শিক্ষক নিজের ছাত্রীকে সুকৌশলে ধর্ষণ করছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষক বিয়ে করতে চান না। কেবল ধর্ষণের বিনিময় পরীক্ষায় ভালো ফল দিয়ে বা অন্য কোন সুবিধা দিয়েই শেষ করতে চান। সারা দেশে এমন হাজার হাজার ঘটনা আছে। খাদিজার ঘটনার সাথে প্রায় মিলে যায় এমন একটি ঘটনা আমি এখানে উল্লেখ করছি। ২০১৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার দলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর বাদশাহ (৪৫) একই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ফুসলিয়ে বিয়ে করেছেন এমন একটি খবর দৈনিক প্রথম আলোতে আমি দেখছি। খবরে বলা হয়েছে ৬৩ শতাংশ জমি ওই শিশুর নামে লিখে দিয়ে শিক্ষক ওই বিয়ে করেছেন। রংপুরের সেই উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ওসমানপুর সরকারপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর বাদশাহ সহকারী শিক্ষক হিসেবে ২০০০ সালে ওই বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে। এক মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ও আরেক মেয়ে শিশু শ্রেণিতে পড়ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ২০১২ সালে চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন তিনি। এ জন্য তিনি মেয়েসহ তার মা-বাবাকে নানা প্রলোভন দেখান। কিন্তু বিয়ের ঘটনাটি প্রতিবেশী কিংবা এলাকার কেউ জানতেন না। মেয়েটির ভ্যানচালক বাবা বলছেন, ‘বাবা মুই গিরব মানুষ। ওর অনেক ধন। পোরতোম মুই বেটিক বিয়াও দিবার চাও নাই। কিন্তু অয় বেটির পাচ ছাড়ে না। বেটির নামে ৬৩ শতক জমি লেকি দিয়া কোটোত জায়া চুপ করি বিয়াও করচে। এই কথা কাকো জানবার দেয় নাই।’ মেয়ের বাড়িতে শিক্ষক জাহাঙ্গীরের অবাধ যাতায়াত ও মেয়েটিকে নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাতায়াত করায় প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। অবশেষে মেয়ের বাবা বিয়ের কথা প্রতিবেশীদের কাছে স্বীকার করেন। এবং শিক্ষক জাহাঙ্গীর বাদশাহ নিজেও ওই ছাত্রীকে বিয়ে করার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ভাই যা হওয়ার হয়েছে। দয়া করে পত্রিকায় এটা লিখবেন না। আমার চাকরির ক্ষতি হবে।’ ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেছেন প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েটির ক্লাসে রোল ছিল এক। তবে বিয়ের পর সে আর পরীক্ষা দিতে পারেনি। বিয়ের ব্যাপারে বলেন, ‘সম্প্রতি জানতে পেরেছি মেয়েটিকে বিয়ে করেছেন জাহাঙ্গীর। কিন্তু অভিযোগ না থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনি।’ ওই বিয়ে নিবন্ধন করেছেন কালুপাড়া ইউনিয়নের নিকাহনিবন্ধক নজরুল ইসলাম। নজরুল ইসলাম বলছেন, ‘ঘটনাটি অনেক আগের, এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না, খাতা দেখতে হবে।’ উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শাহেদুল হক বলেন, ‘একজনের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করা ঠিক নয়। তিনি একটি কেন, সাতটি বিয়ে করতে পারেন।’ তবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীর বয়স ১০ বছর। কোনোভাবেই এ বয়সে ছাত্রীর বিয়ে হতে পারে না। তদন্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পরেই তদন্ত করতে শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি। প্রতিবেদন হাতে পেলে অভিযুক্ত শিক্ষক ও যাঁরা ওই বিয়ে পড়ানোর সাথে জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিলেও আদৌ এর কোন বিচার হয়নি। সমাজের ও রাষ্ট্রের কিছু অসৎ লোকের প্রশ্রয় এমন কিংবা এর চেয়েও বড় বড় অপরাধ করে মানুষ পার পেয়ে যায়।

পুরুষকে সত্যিকারের মানুষ হতে হবে। এবং শিক্ষক হবে সেই মানুষের কারিগর। আমাদের দেশের খাদিজারা যেন আর কোন শিক্ষকের দ্বারা ধর্ষিত না হয় সেজন্য সমাজের সর্বস্তরের লোকদের এগিয়ে আসতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে নারী সমাজকেও। কোন সংকটকালে নারী পুরুষ দুইশ্রনীতে বিভাজন হয়ে গেলে চলবে না। নারী বাদ দিয়ে পুরুষ অসম্পুর্ন। তদ্রুপ পুরুষ বাদ দিয়েও নারী অসম্পুর্ন। এ ব্যাপারে সূরা আল আহযাবের ৩৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন-

إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا

নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, , যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার। For Muslim men and women,- for believing men and women, for devout men and women, for true men and women, for men and women who are patient and constant, for men and women who humble themselves, for men and women who give in Charity, for men and women who fast (and deny themselves), for men and women who guard their chastity, and for men and women who engage much in Allah.s praise,- for them has Allah prepared forgiveness and great reward. মনে রাখবেন মানুষকে ভালোবাসলে মানুষও আপনাকে ভালোবাসবে। মানুষের জন্য যদি সামান্য ত্যাগ স্বীকার করেন, তবে জনসাধারণ আপনার জন্য জীবন দিতেও পারে। বাহ্যত পুরুষ নারীর অভিভাবক হলেও আল্লাহ নারীকে পুরুষের মানসিক আশ্রয় বানিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এবং দাম্পত্য জীবন সুখময় করতে তাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সহানুভূতি দান করেছেন। এ ব্যাপারে সুরা রোমের ২১ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন,

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।

And among His Signs is this, that He created for you mates from among yourselves, that ye may dwell in tranquillity with them, and He has put love and mercy between your (hearts): verily in that are Signs for those who reflect. বহু পুরুষেরা নিজের স্ত্রীকে নির্যাতনের মাধ্যমে নিজের পুরুষেত্বের জানান দেয়। আমি সে সব পুরুষদের ধিক্কার দেই। আসলে পুরুষেরা দৃঢ়তা ও সাহস, স্বাধীনচেতা হওয়া, পুরুষত্ব বা নরত্বের বড় গুন। এসকল গুণ স্থান ও পরিবেশভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। পুরুষত্ব ও ক্ষমতাকে বেশ গুরুত্ব দেয় নারীরাও। কিন্তু সেই ক্ষমতার অপব্যবহার যখন নিজের স্ত্রীর সাথে করা হয়, তখন সেটাকে পুরুষত্ব বলা যায় না। তখন পুরুষত্ব পরিনত হয় পশুত্বে।

শামীম আহমেদ।

লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

আরও পড়ুন

×