প্রকাশিত: 14/10/2019
বহু কোটি বছর আগে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছিল শুধুই হ্রদ। তারপর একদিন সেই হ্রদ রূপান্তরিত হয় উপত্যকায়। নাম হয় ‘কাশ্মীর’। দ্বাদশ শতকে লেখা কবি কলহনের ‘রজতরঙ্গিনী’ও বলছে হ্রদ থেকেই কাশ্মীরের উৎপত্তি।
সংস্কৃত ভাষায় ‘কা’ শব্দের অর্থ জল। ‘শিমিরি’ শব্দের অর্থ ‘শুষ্ক’ করা। অর্থাৎ জল শুকিয়ে যে স্থলভাগের উৎপত্তি, তা-ই ‘কাশ্মীর’। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, ঋষি কাশ্যপ জলসেচন করে শুষ্ক করেছিলেন। তার নাম থেকেই নামকরণ কাশ্মীরের।
মহাভারতে বলা হয়েছে কাশ্মীর ছিল কম্বোজদের রাজ্য। পরবর্তীকালে পাঞ্চালরাও এ ভূখন্ড শাসন করেছিল। তাওয়াই নদীর ধারে জম্মু নগরীর গোড়াপত্তন খ্রিস্টীয় নবম শতকে, রাজা জম্বুলোচনের হাতে। তার নাম থেকেই নগরীর নামকরণ করা হয় ‘জম্মু’।
ইতিহাসে জম্মু-কাশ্মীর
প্রাচীন ভূখন্ড কাশ্মীরে প্রস্তর যুগেও মানুষের বাস ছিল। বৈদিক যুগে উত্তরকরুদের রাজ্য ছিল কাশ্মীর। এরপর স¤্রাট অশোকের যুগে মৌর্য সা¤্রাজ্যের অংশ ছিল কাশীর। কুষাণ সম্রাজ্য কণিষ্কের সময় কাশ্মীর ছিল গুরুত্বপূর্ণ শহর।
এ সময় থেকে কাশ্মীর বৌদ্ধধর্ম চর্চার মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এরপর আক্রমণের সময়েও কাশ্মীর ছিল তাদের মূল ঘাঁটি। ৬২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কাশ্মীর শাসন করে। এরপর কারকোটা এবং উৎপল বংশ ছিল কাশ্মীরের দুইটি উল্লেখযোগ্য শাসকগোষ্ঠী।
১১০১ সাল থেকে কাশ্মীরে শুরু হয় লোহারা রাজবংশের শাসন। ১৩৩৯ সালে লোহারা রাজবংশের শাসন শেষ হয়। মধ্যযুগে লোহারা বংশের শাসনে কাশ্মীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ধস নামে। এ সময় তুর্কিরা কাশ্মীর দখল করে নেয়।
১৩৩৯ সালে কাশ্মীরের প্রথম মুসলিম শাসক হিসেবে অধিষ্ঠিত হন শাহ মীর এবং তিনি সেখানে রাজবংশের গোড়াপত্তন করেন। তার শাসনামলে কাশ্মীরে ইসলাম ধর্মের বিস্তার ঘটে। তুর্কিদের হাত থেকে কাশ্মীরের ক্ষমতার হাত বদল হয় মোগলদের কাছে।
এ সময় পারস্য ও মধ্য এশিয়ার শিল্প-সংস্কৃতি হয়ে ওঠে কাশ্মীরের নতুন পরিচিতি। একদিকে যেমন প্রাচীন পরিচিতি আড়ালে চলে যায়, অন্যদিকে কাশ্মীরে বিকশিত হয় শাল বয়ন, সূচিশিল্প ও কাঠের কাজ।
সম্রাট আকবরের সময় মোগল সাম্রজ্যের সাথে কাশ্মীর সরাসরি যুক্ত হয়। সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনকালে কাশ্মীর উপত্যকায় মোগল শাসনের সমাপ্তি কাটে। নাদির শাহের আক্রমণে আরো দুর্বল হয়ে পড়ে কাশ্মীর।
এরপর আফগান দুররানি সম্রাটরা ১৭৫২-১৮১৯ সাল পর্যন্ত কাশ্মীর শাসন করেন। ৪০০ বছর তুর্কি-পার্সিয়ান-মোগল শাসনের পরে অষ্টাদশ শতকের শেষ থেকে কাশ্মীরে ক্ষমতা বিস্তার করতে থাকে শিখ শক্তি।
২০ এপ্রিল-৫ জুলাই ১৮১৯ এক অভিযানের মাধ্যমে প্রথম শিখ মহারাজা রঞ্জিত সিং কাশ্মীর দখল করে তাকে তার রাজ্যের সাথে সংযুক্ত করেন। ১৬ জুন ১৮২২ তিনি হিন্দু শাসক গুলাব সিংকে জায়গির হিসেবে জম্মু প্রদান করেন।
১১ ডিসেম্বর ১৮৪৫-৯ মার্চ ১৮৪৬ প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে শিখরা পরাজিত হয়। ১৬ মার্চ ১৮৪৬ অমৃতসর চুক্তির মাধ্যমে জম্মুর রাজা গুলাব সিং ব্রিটিশদের কাছ থেকে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য ৭৫ লাখ রুপি দিয়ে কিনে নেন।
ব্রিটিশরা গুলাব সিংকে জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম মহারাজা ঘোষণা করেন। তখন থেকে কাশ্মীর দেশীয় রাজ্য (চৎরহপবষু ঊরঃবং) অঞ্চলের মর্যাদা ভোগ করে আসছে। গুলাব সিংয়ের উত্তরসূরি হলেন রণবীর সিং, প্রতাপ সিং ও হরি সিং।