করোনা ও প্রভাব “বিশ্ব ও বাংলাদেশ”

করোনা ও প্রভাব “বিশ্ব ও বাংলাদেশ”

ভুমিকা : নভেল করোনা বা কভিড-১৯ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ঘোষিত একটি মহামারি রোগ। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের একটি প্রজাতির সংক্রামন শুরু হয়। উহানে দেখা দেওয়া ভাইরাস প্রজাতিটি প্রজাতির সাথে প্রায় ৭০% জিনগত মিল পাওয়া যায়।

প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হয় এ রোগটি সাপ অথবা বাদুরের মাধ্যামে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সহ বহু রাষ্ট্রের দাবি রোগটি চীনের একটি গবেষণাগার থেকে মানুষের মাঝে সংক্রামিত হয়েছে।

করোনা ভাইরাস : করোনা শব্দটি ল্যাটিন ভাষা ‘করোনা’ থেকে নেওয়া হয়েছে যার অর্থ ‘মুকুট’। কারণ ইলেট্রন অনুবীক্ষণ যন্তে ভাইরাসটির আবরণ থেকে গদা-আকৃতির প্রোটিনের কাঁটাগুলির কারনে এটিকে অনেকটা মুকুটের মতো দেখায়। ভাইরাসের উপরিভাগ প্রোটিন সমৃদ্ধ থাকে যা ভাইরাল স্পাইক পেপলোমার দ্বারা এর অংগসংস্থান গঠন করে। ভাইরাসটির আওেশ নাম ২০১৯- এনসিওডি বা নভেল করোনা ভাইরাস।

১৯৬০- এর দশকে করোনা ভাইরাস প্রথম আবিষ্কিৃত হয়। প্রথমদিকে মুরগির মধ্যে সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস হিসেবে এটি প্রথম দেখা দেয়। পরবর্তীতে সাধারণ সর্দি- কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এরকম দুই ধরনের ভাইরাস পাওয়া য়ায। 

করােনা ভাইরাস বলতেভাইরাসের এমন একটি শ্রেণীকে বোঝায় যেগুলি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদের আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাস শ্বসনালীর সংক্রামণ ঘটায়। সংক্রমণের লক্ষণ অনেক সময় মৃদু হতে পারে, যা সাধারণ সর্দি- কাশির ন্যায় মনে হয়।

আবার কিছু ক্ষেএে তা অনেক মারাত্মক মনে হয়ে থাকে,যা অনেকের মৃত্যুও কারণ হয়। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো টিকা বা অ্যান্টিভাইরাস ওষুধ আবিস্কিৃত হয়নি, তবে বিশ্বব্যাপি বিসংস্থার মতে, ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তবে কিছু গবেষকের মতে এর স্থায়িত্ব ২৪ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।

করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক লক্ষণ সমূহ : বিজ্ঞানীদের মতে করোনা ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর প্রায় পাঁচ দিন পর এর লক্ষণ দেখা দেয়। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক রক্ষণ সমূহ হলো-- জ্বর , শুষ্ক কাশি, গলা ব্যথা , শ্বাস কষ্ট, মুখের স্বাদ হারিয়ে য়াওয়া, নাকের ঘ্রান শক্তি লোপ পাওয়া, অবসাদ, বমি হওয়া, মাথা ব্যাথা, পেটের সমস্যা,ইত্যাদি। তবে অনেকের ক্ষেএে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ থাকে না।

করোনা ভাইরাসের লক্ষণ কতোটা মারাত্মক : এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার হার ১% থেকে ২% এর মধ্যে, তবে এই পরিসংখ্যান পুরোপুরি

বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার হার অনেক পরিবর্তন রয়েছে।
৫৬ হাজার আক্রান্ত ব্যক্তির উপর বিশ্বে স্বাস্থ সংস্থার এক গবেষনায়দ্ধ বলা হয়েছে।
 এই রোগে ৬% কঠিন ভাবে অসুস্থ হয় ।
 ১৪% এর উপর তীব্রভাবে উপসর্গ দেখা দেয়।
 ৮০% এর মধ্যে হালকা উপসর্গ দেখা দেয়।

ঊয়স্ক ব্যক্তি যাদের বিভিন্ন রকমের অসুস্থতা রয়েছে যেমন- অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি তাদের অসুস্থ হবার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও যারা ধুমপান বা নেশা করে থাকে তাদের মাঝেও আক্রান্ত হবার সম্ভানা অনেক বেশি। এ রোগে আক্রন্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির মধ্যে নারীদের থেকে পুরুষের হার বেশি।

করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় : করোনা ভাইরাসের অনেকগুলো পজাতি রয়েছে যার মধ্যে মাএ ৭ টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। ভাইরাসটি মানুষের দেহে প্রবেশ করে তার গঠন পরিবর্তন করছে বা ‘মিউটেশন, করছে যার কারণে প্রতিনিয়তই ভাইরাসটি নতুন নতুন রুপ নিচ্ছে এবং আরো ভংঙ্কর হচ্ছে । সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে বা আক্রান্ত ব্যক্তির হাচি-কাসির মাধ্যামে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিভিন্ন ধাপ

১. বিদেশ থকে আগত রোগির মাধ্যামে : যে সমস্ত দেশে আগেই সংক্রমন ঘটেছে সেই অঞ্চল থেকে কেউ সংক্রমণের শিকার হয়ে নিজের দেশে ফিরলে, তাকে প্রথম পর্যায়ের সংক্রমন বলা হয় ।
২. আঞ্চলিক সংক্রমন : বিদেশ থেকে ফেরত রোগির সান্নিধ্যে এসে কেউ সংক্রমিত হলে তাকে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমন বলা হয়। এক্ষেএে যতদূর সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
৩. পারস্পরিক সম্প্রদাযের মধ্যে সংক্রমন : বিদেশ থেকে আগত রোগি বা যে কোনো করোনা আক্রান্ত রোগির সান্নিধ্যে না এলেও কেউ যখন সংক্রমিত হয় তখন তাকে তৃতীয় পর্যাযের সংক্রমন হয়। এপর্যায়ের সংক্রমন অনেক দ্রুত, অনেক বড় এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
৪. মহামারী : এটা শেষ এবং সবথেকে খারাপ পর্যায়। যখন সংক্রমন অত্যন্ত দ্রুত মহামারীর আকারে। এ পর্যায়ের সংক্রমণ একবার হয়ে গেলে তা আটকানো একরকমের অসম্ভব। করেনানা ভাইরাস থেকে বাঁচার

উপায় : করোনা ভাইরাস যেহেতু বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া এক নতুন ভাইরাস তাই এর কোন প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার হয়নি। তাই এ ভাইরাস থেরেক বাঁচার একমাএ উপায় হলো , ইতোমধ্যে যারা অক্রান্ত হয়েছে যারা এ ভাইরাস বহন করছে তাদের স্পর্শ এড়িয়ে চলা।

এছাড়া বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবানু মুক্ত করা , ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করা ,হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পশ না করা, বাইরে গেলে ঘরে ফিরে প্রথমে শরীরে জীবানু নাশক স্প্রে করা এবং ভাল করে সাবান দিয়ে গোসল করা। এছাড়াও বাইরে বের হলে পিপিই পরে বের হওয়া। আর যতটা সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।

কোয়ারেন্টিন : ১৪ শ শতকে ইউরোপে ব্ল্যক ডেথ মহামারি আকাে ছড়িয়ে পড়লে ভেনিস কতৃপক্ষ একটি নিয়ম জারি করে। আর সে নিয়ম হলো কোন জাহাজ বন্দরে ভিরে যাত্রীদের নামানোর আগে সেটাকে সমুদ্রে ৪০ দিন নোঙর করে রাখতে হবে । এই ৪০ সংখ্যাটিকে ইতালির ভাষায় কোয়ারানতা বলা হয় । এই ৪০ দিন অপেক্ষার সময়টিকে তারা বলতো কোয়ারান-তিনো । সেই থেকে
কোয়ারেন্টিন শব্দটি এসেছে।

কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন : জাতীয় রোগতত্ব নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর সংস্থার সাবেক পরিচালক ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন-আপাতভাবে সুস্থ মনে হওয়া মানষদের জন্য কোয়ারেন্টিন। তাঁর মতে যেসকল মানুষকে সুস্থ মনে হয় কিন্তু তারা সুস্থ হতে পারে আবার নাও হতে পারে, তার মধ্যে হয়তো জীবানু আছে কিন্তু তা মধ্যে কোন উপসর্গ দেখা দেয়নি-এমন ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।

আইসোলেশন হচ্ছে, কারো মধ্যে যখন জীবাণুর উপস্থিতি ধরা পড়বে বা ধরা না পড়লের তার মধ্যে উপসর্গ থাকবে তখন তাকে আলাদা করে যে চিকিৎসার ব্যবস্থার করা হয় তাকে আইসোলেশন বলে।

ভাইরাস মোবেলায় যেসকল বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে : করোনা ভাইরাস বিভিন্নভাবে মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সাধারণ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

১. গণপরিবহণ : গণপরিবহণ এড়িয়ে চলতে হবে । সম্ভব না হলে বাস, ট্রেন, বা অন্য যে কোন পরিবহণের হাতল ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং পরিবহণ থেকে নেমে নিজেকে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

২. কর্মক্ষেএ : কর্মক্ষেএে একই কম্পিউটার অনেকে ব্যবহার করে থাকে। এজন্য কাজ করার পূর্বে নিজের ডেস্ক , কম্পিউটার , মাউস, কী-বোর্ড, চেয়ার ইত্যাদি জীবাণু মুক্ত করে নিতে হবে।

৩. জনসমাগম স্থল : যেসকল স্থানে অধিক জনসমাগম হয় সেসকল স্থান থেকে বিরত থাকতে হবে । যেমন : সিনেমা হল, খেলাধুলার স্থান, মার্কেট ইত্যাদি।

৪. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান : ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও প্রচুর লোকসমাগম ঘটে। সেখানে সকলের লেখার জন্য কলম রাখা হয়, একই কলম যদি আক্রান্ত ব্যক্তি ধরে তাহলে পরবর্তীতে যারা ব্যবহার করবে তাদেরও আক্রান্ত হবার ঝুকি থাকে। সেজন্য আলাদা
কলম ব্যবহার করতে হবে।

৫. লিফট : লিফট প্রতিদিন শতশত মানুষ ব্যবহার করে থাকে । সেজন্য লিফট ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে ।

৬. টাকা –পয়সা : টাকা-পয়সা সবচেয়ে বেশি করোনার ঝুঁকির কারণ । পপ্রতিদিন শতশত মানুষের হহাত ঘোওে টাকা। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা টাকা অন্যরা ব্যবহার করলে তারাও আক্রান্ত হতে পারে ।

৭. শুভেচ্ছ বিনিময় : করোনা মোকাবেলায় সামাজিক দুরুত্ব বিশেষ ভ’মিকা রাখে । সেজন্য শুভেচ্ছা বিনিময়ের ক্ষেএে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে হবে।

করোনা ভাইরাস এর পরীক্ষা করার পদ্ধতি : করোনা ভাইরাসে নমুনা যে কোন জায়গা থেকেই সংগ্রহ করা সম্ভব। সাধারণত রোগীর গলার ভিতওের তুলোর ডেলা প্রবেশ করিয়ে, সেটার সাহায্যে লালা সংগ্রহ করা হয় এবং তা পরীক্ষা গারে পাঠানো হয়। তাছাড়া র‌্যাপিড টেষ্টএন্টিবডির উপস্থিতি লক্ষ্য করার মাধ্যমে রক্ত পরীক্ষা করেও এ রোগ সনাক্ত করা সম্ভব।

নমুনা সংহের পদ্ধতি সহজ হলেও ল্যাবরেটরীতে তা পরীক্ষা করার পদ্ধতি বেশ জটিল। কিন্তু যেহেতু করোনা ভাইরাস একটি ভাইরাস, তাই প্রথম ধাপে রোগির দেহ থেকে প্রাপ্ত নমুনায় ভাইরাস থাকলে তার আরএনএ প্রথমে ডিএনএ তে রূপান্তিত হয়। তারপর  পদ্ধতিতে অগন্তিবার রেপ্লিকেশন ঘটে যে প্রতিলিপি তৈরি হয় ,তা থেকে নমুনাতে ভাইরাসের উপস্থিতি সহজেই সেক্ষেএে আক্রন্ত ব্যক্তিকে করোনা পজেটিভ বলা হয়।

ভাইরাস না থাকলে কোনো রকমের প্রতি লিপিই তৈরি হয়না। এরকম একটি পরীক্ষা করতে ২৪ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। তবে প্রচুর নমুনা পরীক্ষার ক্ষেএে সব ধাপগুলো একবারে করার সুযোগ না থাকায় ৪৮-৭২ ঘণ্টাও লাগতে পারে ।

করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ কর্তৃক গৃহিত পদক্ষেপ সমূহ : বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুভার্ব ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে

১. করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ২৬ শে মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সবাংলাদেশ সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এসময় ব্যাংক, ওষুধের দোকান ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান বাদে বাকি সকল কিছু বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে বিভিন্ন ধাপে এ ছুটি বাড়ানো হয় তা ৩০ ম পর্যন্ত কার্যকর করা হয়।

২. ১ এপ্রিল জানানো হয় সামাজিক দুরুত্বনিশ্চিত করার কাজে আইন শৃঙ্খিলা রক্ষাকারী বাহিনিকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনী ও
নিয়োজিত থাকবে।

৩. দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ দানের ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়।

৪. আন্তজাতিক সকল ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করা হয় । এছাড়াও সড়ক নৌপথে প্রবেশে বাধা প্রদান করা হয়।

৫. করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বাংলা সরকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে।

৬. সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পরও করোনা নিয়ন্ত্রনে না আসায় সমগ্র দেশকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। রেড জোন, ইয়োলো জোন, ও গ্রিন জোন। রেড জোনে আবারও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। রেড জোনে সকল রকমের অফিস প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়।

৭. ডাক্টার-পুলিশ-নার্স ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিনা মূল্যে নিরাপওা সামগ্রী প্রদান করা হয়।

৮. বিভিন্ন সেচ্ছা সেবী দারিদ্র্য মানুষদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন ও খাদ্য বিতরণ করেন।

করোনা প্রভাব মোকাবেলায় আর্থিক প্রোণদনা : করোনাভাইরাসের কারনে দেশের আর্থিক খাত যে ক্ষতির শিকার হয়েছে তা কাটাতেই সরকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোাষনা করেছে।

আর্থিক প্রণোদনা : অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে, কর্মে উৎসাহ যোগােেত ও ব্যবসায়ীক ক্ষতি কাচাতে সহায়তা হিসেবে সরকারের তরফ থেকে যে আর্থিক প্যাকেজ বা সুবিধা প্রদান করা হয় তাকে আর্থিক প্রণোদনা বলে। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসের আথিৃক ক্ষতি কাটাতে ৭২৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোণনা করেন। এর মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা শিল্প ঋণের জন্য ,২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের জন্য ,৫ হাজার কোটি টাকা
রপ্তানিমুখি শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদেও বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য। পাশাপাশি ৫ হাজার কোটি টাকা নিম্ন আয়ের মানুষ ও কৃষকের জন্য, ১২৫০০ কোটি টাকা রফতানি উন্নয়ন ফান্ড, ৫ হাজার কোটি টাকা প্রিশিপমেন্ট ঋনের জন্য, ৭৬১ কোটি টাকা গরিব মানুষের নগদ সহায়তার জন্য, ৮৭৫ কোটি টাকা দশটাকা কেজিতে চাল দেওয়ার জন্য এবং স্বাস্থ্যে খাতে অতিরিক্ত ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

আর্থিক প্রণোদনা ভুমিকা : বড় রকমের সংকট মোকাবেলায় দেশে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা হয়। করোনার এই মন্দার সময় বিশ্বের অনেক দেশ তাদেও জিডিপির ৫০ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা ঘোষনা করেছে। প্রণোদনা ঘোষনা না হলে ,ব্যবসায়ী, উদ্যাক্তারা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবেন না। একদিকে যেমন ব্যবসা ক্ষতি হবে অন্য দিকে সরকারকে বড় ধরনের বেকারত্বের মুখোমুখি হতে হবে। সুতরাং অর্থনৈতিক দিক থেকে, চাকরির দিক থেকে,সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে প্রণোদনার ভুমিকা অপরিসীম।

বেকারত্ব ও দারিদ্র বৃদ্ধিতে করোনার ভুমিকা : আন্তজাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির কারনে এই বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে আগামী তিন মাসের মধ্যে ১৯ কোটি মানুষ তাদেও পূর্ণকালিন চাকরি হারাতে যাচ্ছে। এতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় চাকরি হারাতে যাচ্ছে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ।

আমেরিকার দেশগুলেতে চাকরি হারাবেদুই কোটি চল্লিশ লাখ কর্মী , ইউরোপ ও এশিয়ায় দুই কোটি ,আরব দেশগুলোতে প্রায় ৫০ লাখ ও আফ্রিকায় এককোটি নব্বই লাখ কর্মী কর্মহীন হবে। বর্তমান বিশ্বের পূণ বা খন্ডকালীন মোট কর্মশক্তির প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে চার জনের পেশা কোন না কোনভাবে কোভিড- ১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

আইএলও এর মহাপরিচালক গাই রেইডার এর মতে “উন্নত ও উন্নয়নশীল সব দেশের ব্যবসা বাণিজ্য ও কর্মশক্তি চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। আমাদেও যৌথভাবে ,সুপরিকল্পিতভাবে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এখন সঠিক আর দ্রুত ভিত্তিতে নেয়া পদক্ষেপটি টিকে থাকা আর ভেঙ্গে পড়ার মধ্যে পাথর্ক্য তৈরি করতে পারে”।

করোনা ও খাদ্য নিরাপত্তা : জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও) আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, বিশ্ব জুড়ে জারি করা লকডাইনের জেরেই অনঅভিপ্রেত খাদ্যের সংকোট তৈরি হতে পারে। খাকবারের অভাব এখন বোঝা না গেলেও লকডাইউনের পর খাদ্র্যেও প্রকট অভাব দেখা দিতে পারে। দেখা দিতে পারে দর্ভিক্ষ।বাংলাদেশের মত ক্ষুদ্র অর্থনীতির দেশের জন্য এই সংকট ক্রমেই ঘনীভভুত হচ্ছে।

পিপিআরসি ও বিআইজিডি করা এক জরিপে দেখা যাচ্ছে ,“চলমান সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিপর্যয়ে পড়েছেন মাঝাড়ি, অতিদরিদ্র মানুষ। এতে নতুন এক দরিদ্র শ্রেণীর সৃষ্টি হচ্ছে। শহরাঞ্চলে ৮৩ শতাংশ ও গ্রামে ৭৯ শতাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তারা খাবারের জন্য ব্যয় কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

শহরাঞ্চলে মানুষের খাবারের পরিমান কমে গেছে ৪৭ শতাংশ, গ্রামে কমেসছে ৩২ শতাংশ ”। পরিবেশ দূষণ মোকাবেলায় করোনার ভুমিকা : প্রাণঘাতি মহামারীর থাবায় সারা বিশ্বও মানুষ যখন আক্রন্ত তখন প্রকৃতিতে ঠিক তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশে চলমান লকডাউনের কারনে প্রতিদিনই কমছে দূষণের মাত্রা। ইউরোপ যুক্তরাষ্টের মানুষেরা ঝকঝকে নীল আকাশের দেখা পাচ্ছে। এছাড়াও লোকালয়ে ফিরছে বিভিন্ন রকমের নাম না জানা অনেক পাখি।

পরিবেশবাদীদের বিক্ষব, জলবায়ু সম্মেলন বা রাষ্টনায়কদের আশ্বাস এতদিন যা বাস্তবায়ন করতে পারেনি তা কওে দেখিয়েছে করোনা। সারাবিশ্বে যান চলাচল কমার কারনে ও বিভিন্ন কলকারখানা বন্ধ হওয়ার কারনে বায়ুমন্ডলে কার্বন- ডাইঅক্রাইড এর পরিমান হ্রাস পেয়েছে, যার কারনে ৫% পর্যন্ত প্রকৃতির দূষণ কমেছে। পৃথিবী এর কারনে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরবর্তী সময়ের প্রকৃতিতে ফিরেছে।

কোপারনিকাস এ্যাটমোস্ফিয়ার মনিটরিং সার্ভিস ও কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস নিশ্চিত করেছে যে ,লকডাউনের কারনে কার্বন নিঃসরন কমে আসায় ওজন স্তরে যে বিশাল ক্ষত বা গর্ত তৈরী হয়েছিল তা পৃথিবী নিজেই সারিয়ে তুলেছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে-এক বছরে বিশ্বের ট্রাফিক কমেছে ৩৫%। নিউওয়ার্ক এবং দিল্লির মতো ব্যস্ত শহরগুলোতে ১০% নিন্মমুখি গ্যাসের পরিমান। যারফলে মৃতপ্রায়
পৃথিবী আবার ও নিঃশ্বাস নিতে শুরু করেছে।

বেকারত্বে করোনা ভাইরাসের প্রভাব : বৈশ্বিক মহামারি করোনার ক্রমবর্ধমান হারে শুধু মানুষই মারা যাচ্ছে না, একই সাসে তা বিশ্ব অর্থনীতিকের দমিয়ে দিচ্ছে। অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব মোকাবেলার বিষয়টি নিয়ে এখনই সকলের ভাবতে হবে। করোনা পরবর্তী অর্থনীতির পুর্নগঠন নিয়েও ভাবতে হবে। ভয়াবহ মন্দার কারণে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভুত হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই কর্মী ছাটাই শুরু করেছে। এতে করে বেতন দিতে হবে কম।

ক্ষতি কিছুটা পোষাবে বা ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে ফ্লো-তে আসতে পারবে। আন্তজাতিক শ্র্রমসংস্থা অইএলও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে করোনা ভাইরাসের কারনে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে তাতে ৩৩০ কোটি কর্মক্ষম মানুষের আংশিক পরোপুরি বেকার হয়ে যেতে পারে। আইএমএফের অনুযায়ী ৫ থেকে মশুরু করে ১০% এর ওপরে মানুষ চাকরি হারাবে এই সময়ে।

উন্নয়শীল এবং অনুন্নত দেশগুলোর জন্য বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা। করোনার প্রভাবে বিশ্বের ছোট, বড় এবং মাঝারি সব ধরনের শিল্পই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বেকারত্বের কারণে সৃষ্ট সমস্যা সামাল দেয়া তাৎক্ষণিক ভাবে সম্ভব হবে না। কারণ বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া, যা বছরের পর বছর চেষ্টার ফল। মানবিক দিক বিবেচনা করেও প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী ছাটাই নাও করতে পারে । কারণ যে কাজ ১০ জন করতে পারবে সেটা কখনও ৬-৭ জন

দিয়ে করা সম্ভব নয় : আবার কম্পানিগুলো যদি তাদের কর্মীদের বেতন কিছুটা কমিয়ে দেয় তাহলে অনেকে চাকরি হারানো থেকে যেমন বেচে যাবে অনুরূপভাবে কোম্পানির তাদেও ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবে ।

করোনা ভাইরাস ও বাংলাদেশের অর্থনীতি : করোনার এই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা এখনো কেউ বলতে পারছে না । কিন্তু সারা বিশ্বের মতো চাপের মুখে বাংলাদেশের অর্থনীতিও। এরই মধ্যে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমে গেছে। কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশ্বে ব্যাংক বলছে , করোনার কারনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুই থেকে তিন শতাংশে নেমে যেতে পারে।

যেখানে অর্থবছরের শুরুতে আট দশমিক দুই শতাংশ প্রবৃদ্ধিও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলো সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে করোনায় লকডাউনের কারণে ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল এই এক মাসে অর্থনীতিতে একি লাখ দুই হাজার তিনশত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। আর কৃষি শিল্প ও সেবা খাতে দেশে ক্ষতির পরিমাণ প্রতিদিন তিন হাজার তিনশত কোটি টাকা। হোটেল, রেস্তোরা, পরিবহণ শ্রমিক, রিকসা চালক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন অপ্রতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরতদের কোন কাজ নেই।

অর্থনীতিকে সচল করতে গ্রহণ করা পদক্ষেপ সমূহ : বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল করতে সীমিত আকারে ধীরে ধীরে সকল কিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে। পোশাক কারখানা সবচেয়ে আগে খুলে দেওয়া হয়েছে। সীমিত আকারে দোকানপাট ও শপিংমলও চালু হয়েছে। সব ধরনের যান চলাচল নিরাপদ দুরত্ব মেনে চলার শর্তে চালু করা হয়েছে ।

করোনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ক্ষতি সমূহ
:
 রপ্তনীতে ধস : লকডাউনের কারণে ইউরোপ ও আমেরিকার ব্যবসা বাণিজ্য কার্যত ঊহৃ। এসকল দেশের ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো তাই পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। কয়েকশো কোটি ডপলারের কার্যদেশ বাতিল করেছে। এর ফলে এপ্রিলে রপ্তানি আয় নেমে এসেছে মাএ ৫২ কোটি ডলারে যা আগর বছরের তুলনায় ৮২.৮৫% কম।

 প্রবাসি আয় হ্রাস : এপ্রিল ম রেমিটেসের পরিমান ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার , যা আগের বছরের এই সময়ের তুলনায় ২৪% কম। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জ্বালানি তেলের দাম হ্রাস পাওয়ায় সেসকল দেশে অর্থনৈতিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। সেই সব দেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা কর্মসংস্থান নিয়েও বিপাকে আছে।

 চাকুরির অনিশ্চয়তা: লকডাউনের কারনে শিল্প- কারখানা ও সেবাখাতের কার্যক্রম প্রায় ছিল। এসকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চযতা দেখাদিয়েছে। প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের খরচ কমানোর জন্য কর্মী ছাটায়ের মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এছাড়াও ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারাও তাদের কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।

 দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পাবার আশঙ্কা : বর্তমানে দেশে দারিদ্র মানুষের সংখ্যা সোয়া তিন কোটির বেশি। গত দেরযুগে আড়াইকোটি মানুষ দরিদ্র্যতা থেকে বেরিয়ে এসেছে।কিন্তু করোনা সংকটের কারনে মানুষের উপার্জন না থাকায় দ্রুতই তারা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখাগেছে করোনার প্রভাবে দেশের নিম্নবিত্তের আয় ৭৫% কমে গেছে।

 মনদার শঙ্কা : বর্তমান করোনা পরিস্থিতে বিশ্বজুড়ে মহামন্দার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের।মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশ কতটা সামলাতে পারবে তা বৈশিক পরিস্থিতির পাশাপাশি নির্ভর করছে সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার উপর।

আরও পড়ুন

×