করোনাকালে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকের হালচাল ও অন্যান্য

প্রকাশিত: 04/11/2020

মোমিন মেহেদী

করোনাকালে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকের হালচাল ও অন্যান্য

‘শিক্ষা ধ্বংস হলেই জানি দেশটা হবে ধ্বংস তাই
সারাদেশে শিক্ষাবন্ধ আর কিছুই বন্ধ নাই
হাটবাজারে-সিনেমা হলে চলছে জবর ছন্দ
কেবল আমার শিক্ষক আর শিক্ষালয়ই বন্ধ’

খুবই দুখের সাথে বলতে হচ্ছে- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সকল সুচেষ্টাকে খাদে ফেলে দিয়ে অন্ধকারের পথে তৈরি হচ্ছে অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি ও সচিবদের পাশাপাশি সচিবালয়ে-পুলিশ-প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিরা; তার উদাহরণ হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিব-উপসচিবদের সাথে সাথে খাদক মালেকদের মত শত শত ড্রাইভার তো আছেই। করোনার মত এমন একটি মহামারির মধ্যেও চলছে প্রধানমন্ত্রীর পকআষ থেকে ত্রাণ-অনুদান-সহায়তা লুট পাট। সেই অন্ধকারের চর্চার কারণে কানে বাজছে  ‘খাবার দে হামাক খাবার দে’র মত উচ্চারণ। চলছে সরকারি স্কুল-কলেজ-গুলোর শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অবসরের মহানন্দের উৎসব এবং শিক্ষা উদ্যেক্তাদের কিন্ডারগার্টেন-সমমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সম্পৃক্ত-শিক্ষক-কর্মচারিদের দুঃসহ দিন। আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন নিরন্ন বেশ কিছু এই কিন্ডারগার্টেন বা বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। কেউ কেউ যুদ্ধ করে চলছেন জীবনের সাথে, নেমেছেন ফেরিওয়ালা-রিক্সাওয়ালা-উবার চালকের নতুন পরিচয়ে। বিভাগীয় শহরগুলোতে থাকতেন এমন অনেক শিক্ষক চলে গেছেন গ্রামের বাড়িতে। দিন কাটাচ্ছেন অর্ধহারে-অনাহারে। এই যখন অবস্থা! তখন সেই হাজার শিক্ষকদের জন্য কোন অনুদান-সহায়তা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার উদ্যেগ না নিয়ে বলা হচ্ছে ঢেলে সাজানো হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থাকে। 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ৮ মাস। শিক্ষার্থীরা গৃহবন্দী যখন; তখন কিসের উন্নয়ন-কিসের ঢেলে সাজানোর কর্ম চলছে? বলতে পারছে না কেউ। ভাবতেও পারছি না যে এই অবস্থায়ও কিভাবে বাংলাদেশের মত একটি দেশে সরকারের একটি অংশ শিক্ষাকে পূঁজি করে কোটি কোটি টাকা লোপাটের কথা ভাবে! কিভাবে খিচুড়ি রান্না শিখতে তারা বিধেম যাওয়ার জন্য বাজেট সাজায়! ছি এমন দেশের জন্যই কি ৯ মাস যুদ্ধ; লক্ষ লক্ষ জীবন দান করেছিলেন আমাদের বীর যোদ্ধাগণ?

আমি নিজেও একজন নিবেদিত শিক্ষা উদ্যেক্তা। সাউন্ডবাংলা স্কুল-এর প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে বিভিন্নভাবে যুক্ত রয়েছি। একজন লেখক হিসেবে বলতে পারি- কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা কেবল নিজের খেয়ে পরের সন্তানকে মানুষ করার জন্যই নয়; শিক্ষাক্ষেত্রে ঝরে পড়া রোধেও ভ‚মিকা রাখছে। তবে বিশ^ব্যাপী প্রত্যয়ের সাথে বলতে পারি- কিন্ডারগার্টেন বা শিশুমন-বিকাশ সাধক বিদ্যালয় হলো ৪ থেকে ৬ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের জন্য এক বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থা। নানা রকম খেলাধুলা ও সৃষ্টিশীল ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের মধ্যে আপনাকে ব্যস্ত করার ও শিশুকে গড়ে তোলার গুণের বিকাশ সাধনই কিন্ডারগার্টেনের উদ্দেশ্য।

কিন্ডারগার্টেন বা শিশু বিদ্যালয়ের আবির্ভাব ঘটে ঊনবিংশ শতাব্দীতে। গ্রেটব্রিটেনের ‘রবার্ট ওয়েন’, সুইজারল্যান্ডের ‘জে এইচ পেস্টালোজি’ আর তার জার্মান ছাত্র ‘ফ্রেডরিচ ফ্রোবেল’ ও ইটালির ‘ম্যারিয়া মন্টিসরি’ প্রমুখ ব্যক্তির শ্রমের ফলশ্রæতি হলো এই শিশুমন-বিকাশ সাধক বিদ্যালয়। গ্রেট ব্রিটেনের শিল্পবিপ্লব শিশু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উৎসাহ দান করেছিল। কারখানার আইন অনুযায়ী ছোট শিশুদের কারখানায় কাজ করতে দেয়া হতো না। অন্যদিকে পরিবারের অন্যান্য লোক দীর্ঘ সময় ধরে কলকারখানায় কাজ করত। কারখানার শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের জন্য ওই ধরনের শিশু বিদ্যালয় ১৮১৬ সালে স্কটল্যান্ডের নিউল্যানার্ক নামক স্থানে রবার্ট ওয়েন কর্তৃক প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়। শিশুদের যথেষ্ট পরিমাণ স্বাধীনতা দান করে তাদের মানসিক বিকাশ সাধনের ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হতো ওই বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায়।

পরে শিশু বিদ্যালয়ে স্মৃতি অনুশীলন ও নৈতিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু হয়। পেস্টালোজা কর্তৃক উদ্ভাবিত উন্নত পদ্ধতিতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ১৮৩৬ সালে ‘হোম এন্ড কলোনিয়াল স্কুল সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

খেলার মাধ্যমে শিশুদের মানসিক প্রশিক্ষণের জন্য ১৮৩৭ সালে ফ্রোবেল জার্মানির বলাস্কেনবার্গ নামক স্থানে একটি বিদ্যালয় খোলেন। তিনি এর নাম দেন ‘কিন্ডারগার্টেন’। তিনি এই নামকরণের মাধ্যমে এই ধারণা পরিস্ফুট করতে চেয়েছিলেন যে- শিশুদের জন্য বিদ্যালয়টি এমন এক পরিবেশ যেখানে উদ্যানের গাছের মতোই তারা স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠে।

উক্ত শিক্ষা ব্যবস্থাটি শিক্ষা সংস্কারক ও শিক্ষাবিদদের মনে ধরে। আর তাই ফ্রোবেলের মৃত্যুর ২৫ বছরের মধ্যেই অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, জার্মানি, হল্যান্ড, হাঙ্গেরি, জাপান, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট ব্রিটেনের প্রধান প্রধান শহরে এই ধরনের স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য দেশেও এই কিন্ডারগার্টেন শিক্ষাপদ্ধতি প্রচলিত হয়েছে। যা বর্তমানে বাংলাদেশে সমাদৃত হয়ে ছড়িয়ে আছে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। 

ডশক্ষা ও স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় শিক্ষাধারার এক প্রতিবেদনে গত ১৪ আগস্ট বলেছে যে, দেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুল আছে প্রায় ৬৫ হাজার। করোনা মহামারিতে স্কুল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ১০ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী। বরাবরই ব্যক্তি উদ্যোগের এসব প্রতিষ্ঠান নানামুখী চ্যালেঞ্জ নিয়ে শিক্ষাদান করে গিয়েছে। ভাড়া বাড়ি, চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল শিক্ষক ও ক্লাসরুম, শিক্ষকদের সীমিত সুযোগ-সুবিধার মতো নানান সীমাবদ্ধতার মাঝেও সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে শিক্ষাগ্রহণের পথে শিশুদের প্রথম হাতেখড়ি দেয়া হয় এসব স্কুলে। করোনার মহামারিতে মানুষ গড়ার এই কারিগরদের এখন এক প্রকার মানবেতর জীবনযাপনই করতে হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কিন্ডারগার্টেনগুলো। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকার থেকে নিয়মিত বেতন পেলেও সম্পূর্ণ নিজস্ব আয়ে চলা কিন্ডারগার্টেনগুলো পড়েছে চরম বিপাকে। স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন পাচ্ছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। এতে মাসের পর মাস স্কুল ঘরের ভাড়া থেকে শুরু করে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারছেন না স্কুলের মালিকরা। দেনা শোধ করতে না পেরে স্কুল বিক্রি করে দেয়ার বিজ্ঞাপনও চোখে পড়েছে কয়েকটি স্থানে। একমাত্র আয়ের এই পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৪ মাস ধরে বিপাকে আছেন বেতন না পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা। কিন্ডারগার্টেনের এসব শিক্ষক-কর্মচারী এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 

আলোকিত সমাজ গড়তে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই; বিকল্প নেই প্রকৃত মানুষ গড়ার জন্য শিক্ষার জন্য নিবেদিত ব্যক্তি উদ্যেগে গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে সহায়তা দেয়ারও। সেই লক্ষ্য থেকে অবশ্য সাংবাদিক-শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল অদুদ, আমি এবং মান্নান মনির দীর্ঘদিন ধরেই উদ্যেগ নেয়ার চেষ্টায় থাকি। ক্রমশ সেই চেষ্টার পথ ধরে যোগাযোগ করা হয় কিন্ডারগার্টেন ও সমমান স্কুল নিয়ে এ্যাসোসিয়েশনগুলো যারা করেছেন অতিতে; তাদের সাথে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদে প্রথম একটি সম্মিলিত প্রয়াসের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আসেন শিক্ষা উদ্যেক্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী, নূরুজ্জামান কায়েস, মিজানুর রহমান সরকার, সেকান্দার আলী হাওলাদার, জিএম জাহাঙ্গীর কবির রানা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খন্দকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শান্তা ফারজানা, জিএম ফারুক, আইয়ুব রানা সহ ১৭ টি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এরপর চলতে চলতে কথা বলতে এগিয়ে যায় দাবি আদায়ের জন্য পদক্ষেপের চেষ্টা। সর্বশেষ ২১ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হাজার হাজার শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধতায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে শিক্ষকগণ দাবি জানান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী-শিক্ষামন্ত্রী-সচিব ও আমলাদের কাছে- দ্রæত আর্থিক সহায়তা দেয়া হোক, খুলে দেয়া হোক কিন্ডারগার্টেন-সমমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। 

হাফেজী-কওমী মাদ্রাসা খুলে দেয়া হয়েছে; কিন্তু কেন খোলা হচ্ছে না কিন্ডারগার্টেন-সমমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো? এই প্রশ্নের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে জানতে পারি- রয়েছে বিভিন্ন জটিলতা। সেই জটিলতার অন্যতম হলো- শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র দেশী-বিদেশী সবজায়গা থেকে পরিচালিত হচ্ছে। কেননা, বাংলাদেশের আগামী প্রজন্ম শিক্ষিত হলে অনেকে এগিয়ে যাবে বিশে^র বুকে। কোন কোন দেশ, কোন কোন ব্যাক্তি তা রোধ করতে চায় বলেই শিক্ষাকে ধ্বংস করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ায় মন দিয়েছে। হয়তো একারণেই গত ৮ মাস টানা স্কুল যেখানে বন্ধ; সেখানে বলা হচ্ছে- প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্কুল ভবন বানানোর জন্য কার্যক্রম চলছে। অবশ্য সেই সাথে তারা তথাকথিত উন্নয়নের উদারহণ টেনে বলছে- তিন বছর আগে নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ীতে জনসভায় হাওড় অঞ্চলগুলোতে আবাসিক সুবিধাসহ স্কুল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই প্রতিশ্রæতি দেন দুর্গম ও পার্বত্য এলাকা, পাহাড়ি, হাওড়-বাঁওড়, চরাঞ্চল এবং উপকূলীয় এলাকায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য। এসব অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার মূল ধারায় আনা ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রæতি রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে, নেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন প্রকল্প। এগুলো বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে এ অঞ্চলের শিক্ষার চিত্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা অঞ্চলে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসংবলিত আবাসিক স্কুল স্থাপনের প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। কাজ চলমান রয়েছে চরাঞ্চলে মাধ্যমিকপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ১৫৭ কোটি প্রকল্পের। পাহাড়ি অঞ্চলের শিক্ষার ধারা পরিবর্তনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজপর্যায়ের অবকাঠামোর কাজও চলছে দ্রম্নতগতিতে। মৌলভীবাজারসহ চা বাগানে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের মূল গ্রোতধারায় নিয়ে আসতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ দুটি প্রকল্প। যার মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য আরেকটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, সিলেট অঞ্চলের চা শ্রমিকরা সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। যুগের পর যুগ তাদের সন্তানরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। পিছিয়ে পড়া চা বাগানের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে বিদ্যালয়বিহীন চা বাগানে নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় স্কুল স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন যেসব এলাকায় বিদ্যালয় নেই সেসব এলাকা ম্যাপিং করে প্রায় ১ হাজার স্কুল করার তালিকা দিয়েছে। 

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন একটাই- কার স্বার্থে এই ১ হাজার স্কুল? শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা চাকুরীচ্যুত-ব্যবসাবন্ধ তাদের-অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক মন্দার মধ্যে তারা। তাদেরকে কোন আলোর পথ না দেখিয়ে এই স্কুল আর ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া কি কেবলমাত্র হরিলুটের জন্য? যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে ৬৫ হাজার কিন্ডারগার্টেন-সমমান স্কুল খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করুন-প্রণোদনা দিন। যা এখন লক্ষ লক্ষ শিক্ষকের প্রাণের দাবি। মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা ফেরৎযোগ্য বরাদ্দ চেয়েছেন নিরন্ন শিক্ষকগণ। তাদের কথা ভেবে হলেও বন্ধ করুন নতুন স্কুল ভবন নির্মাণ পক্রিয়া; যেভাবে বন্ধ করেছেন খিচুড়ি রান্না শিখতে যাওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা লোপাটের প্রকল্প। 

একটি গল্প দিয়ে এই শিক্ষক ও শিক্ষাবান্ধব লেখাটি। একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তির সময় একসঙ্গে তিন মাসের বেতন পরিশোধ করেন জাহিনের বাবা নাসির উদ্দিন। গত এপ্রিল-জুন পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করতে গত কয়েকদিন ধরে স্কুল কর্তৃপক্ষ অনবরত চাপ দিচ্ছে। শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করার হুমকি আসায় পরে বাধ্য হয়ে দুইদিন আগে আরও এককালীন তিন মাসের বেতন পরিশোধ করেন। গার্মেন্টসে মধ্যম পদে চাকরিরত এক অভিভাবক। তার মেয়ে রাজধানীর প্রতিষ্ঠিত একটি স্কুলে পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। তিনি বর্তমানে গার্মেন্টস সেক্টরের হাহাকারের মধ্যে তিন মাস ধরে বেতন পাননি। এই অবস্থায় সামনে এসে হাজির হয়েছে মেয়ের বেতন ও অন্যান্য ফিসহ ৩ হাজার ৭০০ টাকা পরিশোধের নোটিশ। শুধু তাই নয়, তার আরও দুই ছেলের মধ্যে একজন স্কুলে অন্যটি কলেজে পড়াশোনা করে। তাদের পেছনেও মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু এই করোনাকালে আর্থিক সংকটে সেই অভিভাবক পড়েছেন উভয় সংকটে। একবার সিদ্ধান্তই নিয়েছেন স্বপরিবারে গ্রামের বাড়ি চলে যাবেন।

শুধু এই গল্পই নয়; এমন অসংখ্য কষ্ট গল্প তৈরি হচ্ছে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি স্কু-কলেজ থেকে বেতন ও অন্যান্য ফি পরিশোধে প্রতিদিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষক দিয়ে ফোন করানোর মধ্য দিয়ে। না দিলে ভর্তি বাতিলের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। অভিভাভকরা অভিযোগ করেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বেতন আদায় বন্ধ রাখতে সরকার একটি দায়সারা আদেশ দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো মনিটরিং নেই। নাম না প্রকাশের শর্তে হলিক্রস স্কুলে দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকও জানিয়েছেন, তার মেয়ের একসঙ্গে সকল মাসের বেতন দাবি করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। 

পরিস্থিতি যখন ঘোলাটে। তখন নিবেদিত থাকতে হবে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি এগিয়ে আসলেই সকল সমস্যা সমাধান সম্ভব। তা না হলে একদিকে বিভিন্ন প্রজেক্টের আড়ালে কোটি কোটি টাকা লোপাট চলতেই থাকবে, ১০০০ হাজার নতুন স্কুল ভবন নির্মাণের নামে জনগনের টাকা পাচারের রাস্তা প্রশস্থ করবে আবারো রাজনৈতিক-প্রশাসনিক পশুরা, নিঃশ^ থেকে নিঃশ^ হতেই থাকবে বাংলাদেশে শিক্ষিত নতুন প্রজন্ম গড়ার জন্য ৬৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যেক্তা-শিক্ষকগণ। পারতপক্ষে কারোই কাম্য নয় অন্যায়-অপরাধ-দুর্নীতি; তবু বেড়েই চলছে মূলত কথায় কাজে-ধর্ম- দেশপ্রেম-মানবপ্রেম না থাকায়। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু সকলেই চলুন নিরন্তর ধর্ম-দেশপ্রেম-মানবপ্রেমের পাশাপাশি শিক্ষা আলোয় আলোকিত হই...  

মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি [email protected]

আরও পড়ুন

×