মহাকাশে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: 14/10/2019

মোঃ জামাল হোসেন

মহাকাশে বাংলাদেশ

১১ মে ২০১৮ মহাকাশ যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। জাতির ইতিহাসে স্থাপিত হয় গৌরবের এক সোনালি সোপান। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে সফলভাবে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ৫৭তম দেশ হিসেবে বিশ্ব স্যাটেলাইট ক্লাবে গৌরবময় অভিষেক হয় বাংলাদেশের।

কীভাবে উৎক্ষিপ্ত হলো এ স্যাটেলাইট, এর কারিগরি দিকই-বা কেমন, এ স্যাটেলাইট থেকে আমরা কি সুবিধা পাবো? - এসব নিয়েই আমাদের বিশেষ আয়োজন। 


বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ 


১১ মে ২০১৮ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় কেপ ক্যানাভেরালে অবস্থিত কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯এ (৩৯অ) থেকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয় বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।

উৎক্ষেপণের পর নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌছে রকেটের স্টেজ-১ খুলে যায়। এ সময় চালু হয় স্টেজ-২-এর ইঞ্জিন। স্টেজ-১ ফিরে আসে আটলান্টিকে ভাসমান ড্রোন শিপে। আর স্টেজ-২ স্যাটেলাইটটিকে নিয়ে যায় জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে।

সেখানে পেলোড থেকে স্যাটেলাইটটিকে অবমুক্ত করা হয়। এ পুরো প্রক্রিয়া সমাপ্ত হতে সময় লাগে ৩৩ মিনিট। রকেট থেকে উন্মুক্ত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর নিয়ন্ত্রণ নেয়া হয়।

উৎক্ষেপণের ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট পর গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশন এর প্রাথমিক সংকেত গ্রহণ করে। মহাকাশের নির্ধারিত ১১৯.১ক্ক পূর্ব দ্রাঘিমাংশে নিজস্ব অরবিটাল স্লটে জায়গা করে নিতে ৩৫,৮০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১কে।


ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ 


বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যে লঞ্চ কমপ্লেক্স থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়, সেই ৩৯এ লঞ্চ কমপ্লেক্স থেকেই ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপেলো-১১ মহাকাশ যানটি প্রথমবারের মতো মানুষকে চাঁদে পৌঁছে দিয়েছিল।


মানুষের মহাকাশযাত্রার ইতিহাসে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’-এর উৎক্ষেপণ চিহ্নিত হয়ে থাকবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটের নতুন সংস্করণের প্রথম সফল উৎক্ষেপণ হিসেবেও।

ব্লক ৫’র এ সফলযাত্রার ওপর ভর করেই মঙ্গল অভিযানের স্বপ্ন দেখছে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক রকেট কোম্পানি SpaceX। এ নভোযানে চড়েই ডিসেম্বর ২০১৮ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নভোচারী পাঠাবে SpaceX। 


নির্দিষ্ট কক্ষপথে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ 


২১ মে ২০১৮ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কক্ষপথে নিজের অবস্থান ১১৯.১০ক্ক পূর্ব দ্রাঘিমাংশে পৌঁছে যায়। এরপর থেকেই এর ‘ইন অরবিট টেস্ট’ (IOT) শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র,

ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি ভূ-উপগ্রহ উপকেন্দ্র থেকে এর IOT টেস্ট করা হয়। IOT টেস্টের পরই এটি গাজীপুর ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।


যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে 


সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে স্যাটেলাইট জগতে। আর নতুন এ যাত্রায় দেশ ও জাতি পেতে যাচ্ছে বেশ কিছু সুবিধা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কক্ষপথে সফলভাবে স্থাপিত হলে বৈশ্বিক

টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতার অবসান হবে। জিওস্টেশনারী কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ থেকে বাংলাদেশ ৪০ ধরনের সেবা পাবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো DTH (Direct To  Home) সেবা,

রেডিও বা স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সম্প্রচার, ইন্টারনেট সুবিধা, টেলিমেডিসিন, ভি-স্যাট, ই-লার্নিং, ই-গবেষণা, ভিডিও কনফারেন্স, দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জরুরি যোগাযোগ, জাতীয় নিরাপত্তা কাজে ব্যবহার,

দূরসংবেদনশীল তথ্যে মাটি বা পানির নিচে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজে, মহাশূন্য এক্সপ্লোরেশন, ছবি তোলার কাজে, গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS), গামা রে বার্ষ্ট ডিটেকশন করতে, পারমাণবিক বিস্ফোরণ,

আসন্ন হামলা ছাড়াও স্থল সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে আগাম সতর্কার্তা পেতে, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিভিন্ন খনি শনাক্তকরণে, ডিজিটাল ম্যাপ তৈরিতে প্রভৃতি।
 

আরও পড়ুন

×