প্রকাশিত: 14/12/2020
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার নির্দেশ দাতা এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদেক। সাদেক এই কাজের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত। বঙ্গবন্ধু হত্যার উত্তরসূরিরাই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার দৃষ্টতা যারা দেখায়। হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন কাজে সাদেক অর্থসহায়তা দিয়ে থাকে। মামুনুল হকেদের মিছিল ও সমাবেশের এই ডোনার এবং উগ্র সাম্প্রদায়িকতা এবং স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বিএনপি জামাতের অর্থদাতা সাদেককে গ্রেফতারের এখনই সময়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে কোন প্রকার ধৃষ্টতা দেখালে দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর ২০২০) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ হুশিয়ারি কথা গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। ‘উগ্র সাম্প্রদায়িকতা এবং স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বিএনপি জামাতের নাশকতা, জ্বালাও পোড়াও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্রলীগকে এখনই দ্বায়িত্ব নিতে হবে জঙ্গি দমনে। ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা যদি মাঠে নামি তাহলে আপনারা কিন্তু পালিয়ে যাওয়ার সুযোগও পাবেন না। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে যদি আবারও ধৃষ্টতা দেখান, তাহলে কিন্তু আমরা দাঁতভাঙা জবাব দেব। সারা দেশ পাঁচ মিনিটে অচল করে দেওয়ার ক্ষমতা ছাত্রলীগের আছে।’ ‘জাতির পিতাকে নিয়ে দেশ বিরোধী কুচক্রী মহল, যারা পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে। তারা আবার ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তি করার চেষ্টা করেন। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘যারা সাম্প্রদায়িকতার বীজ এই দেশে ছড়িয়ে দিতে চায়, তারা দেশদ্রোহীতার শামিল বলে বিবেচিত হবে।
ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বাংলা মায়ের কোলে আমরা যেমন শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে হয়ে থাকতে জানি, ঠিক একইরকমভাবে মৌলবাদ প্রতিরোধে আকাশে বজ্র হয়েও ঝরতে জানি। চারটি মূলনীতি শুধু ছাত্রলীগের একার নয়। দেশের প্রত্যেকটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন এবং শিক্ষার্থীর হৃদয়ের গভীরতম বিশ্বাস থেকে মুক্তিযুদ্ধের উৎসারিত নীতি এসেছে। এ চার নীতি নিয়ে যারা ছিনিমিনি করতে চায়, দেশের ছাত্রসমাজ তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
অবৈধ অর্থের লেনদেন এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ও রিজেন্ট হাসপাতাল সনদ বিক্রির দোকান। শাহেদের কথা নিশ্চই মনে আছে সকলের। রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদকে গ্রেফতার করলেও এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক সাদেককে সরকার এখনও গ্রেফতার করেনি। সরকারের কোন পর্যায়ে ঘাপটিমেরে লুকিয়ে থাকা জঙ্গির ছায়াতলে রয়েগেলো এই জঙ্গি নেতা সাদেক! ভুয়া ইমেরিটাস অধ্যাপক সাহেদ জাল সনদ বিক্রি করার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদন্ড। তবে একই কায়দায় ২৫ বছর ভুয়া সনদ বিক্রি করে সাদেক গ্রেফতার হয়নি। উপরন্তু সাদেক তার নামের শুরুতে ভুয়া উপাধি লাগিয়েছে ইমেরিটাস অধ্যাপক! বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন রজতজয়ন্তী করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি
এক সাহেদের ক্ষেত্রে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি যথাযথ প্রয়োগ মানুষের অন্তরে দারুন স্বস্তি পরিলক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার শাহেদের দুর্নীতি চিহ্নিত করার পর (র্যাব) র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের একটি চৌকস দল যেভাবে সাহেদের হাসপালে অভিযান চালিয়ে হাসপাতালটি সিলগালা করে শাহেদকে গ্রেফতার করলো সেদিকে আমি নজর রেখেছিলাম। এতো সুন্দর একটি কর্মের জন্য আমি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সাহেদের অনৈতিক কর্মের বিচার করতে সরকার যেভাবে অ্যাকশনে গেছে কিন্তু এর চেয়েও বেশি অপরাধ করে এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদেকের অনৈতিক কর্ম যেন সরকার দেখেও না দেখার ভান করছে। সাদেককে বিচারের আওতায় না আনার কারনে সরকারের প্রতি আমার ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আমার প্রশ্ন বাংলাদেশের মতো একটা ঐতিহাসিক (১৯৬২) শিক্ষা আন্দোলনের রাষ্ট্রে জঙ্গি ও জামাত নেতা সাদেক কিভাবে ২৫ বছর লক্ষ লক্ষ মানুষের নিকট অনার্স ও মাষ্টার্সের ভুয়া সনদ বিক্রি করলো! যেমন ধরনের সনদ রিজেন্ট হাসপাতালের শাহেদ বিক্রি করতে পারেনি ২৫দিন।
সাদেক ও সাহেদকের কর্মের যেমন মিল
৫ বছর আগে থেকে আমি সাহেদকে চিনি। তার রিজেন্ট হাসপাতালে আমার এক আত্মি রোগী দেখতে গিয়ে সাহেদের সাথে পরিয়চ হয় আমার। পরিচয়ের শুরুতে তাকে প্রতারক মনে হয়নি আমার। অনেকে সাহেদকে প্রতারক মনে করলেও সবার সাথে তিনি প্রতারনা করেনি। আমার সাথে কথা দিয়ে তিনি কথা রাখতেন। তিনি আমাকে বহুবার ফোন করছেন, কফি পানের আমন্ত্রন জানিয়েছে। পরিচয়ের শুরুতে তিনি আমাকে বলছে এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়ান। উত্তরায় এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই তার রিজেন্ট হাসপাতাল। আমি ভাবছি হতেও পারে। শুরুতে আমি তাকে প্রফেসর সাহেদ হিসেবেই চিনতাম। কিছু বছর পর তিনি ইমেরিটাস অধ্যাপক হবেন এমন তথ্য দিয়ে বলছে ভবিষ্যাতে টেলিভিশনে টকশো করেই কাটাবেন বাকি জীবন।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! বাকি জীবন তাকে জেলেই কাটাতে হবে। এখন এমনটাই অনুমান করা যায়। করোনাভাইরাসের পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার হোতা রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে করা একটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। করোনাভাইরাসের টেস্ট নিয়ে জালিয়াতির বিস্তর অভিযোগ উঠে সাহেদের বিরুদ্ধে। পরিপ্রেক্ষিতে ৬ জুলাই ২০২০ তারিখ রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। অভিজানের আগে আত্মগোপন করে পরে পালিয়ে যায় শাহেদ। ১৫ জুলাই সাহেদকে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তাকে হেলিকপ্টারে করে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আনা হয়।
করোনা পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্টসহ বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ১৬ জুলাই সাহেদকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। এরপর ১৯ জুলাই তাকে নিয়ে উত্তরার বাসার সামনে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। সেখানে সাহেদের নিজস্ব সাদা প্রাইভেটকারে পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ১০ বোতল ফেনসিডিল, একটি পিস্তল এবং একটি গুলি উদ্ধার করা হয়। এরপর উত্তরা পশ্চিম থানায় অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করা হয়। ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাহেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়। এরপর ২৭ আগস্ট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদেককে রিমান্ডে নিলে দেশের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বের হবে।
অনেকেই সাহেদকে চেনেন রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ নামে। টেলিভিশনের বিভিন্ন টকশোতে নানা নীতিবাক্য বলায় সারাদেশের সাধারণ মানুষের কাছেও তার চেহারা পরিচিত খানিকটা। 'সমীহ করা' এই লোকটা নিজের আরও কিছু নাম ব্যবহার করেন নানা জায়গায়। সর্বসাকল্যে স্কুলের গণ্ডি পেরোনো এই ব্যক্তি কখনও নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। কখনও নিজেকে সচিব, মেজর বা কর্নেল বলেও দাবি করেন। মোবাইল ফোনের ফটো গ্যালারিতে সংরক্ষিত ছবিতে প্রভাবশালী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে নিজেকে দেখিয়ে নিজের প্রভাব জানান দেন কখনও কখনও। তার মালিকানাধীন হাসপাতালের গেটেও সেসব ছবি টাঙানো থাকত বড় করে। ঠিক একই কায়দায় এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদেক সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের সাথে মিশতে চেষ্টা করছে। কিছু দিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাথেও ছবি করে ফেসবুকে দিয়েছে।
যেমন বারবার নাম পাল্টানোর নেপথ্যে অপকর্ম আর প্রতারণাকে বৈধ করাই ছিল রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদের উদ্দেশ্য। সাদেক তেমনি তার নামের সাথে এক এক সময় এক এক উপাধি লাগিয়ে বিভিন্ন প্রতারনা করছে। প্রতারণার মাধ্যমে যেমন সাহেদ দুটি হাসপাতালের মালিক, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। মানুষ সাহেদকে সমাজের প্রভাবশালী আর সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে জানলেও রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের অভিযানের পর বেরিয়ে আসছে সাহেদের নানা কুকীর্তির কাহিনি। বহুরূপী এই প্রতারককে নেপথ্যে থেকে কারা দীর্ঘ দিন ধরে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছিলেন? কাদের কারণে বারবার অপকর্ম করেও পার পেয়েছেন তিনি? জেল থেকেও বেরিয়ে কী করে আবারও জড়িয়েছেন একই ধরনের প্রতারণায়? এত মামলা আর অভিযোগ নিয়ে প্রতারক সাহেদ সমাজের মূল স্রোতধারায় যেভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ওঠাবসা করেছেন এবং করোনা হাসপাতাল হিসেবে নিজের প্রতিষ্ঠানকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন, তাতে পর্যবেক্ষকরাও বিস্মিত। কেপিআইভুক্ত এলাকার তার যাতায়াত ছিল প্রায় নিয়মিত। এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক সাদেক ওকই কায়দায় সমাজের মূল স্রোতধারায় মিশতে চায়।
নাম পাল্টে প্রতারণা : রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের ওয়েবসাইটে তিনি নাম লিখেছেন মো. সাহেদ। হাসপাতালের নথিতেও তাই। 'নতুন কাগজ' নামে একটি দৈনিক পত্রিকারও 'সম্পাদক' এবং প্রকাশকও স্কুল পাস মো. সাহেদ। কিন্তু পত্রিকাটির নামে সরকারি অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডে তিনি নাম ব্যবহার করেছেন মোহাম্মদ সাহেদ। তথ্য অধিদপ্তরের অস্থায়ী এই কার্ড নম্বর-৬৮৪৫। তবে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে ওয়েবসাইটে দেওয়া তার স্বাক্ষরের সঙ্গে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের স্বাক্ষরে নূ্যনতম মিল নেই! আবার জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম মো. শাহেদ করিম, বাবার নাম সিরাজুল করিম, মা সুফিয়া করিম। তার বাড়ি সাতক্ষীরায়। ঢাকায় লালবাগে থাকেন। সূত্র বলছে, তিনি দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করতেন।
এ তো গেল তার কাগজপত্রের নাম। প্রতারণা করতে গিয়ে সাহেদ নিজেকে কখনও মেজর ইফতেকার আহম্মেদ চৌধুরী, কর্নেল ইফতেকার আহম্মেদ চৌধুরী, আবার কখনও কখনও মেজর শাহেদ করিম হিসেবে পরিচয় দিতেন। নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে শত শত কোটি টাকার মালিক তিনি! রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে দাবি করতেন। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপকমিটির সাধারণ সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেছেন, 'সাহেদ করিম কমিটির সদস্য নন।'
সাহেদের অপকর্মের হাতেখড়ি চারদলীয় জোট সরকারের আমলে। ওই সময়ে জামায়াত নেতা ও যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলী এবং তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। মামুনের হাত ধরে হাওয়া ভবন পর্যন্ত পৌঁছে যান এই প্রতারক। এরপর প্রতারণার নানা ব্যবসা খুলে বসেন তিনি। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামুনের সঙ্গেই জেলে যেতে হয় তাকে। জেল থেকে বেরিয়ে ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে চালাতে থাকেন অপকর্ম। এভাবে হয়ে যান শত শত কোটি টাকার মালিক। তিনি বীরদর্পে সচিবালয়ে ঘুরে বেড়াতেন। সচিব থেকে শুরু করে বড় কর্তাদের অফিসে দাপটের সঙ্গে কথা বলতেন। পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক সূত্র বলছে, ওই ব্যক্তি কয়েক বছর আগে পুলিশ সদর দপ্তরে নানা পরিচয়ে নিয়মিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কক্ষে ঘোরাঘুরি করতেন।
এমএলএম প্রতারণা : জেল থেকে বেরিয়ে সাহেদ ২০১১ সালে ধানমন্ডিতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে 'বিডিএস ক্লিক ওয়ান' নামে এমএলএম ব্যবসা শুরু করেন। পরে গ্রাহকের অন্তত ৫০০ কোটি টাকা নিয়ে চম্পট দেন। মেজর ইফতেখার করিম চৌধুরী নামে ওই প্রতারণা করেন তিনি। প্রতারণার শিকার লোকজন তাকে খুঁজতে শুরু করলে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় কয়েকটি মামলা হয়। গোপনে দেশে ফিরে মামলাগুলোয় জামিন নিয়ে আবার শুরু করেন একই ব্যবসা। এরপর একে একে রিজেন্ট হসপিটাল লিমিটেড (মিরপুর), রিজেন্ট হসপিটাল লিমিটেড (উত্তরা), ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ, রিজেন্ট ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ও হোটেল মিলিনার মালিক হন সাহেদ।
অন্তত ৩২টি মামলা : সাহেদের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে বিভিন্ন থানায় অন্তত ৩২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বিডিএস কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরির নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণার কারণে উত্তরা থানায় হয়েছে আটটি মামলা। মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের বিমানবন্দর শাখা থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল পরিচয় দিয়ে তিন কোটি টাকা ঋণ নেন তিনি। এ ঘটনাতেও তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া অনুমোদনহীন 'আরকেসিএস মাইক্রোক্রেডিট ও কর্মসংস্থান সোসাইটি' খুলে ১২টি শাখার মাধ্যমে হাজার হাজার সদস্যদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন সাহেদ। এর আগে উত্তরার ৪, ৭ ও ১৩ নম্বর সেক্টরে ভুয়া শিপিংয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। নিজের অপকর্ম চালাতে ছিল তার বিশাল ক্যাডার বাহিনী। থানা পুলিশ থেকে শুরু করে প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে নিজের সাম্রাজ্য স্থাপনের চেষ্টা করেন তিনি। চলাফেরা করতেন ফ্লাগস্ট্যান্ড আর ভিআইপি হর্নযুক্ত গাড়িতে। সবসময় থাকত অস্ত্রধারী দেহরক্ষী।
এটা হলো সাহেদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়। এখন বলছি এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদেকের পরিচয়। স- স হল বাংলা ভাষার একত্রিংশ ব্যঞ্জনবর্ণ এবং বাংলা বর্ণমালার ৪২তম বর্ণ। স এর উচ্চারণ ছ এর শিষ ধ্বনির মতো। এর উচ্চারণ কখনো শ আবার কখনো ইংরেজি S/s এর মতো হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর উচ্চারণ শ এর মতো হয়। তবে কিছু বিদেশি শব্দ ও যুক্তবর্ণে এর সঠিক উচ্চারণ পাওয়া যায়। সাহেদ ও সাদেকের কর্মের কি মিল একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায়।
সনদ লিখতে আমরা স ব্যবহার করি। "সনদ" শব্দটি বাংলাভাষায় বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সনদ বা সনদপত্র দ্বারা সাধারণত শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জিত প্রমাণপত্র কে বোঝানো হয়ে থাকে। এটাকে শিক্ষাসনদও বলা হয়। সনদ দ্বারা দলিলও বোঝানো হয়। ইসলামে হাদিস বর্ণনায় দুটি অংশ থাকে। প্রথম অংশকে সনদ বা ইসনাদ এবং দ্বিতীয় অংশকে মাতন বলা হয়। মোঘল শাসনামলে প্রশাসনিক কাজে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ কিংবা সম্রাট নির্ধারিত ব্যক্তির সিলমোহরসহ রাজকীয় ঘোষণাপত্রকে সনদ বলা হতো। এটা সম্রাটের স্বীকৃত দলিল বা প্রমাণপত্র যার দ্বারা কোন ব্যক্তি বা সংস্থাকে উপাধি, পদ, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি প্রদান করা হতো। কিন্তু এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ নিয়ে লোকেরা কি করে?
একজন ব্যক্তি নির্দিষ্ট শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে এই ধরনের শিক্ষা সনদ অর্জন করে থাকেন৷ অধিকাংশ সময়ে এই অর্জন পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। পৃথিবীর অনেক দেশে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্তের পর সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে। যেমন বাংলাদেশে দশম শ্রেণী পাশ করার পরে জাতীয় ভাবে আয়োজিত পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণদের একটি সনদ প্রদান করা হয় যাকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় সনদ। সর্বশেষ ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় "এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ" কিছু পসার বিনিময় সনদ প্রদান করে যা একজন ভালো শিক্ষার্থীর ক্যরিয়ারের জন্য হাস্যকর!
সাদেককের সাথে আমার পরিচয় এই শতোকের গোড়ার দিকে। ১৬ বছর আগের কথা। "উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমুহের ভূমিকা" এই এজেন্ডা নিয়ে আমি একটি সেমিনার আয়োজন করেছিলাম। সেখানে সরকারের শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের আমন্ত্রন দিয়েছিলাম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকগন এসেছিলেন সেই সেমিনার। আমি তখন এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক এই সাদেক সাহেবকে দাওয়াত দেই সেই সেমিনারে। তখন এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছিলো প্রায় সকল জেলায়। ছড়িয়ে থাকা তাদের ক্যাম্পাসগুলো কিছুদিন আগে সরকারের চাপের মুখে গুটিয়ে ফেলছে। কিন্তু সারা দেশে তাদের সেই চেইন নেপথ্যে এখনও সক্রিয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির সনদ বিক্রি বন্ধ হয়নি।
উত্তরায় রিজেন্ট হাসপাতালের পাশেই গত ২৫ বছর ধরে জাল সনদ বিক্রি করে অধরা রয়ে গেলো স বর্ণের সাদেক। এই সাদেকের রয়েছে জঙ্গি চক্রের আন্তর্জাতিক চেইন। শিবির ক্যাডার সাদেক ১৯৯৬ সালর সুকৌশলে সরকারের শিক্ষা বিভাগের দুর্নীতিবাজদের সাথে হাত মিলিয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ নামের একটি দোকোন খুলে শুরু করে সনদ বিক্রি। শিক্ষা বিভাগের বর্তমানের কোন কোন কর্মকর্তা এই চক্রের সাথে এখনও যুক্ত থাকায় এই স বর্ণের সাদেক রয়েগেলো ধরা ছোয়ার বাইরে। সাদেক জাল সনদ বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ পরিবার ধ্বংস করে নিজে অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে বহু টাকা পাচার করছে বিদেশেও। আমি দ্বায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি সেই টাকার ভাগিদার সরকারের শিক্ষা বিভাগের দুর্নীতিবাজ লোকেরাও।
ইমেরিটাস অধ্যাপক কি ও কারা
শিক্ষা কার্যক্রমে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য খ্যাতিমান অধ্যাপকদের চাকরির নির্দিষ্ট বয়সসীমা শেষে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। যাঁদের ইমেরিটাস অধ্যাপকের মর্যাদা দেয়া হয় তাঁরা একজন অধ্যাপকের পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকেন। দেশের পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খ্যাতিমান অধ্যাপকদের এ মর্যাদা দেয়ার রীতি আছে। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও এ রীতি চালু করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর। এর পরই খ্যাতিমান অধ্যাপকরা ইমেরিটাস অধ্যাপকের মর্যাদা পান। ১৯৯৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাতজন ইমেরিটাস অধ্যাপকের মর্যাদা পেয়েছেন। তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল জব্বার, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সুলতানা সারওয়াত আরা জামান, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক নাজমা চৌধুরী, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আবদুল মতিন এবং ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী।
সাদেক ভুয়া ইমেরিটাস অধ্যাপক!
সরকারের শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের নিকট আমার প্রশ্ন রইলো সাদেকে কে দিলো এই উপাধি? দেশের সিনিয়র ও খ্যাতিমান প্রফেসর অর্থাৎ ইমেরিটাস অধ্যাপকের মর্যাদা যাদেরকে দেয়া হয়েছে তাদের উপহাস করতেই সাদেক এই উপাধি নিজেরটা নিজেই ব্যাবহার করছে। এ ক্ষেত্রে দেশের সরকার প্রধানের কিছু নির্দেশনা আমি শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় তার বক্তব্যে বলছেন অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখতে হবে। অপরাধী কোন দলের সেটা বিবেচনায় না নিয়ে তাকে অপরাধী হিসেবে দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৬ নভেম্বর ২০২০ তারিখ বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর এক বক্তব্য আমি মনোযোগ দিয়ে শুনছি। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১১৬, ১১৭ এবং ১১৮তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি আবারও এই নির্দেশনা দেন।
আমার জানার বিষয় হচ্ছে এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক সাদেকের অপধার এ ক্ষেত্রে বিবেচনা হবে কি না? সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাদেকের ব্যাপারে চুপ কেন? সরকারের শিক্ষা বিভাগের সৎ কর্মকর্তা কেউ যদি থাকতেন তাহলে সাদেক উচ্চশিক্ষার সনদ এই সরকারের আমলে বিক্রি করতে পারতো না।
ওই দিনের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কতগুলো সমস্যা দেখা দেয় যেমন হঠাৎ এই যে ধর্ষণ, তারপর নারী নির্যাতন, কিশোর গ্যাং সৃষ্টি হলে। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সেখানে কারও মুখ চেয়ে না। যারাই অপরাধী, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখবেন, এটাই আমরা কথা।
“সে যে দলের হোক, যে কেউ হোক, অপরাধী অপরাধীই। কাজেই অপরাধী হিসেবে দেখে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সমাজটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে এবং সেটাই আপনারা করবেন।” সাদেক জামাত বিএনপির আমলে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বিক্রি করে শতো শতো কোটি টাকা আয় করছে। সেই টাকা বিএনপি সরকারের লোকজন ভাগভাটোয়ারা করে খেয়েছে। সেই জামাত ও জঙ্গি নেতা সাদেকের বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বিক্রির টাকা বর্তমান সরকারের কোন লোকজনেরা ভাগভাটোয়ারা করে খায়!
সরকারি কর্মচারীদের জীবনমান উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “দেশটাকে উন্নত করতে হলে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মতো উপযুক্ত কর্মচারী আমরা গড়ে তুলতে চাই, যেন মানুষ তার সেবাটা পায়। সেটাই আপনারা দেবেন। এটাই আপনাদের কাজ।” আমার সন্ধেহ হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা অর্থাৎ শিক্ষাবিভাগের কর্মকর্তারা সেই জামাত বিএনপির ভক্তই রয়ে গেলো নাকি! সততা একটি মহাৎ গুন, অনেকের জন্যে ঘুষ দুর্নীতির ক্ষেত্রে এই গুনটি পীড়া দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলছেন ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতার দেওয়া ভাষণের একটি অংশ উদ্ধৃত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “তিনি বলেছিলেন- ‘আপনি চাকরি করেন আপনার মাইনে দেয় গরীব কৃষক, আপনার মাইনে দেয় ওই গরীব শ্রমিক, আপনার সংসার চলে ওই টাকায়, আমি গাড়ি চড়ি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন। ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক’।” “অর্থাৎ কোন মানুষকে অবহেলার চোখে দেখবেন না বা তাদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন না। মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান দিতে হবে।”
নিজের শৈশবের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকে এটা শিখেছি। আমাদের বাড়ির ড্রাইভারকেও ড্রাইভার সাহেব বলতে হত, আপনি বলতে হত। আমাদের বাড়ির কাজের লোক কখনও চাকর-বাকর বলে বা হুকুম দিতে পারতাম না। এটা নিষিদ্ধ ছিল। আমার বাবা-মা আমাদেরকে দিতে দেননি, আমরা দেইনি। আমরা তাদেরকে বলতে গেলে কিছু চাইলে বলতে হবে এটা কি একটু দিতে পারবে? এখনও তাই করি। সেটাই আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে, আমরা সেটাই করি।” সবাই যেন ন্যায়বিচার পায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার পাশপাশি জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দিয়ে তাদের জীবনমান উন্নত করতে কাজ করারও নির্দেশ দেন সরকার প্রধান।
আইন ও প্রশাসন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলছেন “আমাদের এটাই থাকবে আপনাদের কাছে আকাঙ্ক্ষা, আপনাদের যে মেধা, আপনাদের জ্ঞান, আপনাদের বুদ্ধি, মনন সেগুলো আপনারা কাজে লাগাবেন দেশ ও জাতির সেবায়। এদেশের মানুষ যেন নিরাপদ থাকতে পারে, উন্নত জীবন পেতে পারে আর বিশ্ব দরবারে আমরা যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারি সম্মানের সাথে।” জাতির পিতার জীবন সম্পর্কে কর্মকর্তাদের জানতে পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “কারণ এই দেশটাকে জানতে হলে আর দেশের উন্নয়নটা করতে হলে তার চিন্তা ভাবনাটাও জানা একান্তভাবে প্রয়োজন।”
একটি রাষ্ট্রের সকল সম্পদের মালিক সেদেশের সকল নাগরিক। মানবসম্পদ বিনির্মানে উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ করার কথা। এখানে কি কাজ হচ্ছে? সরকারের শিক্ষা বিভাগের লোকজন বেতন নেয়া ছাড়াও রাষ্ট্রের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। তবুও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি বন্ধ করতে নূন্যতম চেষ্টাটুকো করে না। উপরন্তু নিজেদের পকেটে পয়সা নেয়ার জন্য দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা চায় দুর্নীতি জিয়িয়ে রাখতে। ছলে বলে কলে কৌশলে এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় সনদ বিক্রি করেও চলে যাচ্ছে এই সরকারের নাকের ডগা দিয়ে। এই সব কর্মকর্তাদেরকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে বলছেন- আপনাদের যে মেধা, আপনাদের জ্ঞান, আপনাদের বুদ্ধি, মনন সেগুলো আপনারা কাজে লাগাবেন দেশ ও জাতির সেবায়। এদেশের মানুষ যেন নিরাপদ থাকতে পারে, উন্নত জীবন পেতে পারে আর বিশ্ব দরবারে যেন মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারে। আমার মনে হয় এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি বন্ধ না করে এসব কর্মকর্তারা বস্তুত পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিরোধীতা করেই চলছে।
ঠাকুর ঘরে কে, আমি তো কলা খাইনি
"ছাত্রদল ও শিবিরের নিষ্ক্রিয় রাজনীতি আছে ইউনিভার্সিটিতে। যুদ্ধাপরাধীদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনে বিদ্যমান বলে অভিযোগ রয়েছে এবং ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ও উপাচার্যের বৈধতা নেই।" এই কথায় কি মনে হয়? এই কথাই বলা আছে এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েভসাইটে। উইকিকিপিডিয়া সুত্র হুবহু তুলে ধরছি- এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ বাংলাদেশের একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি ৪ তারিখে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সালের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অধীনে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আশুলিয়া থানার টংগাবাড়ি এলাকায় বঙ্গবন্ধু সড়কে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস অবস্থিত। এখানে সক্রিয় ছাত্রলীগের কমিটি বিদ্যমান। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সৈয়দ নূরুল হাসনাত শুভ। তাছাড়া "ছাত্রদল ও শিবিরের নিষ্ক্রিয় রাজনীতি আছে ইউনিভার্সিটিতে। যুদ্ধাপরাধীদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনে বিদ্যমান বলে অভিযোগ রয়েছে এবং ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ও উপাচার্যের বৈধতা নেই।" তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে। এটি বাংলাদেশের একটি প্রাচীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯৯৬ সালের ৪ জানুয়ারী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালযের জন্য অনুমতির/সনদ প্রাপ্তির আবেদন পত্রে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি প্রকল্পের চেয়ারম্যান হিসেবে আলহাজ্জ মোঃ আজিজ উল্লাহর নাম উল্লেখ রয়েছে। তবে সাদেক সাহেব নিজেকে প্রতিষ্ঠিতা পরিচয় দেন। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রায় ১৭,০০০ ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু জঙ্গি শিক্ষক শিক্ষার্থী
দেশি বিদেশি অনেক জঙ্গি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এবং পড়ায়। এমন সন্ধেহ সকলেরই আছে। আমারও আছে। একজনের পরিচয় এখানে উল্লেখ করছি- মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, ঢাকার শায়খুল হাদিস (হাদীস বিভাগীয় প্রধান), মাহাদুত তারবিয়্যাতুল ইসলামিয়া ও বাবরি মসজিদ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং মাসিক রহমানী পয়গামের সম্পাদক
তিনি পাঁচ বছর সিরাজগঞ্জ জামিয়া নিজামিয়া বেথুয়া মাদ্রাসা এবং দুই বছর মিরপুর জামিউল উলুমে শিক্ষকতা করেন। তারপর ২০০০ সাল থেকে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, ঢাকায় শায়খুল হাদিস (হাদীস বিভাগীয় প্রধান) হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। ২০১৫ সালে তিনি মাহাদুত তারবিয়াতুল ইসলামিয়া নামে একটি উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের খণ্ডকালীন অধ্যাপক ছিলেন। এছাড়াও তিনি বায়তুল মামুর জামে মসজিদের খতিব। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে তিনি ঢাকায় বাবরি মসজিদ বাংলাদেশের নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত হেফাজত আন্দোলনের নেতৃত্বের জন্য ১২ মে বাংলাদেশ সরকার তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। ২০১৮ সালের বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের দু'দিন আগে তিনি পুনঃরায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন।
২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে “আপত্তিকর বক্তা” হিসেবে চিহ্নিত করে। শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুধিতা করায় তাকে মুুুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কর্তৃক ৭২ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
শেখ মুজিবের ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছে এই মামুনুল হক। শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ধোলাইখালে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি স্থাপন বঙ্গবন্ধুর আত্মার সঙ্গে গাদ্দারি করার শামিল। যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করে তারা বঙ্গবন্ধুর সু-সন্তান হতে পারে না। এর মাধ্যমে মসজিদের শহরকে মূর্তির শহরে পরিণত করার অপচেষ্টা চলছে। এ মূর্তি স্থাপন বন্ধ করুন। যদি আমাদের আবেদন মানা না হয়, আবারও তওহিদী জনতা নিয়ে শাপলা চত্ত্বর কায়েম হবে।’
মামুনুল হকের ভেরিফাইড ফেসবুকের ষ্টাটাস
আমি ডঃ নই, ডক্টরেট করিনি!
সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো কোনে বন্ধু আমাকে ডক্টর অভিধায় অভিহিত করছেন ৷ গত ১০ই ডিসেম্বর'১৭ আমাদের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ৷ এই সমাবর্তনে আমি এমএসএস (অর্থনীতি) অর্থাৎ মাস্টার্সের সনদ লাভ করি ৷ কে বা কারা আমার সমাবর্তনে যোগদানের প্রাতিষ্ঠানিক রীতির আলোকে গাউন পরিহিত ছবি প্রচার করেন ৷ আর অনেকে এই ছবিকে ডক্টরেট খেতাবের প্রমাণ মনে করে আরো একধাপ এগিয়ে গেছেন ৷ এখন তারা আমার নামের শুরুতে ডঃ জুড়ে দিচ্ছেন ৷ এটা নিতান্তই তাদের ভুল ধারণা ৷ কিছু বিশেষ কারণে আমি এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করি ৷ আমি সেখানকার পার্টটাইম লেকচারার বা খণ্ডকালীন প্রভাষক ৷ অনেকে প্রফেসর বা অধ্যাপক হিসাবে আমাকে প্রচার করেন ৷ এটাও মস্তবড় একটা ভুল ৷ আমাদের কওমী শিক্ষাব্যবস্থার ক্বারী সাহেব, হাফেজ সাহেব, মুদাররিস,মুহাদ্দিস, শায়খুল হাদীস পরিভাষাগুলোতে যেমন তফাৎ আছে সাধারণ শিক্ষাব্যাস্থায়ও রয়েছে ৷ বিষয়গুলো তালগোল পাকিয়ে ফেললে অনেক সময় বিব্রতকর পরিবেশ তৈরি হয় ৷ আমরা সাধারণ মানুষের সামনে হাস্যকর বা খেলো হয়ে যাই ৷ সকলের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান রইল !
আমার জানতে ইচ্ছে হয় জঙ্গিদের এই অভয়ারণ্য এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সরকার নিরব কেন? সরকারের বিভিন্ন শ্রেনি পেশার লোকদের সাথে আতাত করে সাদেক রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। করোনাকালিন সময়ে দেখাযায় সরকারের আনূকল্য পাওয়া লোক বা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামেমাত্র ভিসিদের সাথে ওয়েভিনারে মিলিত হয় এই সাদেক।
জামাত শিবির জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা!
দেশে বিদেশে সনদ বিক্রি!
শিক্ষা বিভাগ নিরব কেন?
কারা এখানে ভর্তি হয়?
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যাৎ কি?