করোনামুক্ত দেশ গঠনে সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই

প্রকাশিত: 29/07/2021

॥ এরশাদুল হক দুলাল ॥

করোনামুক্ত দেশ গঠনে সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই

মহামারী করোনা বিশ্বকে থমকে দিয়েছে। বাড়িয়ে দিয়েছে বেকারত্ব। ব্যাপক ক্ষতি করেছে অর্থনীতি। ফলে মানুষ জীবন ও জীবিকার সংকটে পড়েছে। মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষের বুকফাটা চাপা কান্না কেউ যেন শুনছে না। কর্মহীন মানুষ হন্য হয়ে খুজছে কর্ম। তাদের চোখে মুখে গ্লানির ছায়া। দিন দিন ভারি হচ্ছে ঋণের পাল্লা। ঘর ভাড়া, অফিস ভাড়াসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে গৃহকর্তা তার স্ত্রী, সন্তানাদীর কথা চিন্তা করে লাগামহীনভাবে ছুটছে উপার্যনের অন্বেষনে। একদিকে জীবন-অন্যদিকে জীবিকা। উভয় সংকটে পড়েছে মানুষ। সর্বপরি লকডাউন যেন আয় শূণ্য খেটে খাওয়া মানুষের গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। 
করোনায় মৃত্যুর হাড় উর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন সংক্রামনের হার ও মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। ফলে সরকার কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করে লকডাউন জোরদার করছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নিমিত্তে প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রতিনিয়ত জেল জরিমানা করা হচ্ছে। তার পরেও অযথা-অকারণে সর্বত্র মানুষ আড্ডা দিয়েই যাচ্ছে।  এর মূল কারণ হলো সচেতনতার অভাব। 
শুধু আইন ও প্রশাসন দিয়ে করোনামুক্ত করণে অগ্রগতি সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন সঠিক একটি রোডম্যাপ তৈরী করা। সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে কারিগরী পরামর্শ কমিটি করেছে।  যারা সরকারকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। সরকার সব সময় রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের মানুষের কল্যাণ কামনা করে কাজ করে যাচ্ছে। সুনাম অর্জনেই প্রতি সরকারের লক্ষ্য উদ্দেশ্য। করোনামুক্ত দেশ গঠণে সরকার সর্বত্র চেষ্টা করছে। পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি শিক্ষিত সচেতন নাগরিকের এ বিষয়ে যথেষ্ট দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। 
আমি মনে করি ১৯৭১ সালে দেশকে স্বাধীন করার জন্য যেমন আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাপিয়ে পড়েছি তেমনই করোনামুক্ত দেশ গঠনে আমাদের সকলকে একযোগে আন্তরিকতার সহিত এগিয়ে আসতে হবে। বিত্তশালীদের অসহায়দের পাশে দাড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে এবং সরকারের যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার যথাসাধ্য বন্টন করতে হবে। তবেই নি¤œ আয়ের ও মধ্যবিত্ত মানুষের দুর্দশা কিছুটা লাগব হবে। 
প্রতিটি মহল্লা এবং ওয়ার্ডে করোনা প্রতিরোধে একটি কমিটি গঠন করা উচিত। যেখানে শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, জনপ্রতিনিধি, ডাক্তার, সাংবাদিক, বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থাকবেন। উক্ত কমিটি জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে কাজ করবে এবং প্রশাসনকে সহায়তাসহ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সরকারকে অবহিত করবে।

তাছাড়া অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য স্বল্প মেয়াদী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আয় বর্ধ প্রকল্প হাতে নিতে হবে। এ প্রকল্পে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে জনগণকে সহায়তা করতে হবে যাতে বেকারত্বের হার কমে আসে এবং উপার্জন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কৃষক এবং কৃষির দিকে বেশি নজর দিতে হবে। যাতে খাদ্য উৎপাদনে সংকট সৃষ্টি না হয়। 
উত্তোরণের উপায় হিসেবে সরকারি নির্দেশনা অর্থাৎ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সকল বেসরকরি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করতে হবে। নতুন উদ্যোম, নতুন আশায় নিজেদেরকে জাগিয়ে তুলতে হবে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা মোকাবেলায় ও রোগীদের সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সকল শ্রেণীর জনগণ করোনার টিকা পাওয়ার আশা করছে। 
মহামারীর ইতিহাস মানব সভ্যতার মতোই প্রাচীন। কোরআন ও হাদীসের আলোকে দুনিয়াবী এসব মহামারী বা বিপর্যয় ও বিভিন্ন বিপদ-আপদ সম্পর্কে মহান রাব্বুল আল-আমিন আল্লাহ তা-আলা বলেন, ‘জল ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে কর্মের শাস্তি আর আস্বাদন করতে চান, যাতে তারা পাপ কাজ থেকে ফিরে আসে (সূরা রূম, পাড়া-৩০ আয়াত-৪১)।
অতএব, আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে ইবাদত বন্দিগীর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। কারণ রোগ যিনিই দিয়েছেন তার প্রতিকারও তিনিই করবেন। সর্বপরি দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকলকে একযোগে করোনা মোকাবেলা করতে হবে। অর্থাৎ এ ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই।

লেখক 
সাংবাদিক ও কলামিস্ট

॥ এরশাদুল হক দুলাল ॥
 

আরও পড়ুন

×