ফিরে আসা

প্রকাশিত: 29/11/2019

মিজানুর রহমান মিজান

ফিরে আসা

ফিরে আসা
মিজানুর রহমান মিজান 

”আমি টাকা চাই না , মাননীয় আদালত , আমি ফিরে পেতে চাই আমার সংসার , আমার সন্তান। নতুবা আমি আত্মহত্যা করবো” বলেই রুনু মুর্চা যায়। রুনুর ভাই ও পিতা দ্বিধা-দ্বন্ধে পতিত হয়ে ইতস্ততার সহিত নিয়ে চলে নির্জন স্থানে। মাথায় পানি ঢেলে যতœ আত্মির ঘণ্টা খানেক পর জ্ঞান ফিরে আসে। চক্ষু খুলেই প্রলাপ স্বরুপ বলে চলে , ” আমার সন্তান , আমার সংসার”। 
      উপস্থিত সবাই হতবাক , হতভম্ভ। কারন একে একে তিন দিন দীর্ঘ আলাপ আলোচনার , যুক্তি , পাল্টা-যুক্তির মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল বিচেছদের, লেনদেনের পরিমাণ নির্ধারণের মাধ্যমে।
       এগার বৎসর পূর্বে রুনু নুর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় উভয় পক্ষের অভিভাবকের দেখাদেখি , রেওয়াজ ও নিয়ম মাফিক আনুষ্টানিকতার মাধ্যমে। গ্রাম প্রধান বাংলাদেশের এক প্রান্তের সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা নিভৃত একটি পরিবার উদয় পুরের বাসিন্দা। পুরুষ তান্ত্রিক পরিবার প্রথা প্রচলিত হলে ও জাহানারা বেগমের নির্দেশ , মর্জি , ইচছা মাফিক পরিচালিত পাঁচ সন্তানের মধ্য বিত্ত পরিবার। জাহানারা জ্ঞান , বিবেক , বুদ্ধিতে সেরা এ উন্নাসিকতায় আকৃষ্টতার এবং সকল কর্তৃত্ব তিনির আয়ত্বাধীন এ ধ্যান-ধারণা পোষণ করেন নিয়মিত হৃদয় তন্ত্রীতে। খালেক সাহেব স্ত্রী জাহানারার কথার এক চুল পরিমাণ অবাধ্য নন বা সরে দাড়ানোর ক্ষমতাহীন। ক্ষেত্র বিশেষে খালেক সাহেব কোন সিদ্ধান্ত নিলে ও জাহানারার কৃতিত্ব বা ক্ষমতা খর্ব হচেছ ভেবে তার বিপরীত বা খালেক সাহেব আংশিক হলে ও পরিবর্তনে আসতে বাধ্য। নতুবা আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ঝড়ের তান্ডব শুরু হবে বিলম্বতা মোটেই নেই। যখন তখন। প্রত্যেকটি শিশুর প্রথম শিক্ষক মাতা-পিতা। পরিবেশ পরিস্থিতি অনেকটা আচার আচরণ অনুকরণীয় , অনুসরণীয়। সুতরাং রুনু মোটামোটি ঐ পথের পথিক। 
      নুর বিবাহোত্তর প্রথম শশুর বাড়ি গেলে অত্যন্ত আনন্দে উদ্বেলিত মনে শাশুড়ির প্রথম বাক্য ছিল , ”দামান্দ আপনার গৃহ টিনের চালাযুক্ত”। যদি ও শাশুড়ি জাহানারার গৃহ ভগ্ন কুঠিরসম। নুর অত্যন্ত ধৈর্যশীলতার মাধ্যমে তাঁর বাস্তবতা চোখে আঙ্গুলি দিয়ে দেখিয়ে ছিল। তখনই ক্ষমা প্রার্থনায় এ ঘটনার পরি সমাপ্তি ঘটে। এ জাতীয় উদ্ভট আচরণ অনেক হলে ও মেনে নিয়েছিল বিবাহ বা দাম্পত্য জীবন অটুট রাখতে হলে সহনশীলতার বড় প্রয়োজন। নতুবা এক নিমেষেই সব শেষ। পল্লী গ্রামের বালিকা বধু বা নব বধুরা বিভিন্ন জাতীয় হাতের কারুকাজ সম্বলিত দ্রব্য সামগ্রী তৈরি করেন। রুনু একটি কাপড়ের স্বহস্থে  তৈরি পাখা প্রবাদ বাক্য লিখা অসংখ্য ভুল বানানে ভরপুর স্বামী গৃহে নিয়ে আসেন। নুর বানান গুলো ভুল দর্শনে সংশোধন করার অনুরোধ জানালে রুনুর পরিষ্কার জবাব ছিল , ”আপনার নিকট ভুল হয়ে যায়”। রাগ না করে নুর অভিধান এনে বাস্তবতায় স্ত্রীকে দেখানোর পর ও পাখাটি সংশোধিত হয় নাই অদ্যাবধি। এ পর্যন্ত প্রমাণ স্বরুপ নুর রেখেছে স্বযতেœ। তথাপি নুর ভাগ্যকে বরণ করে বুঝিয়ে , শিখিয়ে চলার চেষ্টায় আতœ-নিমগ্ন। কিন্তু এক দিন রুনু দু’টি সন্তান নিয়ে পলায়ন করে পিত্রালয়ে। পিতামাতার এক মাত্র পুত্র সন্তান নুর অনেক প্রচেষ্টা করে ও যখন না আসার সিদ্ধান্তে অটল রুনু ব্যক্ত করে। তখন মুরবিবয়ান বিচেছদের চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হন। 
      বাস্তবতায় লেনদেন পরিশোধের প্রাক্কালে কোন অবস্তাতেই টাকা নিতে অক্ষমতাসহ ভুল বুঝার সক্ষমতা অর্জন করেছে কান্নাকাঠিতে সাবরেজিষ্টারসহ উপস্থিত সবাই এক প্রকার জোর করে নুরকে রাজি করে গৃহে ফেরত পাঠান। স্বামী গৃহে ফিরে এসে তিনটি সন্তান ফুটফুটে জন্ম দানের মাধ্যমে অত্যন্ত মধুর দাম্পত্য জীবন চলছে পথ পরিক্রমায়। স্বামী কিছুই না , এ তাচিছল্য ভাব বা আমিত্বের অন্ধকার অমানিশার যবনিকাপাত এবং স্বামীর যুক্তি পূর্ণ সিদ্ধান্ত সম্মিলিত গ্রহণে অত্যন্ত মর্যাদার সাথে সুস্থ্য , সুন্দর জীবন বাহিত সর্বক্ষেত্রে আন্তরিক ও ঐকান্তিক হৃদ্যতায়। মানুষের মন , পরিবর্তন হতে কতক্ষণ। পিতৃ গৃহে যাবার আগ্রহ পূর্বের তুলনায় শুন্যের কোঠায় বলা যায় ফিরে আসার প্রেক্ষিতে। 


 

আরও পড়ুন

×